top of page
Writer's pictureJust Another Bangladeshi

উল্কাবৃষ্টি ও গ্রহাণু

১৫৩১, ১৬০৭ ও ১৬৮২ সালে দৃশ্যমান তিনটি আলাদা আলাদা ধুমকেতু সম্পর্কে গবেষণা করছিলেন এক ইংরেজ জ্যোতির্বিজ্ঞানী, এডমান্ড হ্যালি। তিনি তাঁর গবেষণা শেষে, এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, এ ধুমকেতুত্রয় আসলে পৃথক নয়, এরা একই ধুমকেতু যা নির্দিষ্ট সময় পরপর পৃথিবী অতিক্রম করে এবং এটি ১৭৫৮ সালে আবার দেখা যাবে বলে ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন। হ্যাঁ, তিনি সঠিক ছিলেন। ধুমকেতুটি দিব্যি ওই সময়ে দেখা গিয়েছিলো এবং আমরা আজও হ্যালির ধুমকেতুটি প্রতি ৭৫ বছর ব্যবধানে দেখতে পাই।



ধুমকেতু সম্পর্কে আমাদের আবেশ নিতান্তই কম নয়। সম্প্রতি 'চুরিয়ুমভ-গেরাশিমেঙ্কো' নামক ধুমকেতুতে আমরা ল্যান্ডারসহ প্রোব পাঠিয়েছি এবং মিশনটি থেকে আমরা অনেক তথ্য পেয়েছি, যা পৃথিবীতে জীবনের সৃষ্টির কারণসহ আরও অনেক অজানা রহস্যের দ্বার উন্মোচন করবে। বিভিন্ন দূরবীক্ষণ প্রযুক্তির দরুন আমরা মহাকাশে বিদ্যমান এই আশ্চর্যগুলোকে নিত্য পর্যবেক্ষণ করে থাকি। শুধু ধুমকেতুই নয়, গ্রহাণু-উল্কা সম্পর্কেও আমরা গবেষণা করি।

ধুমকেতু, গ্রহাণু কিংবা উল্কা এমন নামগত পার্থক্য থাকলেও এগুলোর সবগুলোই মূলত পাথুরে খন্ড। আসুন এবার আমরা এগুলোর গাঠনিক পার্থক্য জেনে নিই।

★ধুমকেতু/কমেটঃ বরফের পুরু আস্তরণে বন্দী ধুমকেতু মূলত ধুলিকণা ও ধাতুমিশ্রিত একটি পাথুরে পিন্ড। যখন ধুমকেতু সূর্যের মতো কোনো উত্তপ্ত জ্যোতিষ্কের কাছে পৌঁছায়, তখন এদের বরফের আস্তরণটা ঊর্ধ্বপাতিত হয়ে যায় অর্থাৎ কঠিন বরফ থেকে সরাসরি গ্যাসীয় অবস্থা, যা ধুমকেতুর চারপাশে উজ্জ্বল আলোর দীপ্তি ছড়ায়,যাকে কোমা বলে। এই দীপ্ত কোমা বেগবান সৌরবায়ু প্রবাহের কারণে ধুমকেতুর পেছনে সরে যায় এবং পৃথিবী থেকে দেখতে ধুমকেতুটিকে ঝাড়ু আকৃতির বা ধুমকেতুর লেজের মতো লাগে। সূর্যের চারপাশে একবার আবর্তন করতে কোনো ধুমকেতুর ২০০ বছরের বেশি সময় লাগলে তাকে "দীর্ঘ পর্যায়ের ধুমকেতু" আর পর্যায়কাল ২০০ বছরের কম হলে, তাকে "সংক্ষিপ্ত পর্যায়ের ধুমকেতু" বলে। ধুমকেতুর কক্ষপথ অতিরিক্ত ডিম্বাকৃতির হয়ে থাকে। এর মানে, এমনও ধুমকেতু আছে, যার কক্ষপথের ব্যাপ্তি সৌরজগতের বাইরে পর্যন্ত বিস্তৃত।

★গ্রহাণু/এস্টোরয়েডঃ ধুমকেতু ও গ্রহাণুর মধ্যকার পার্থক্যটি হলো, ধুমকেতুর উজ্জ্বল বরফের আস্তরণ থাকলেও গ্রহাণুর সেটি থাকে না। এটি শুধুই ধূলিকণা, পাথর ও ধাতুর সংমিশ্রণ। সৌরজগতের বেশিরভাগ গ্রহাণুই বৃহস্পতি ও মঙ্গলগ্রহের মাঝে থাকা "গ্রহাণু বেষ্টনী" তে বিদ্যমান। তবে মাঝে মধ্যে মহাকর্ষীয় ঝামেলায় কোনো কোনো গ্রহাণু আমাদের পৃথিবীর পানে ছুটে আসে এবং কদাচিৎই পৃথিবীতে আঘাত হানে। এমনই একটি শহর আকারের গ্রহাণু আজ থেকে প্রায় ৬৫ মিলিয়ন বছর আগে মেক্সিকো সিটির কাছে আঘাত হানে এবং ডাইনোসর সমিতির বিলুপ্তি ঘটায়। তাই গ্রহাণু বিপদজনক হওয়ার কারণে মানবজাতির কল্যাণহেতু বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন দূরবীক্ষণ প্রযুক্তির প্রাচুর্যতায় আকাশজুড়ে প্রত্যহ নজরদারি পরিচালনা করেন।

★উল্কা/মিটিওরয়েডঃ উল্কা মূলত মহাকাশ জুড়ে ঘুরে বেড়ানো ছোটো আকৃতির পাথুরে জ্যোতিষ্কের ধ্বংসাবশেষ। এটি ধূলিকণার চেয়ে বড়ো কিন্তু গ্রহাণুর তুলনায় ছোটো। যাইহোক অধিকাংশ উল্কাই নুড়ি পাথরের মতো। বেশিরভাগ উল্কা "গ্রহাণু বেষ্টনী" থেকে আসে। তবে কিছু কিছু উল্কা চাঁদ কিংবা আমাদের প্রতিবেশী গ্রহ থেকেও আসে। এই উল্কা যখন আমাদের বায়ুমন্ডলে প্রতি সেকেন্ডে ২০কিলোমিটারও বেশি গতিতে প্রবেশ করে, তখন বায়ুগতিবিদ্যার তাপীয় কারণে বেশিরভাগই পুড়ে ছাই হয়ে যায় এবং উজ্জ্বল আলোর ঝলকানি ছড়ায়। ফলে ভূপৃষ্ঠ থেকে তা দেখতে মনে হয়, নক্ষত্রের পতন হচ্ছে। যার সাথে আমরা 'শুটিং স্টার' নামেই বেশি পরিচিত। একসাথে অনেক উল্কা আমাদের বায়ুমন্ডলে প্রবেশ করে "মিটিওর শাওয়ার/উল্কা বৃষ্টি" ঘটিয়ে থাকে। উল্কার বৃষ্টির কারণ হিসেবে, মহাকাশে যখন কোনো ধুমকেতুর বিস্ফোরণ হয় তখন তার ধ্বংসাবশেষ পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ প্রভাবে পৃথিবীর পৃষ্ঠে আসতে থাকে।ফলে পৃথিবী থেকে তা উল্কা বৃষ্টি আকারে দৃশ্যমান হয়। প্রতিদিন পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে ১০ লক্ষেরও অধিক নুড়িপাথর বা শস্যদানা আকৃতির উল্কাপাত ঘটে। এর মধ্যে যে উল্কাগুলো পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে প্রবেশের পরেও টিকে থেকে ভূপৃষ্ঠে সফল আঘাত হানে, তাদের মিটিওরাইট বা পতিত উল্কা বলে।

সমাপ্তিকথায়, প্রতি মূহুর্তে মহাকাশ থেকে অতিবেগে ছুটে আসা বিপদজনক এসব নুড়ি পাথরের আঘাত থেকে আমাদের রক্ষা করার জন্যে প্রকৃতি মাতাকে ধন্যবাদ জানাই। যদিও প্যালাস কিংবা ভেস্টার মতো বিশাল আকৃতির গ্রহাণুর এক আঘাতে ডাইনোসরের মতোই হোমো সেপিয়েন্সেরও বিলুপ্তি কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা হবে না। কিন্তু আশার কথা হলো, চিন্তা করার মতো আমাদের একটা মস্তিষ্ক আছে!

0 comments

Recent Posts

See All

Comments


Enjoy
Free
E-Books
on
Just Another Bangladeshi
By
Famous Writers, Scientists, and Philosophers 
click here.gif
lgbt-bangladesh.png
click here.gif

Click Here to Get  E-Books

bottom of page