এক কবি আর এক লেখক
- Just Another Bangladeshi
- Nov 10, 2019
- 4 min read
কর্মশালা শেষে আমাদের পনের জনকে পনেরটা বিষয় নিয়ে লিখতে দেয়া হল। আমি আমার বিষয় দেখে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লাম। আমাকে বিষয় দেয়া হয়েছে, “চুমু।” হেলাল স্যার বলে দিয়েছেন, “যাকে যে বিষয় দেয়া হয়েছে সে বিষয়েই লিখে আনবে। তবে মনে রাখবে সবচেয়ে ভাল হয়, যদি সেই ব্যাপারটা নিয়ে একটা বাস্তব অভিজ্ঞতা করা যায়। আর দয়া করে সবাই নিজের বিষয় সেশনের অন্যদের থেকে গোপন রাখবে।”

আমি জীবনে একটা প্রেম করলাম না, সেখানে চুমু নিয়ে লেখা। সেশন থেকে বের হতেই দেখা হল আরাফাতের সাথে। এই সেশনে এসেই তার সাথে পরিচয়। খুব ভাল কবিতা লিখে সে। “কি দিছে আপনাকে?’’ আরাফাতকে জিজ্ঞাসা করলাম। “আরে বলিয়েন না, ফালতু একটা সাব্জেক্ট।” এই বলে সে চলে গেল। বুঝলাম বলতে চাইছে না। আমি রুমে গিয়ে আমার রুমমেট জয়নাল ভাইকে ধরলাম। এই সব লাইনে সে ওস্তাদ। “ভাই বাঁচান।” জয়নাল ভাই পেপারে পরিমনির কি একটা নিউজ পড়তে পড়তে চায়ে চুমুক দিচ্ছিল। “কি হইসে আবার?’’ “ভাই আপনি তো জানেন লেখালেখির একটা প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলাম।” “হ। তো কি হইসে?’’ “সেখান থেকে একটা বিষয়ের উপর লিখতে দিছে। লেখা ভাল হইলে তিন মাসের চাকরি সাথে ত্রিশ হাজার টাকা।” “ভালই তো, লিইখ্যা ফালাও।” “ভাই বিষয় কি জানেন? চুমু।” “চুমু মানে ? চুম্মা?’’ “হ্যা ভাই।” শুনে জয়নাল ভাই হো হো করে হেসে ফেলল। “মারা তো খাইসো তাহলে। এজন্যেই বলছিলাম প্রেম ট্রেম করো একটা। এখন আর কি করবা, বাতাসে চুমা খাইয়া গল্প লিখবা আর কি।” “আপনি একটা বুদ্ধি দেন না ভাই। এই জায়গায় আমাকে চান্স পাইতেই হবে ভাই। সেরা তিনজনকে ওরা "কদম" ম্যাগাজিনে কাজ দিবে। এটা পাইলে আমার আর কিছু লাগবে না।” “আমাদের উপরের তলার যে ভাড়াটিয়া, শাহনাজ ম্যাডাম। জামাই বিদেশ থাকে। এতদিনে উনার লগে হালকা ভাবসাব করলেও তো পারতা।” “এগুলা কী বলেন ভাই। উনি তো বিবাহিত।” “বিবাহিত মানুষরে চুমা খাওয়া যাইব না লেখা আছে কোথাও? উনি ওদিন আমারে কী বলে জানো?’’ “কী?’’ “বলে কোন একটা নাকি হিন্দি সিনেমা বাইর হইসে, ওইটা উনারে ম্যানেজ করে দিতে পারবো কিনা।” “তো কি হইছে?’’ “আরে বুদ্ধু উনার কী এই পৃথিবীতে আর কেউ নাই সিনেমা দেওয়ার? আমারে বলতেছে সিনেমা জোগাড় করে দিতে। উনি আসলে চাইতেছে বন্ধুত্ব। হালকা ভাবসাব। তুমি যাও। সিনেমাটা তুমিই নিয়া যাও, চা টা খাও, মাস দুই মাস যাক। এরপর দেখো।” “একটা মুভি খুঁজতেছে একজন। তার মানে কি উনি কোন সম্পর্ক চাইছে?’’ “চাইতে পারে, নাও চাইতে পারে। তুমি তো চাইতেছো। সেভাবেই আগাবা আর কি।” “ছিঃ ভাই। তাই বলে অবৈধ সম্পর্ক?’’ “তুমি মিয়া পুরাই ফাও। যাও চুম্মা না খাইয়া মুড়ি খাওগা।” “কিন্তু আমার তো এত টাইম নাই। মাত্র সাতদিন টাইম। আমি ভাই এই জায়গায় চাকরি পাইলে ত্রিশ হাজার টাকা পাবো। দরকার হলে শাহনাজ ম্যাডামকে আমি দশ হাজার টাকা দিয়ে দিবো। উনাকে বললে চুমু খাইতে দিবে না একটা?” “দিবে, চুমা না জুতার বাড়ি দিতে পারে। তুমি মিয়া কিসের বালের লেখক। চুমা কি এইভাবে হয়। মনে রাখবা বউ হোক, গার্লফ্রেন্ড হোক চুমা দেয়ার আগে একটা মুহূর্ত তৈরি করতে হয়। কাউকে গিয়া যদি বলো দশ হাজার টাকা দিচ্ছি একটা চুমু খাবো, তাইলে লাথি খাইতে পারো এটলিস্ট, চুমা না।”
সেদিনই বিকালে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামার সময় শাহনাজ ম্যাডামকে দেখলাম। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। এই প্রথম নিজ থেকে কথা বললাম, “ভাল আছেন?’’ উনি মনে হয় খুব অবাক হলল। “হ্যা ভাল, তুমি ভাল?’’ “জি ভাল।” “তুমি কয়তলায় থাকো?’’ “ম্যাম আমি তিন তলায়। জয়নাল ভাইয়ের সাথে।” “ও আচ্ছা জয়নালকে বলেছিলাম একটা মুভির ব্যাপারে, একটু মনে করিয়ে দিও তো।” “হ্যা উনি বলেছে আমাকে। দেখি আমি নিয়ে আসবো আপনার বাসায়।” “না, ওকে বলবা আমি কাল গ্রামের বাড়িতে যাবো। দশ-বারো দিন পর আসবো। তখন দিলেই হবে।” “ম্যাম বাড়িতে পরে গেলে হয় না?’’ আমার কণ্ঠে অনুনয় ঝরে পড়লো। “কেন?’’ উনি ভ্রু কুঁচকে তীক্ষ্ণ কণ্ঠে জানতে চাইল। “না এমনিতেই ম্যাম।” এই বলে আমি তাড়াতাড়ি পালালাম।
পরদিন বিকালে টুইশনিতে আমার ছাত্র নিয়নের বড় বোন আসলো ওর পড়ালেখা কেমন হচ্ছে জানতে। বড় বোন ভার্সিটিতে পড়ে। উনি কথা বলার সময় আমি বারবার খালি ভাবতেছিলাম উনাকে চুমু খাওয়া যায় না? এইসব ভাবতে ভাবতে উনার কোন কথায় মাথায় ঢুকতেছিল না। “আপনার মোবাইল নাম্বারটা দেন। তাহলে নিয়নের পড়াশোনার বিষয় নিয়ে আমরা প্রায় কথা বলতে পারবো।” ঠাস করে বলে ফেললাম। উনি খুব অবাক হল, এরপর রেগে গিয়ে বলল, “সরি নাম্বার দেওয়া যাবে না। কথা বলার থাকলে আমি এসেই বলব।” সেদিন রাতে টুইশনি করে ফিরতেই নিয়নের মা আমাকে কল করে বলল, নিয়নকে আর পড়াতে না যেতে। উনাদের কিছু সমস্যা হচ্ছে। পরে কখনো লাগলে জানাবে।
এক একটা দিন যাচ্ছিল আর আমি পাগল হয়ে উঠছিলাম। ফেসবুকে একটা ছবি দেখলাম, টিএসসিতে বৃষ্টির মধ্যে এক জোড়া প্রেমিক প্রেমিকা চুমু খাচ্ছে। দেখে আমার চোখে পানি এসে গেল। আহারে আমি যদি পারতাম। পঞ্চম দিনে আমার অবস্থা দেখে জয়নাল ভাই বলল, “সাগর এক কাজ করো। তুমি আমারেই চুমু খাইয়া ফালাও। রুমমেট বড় ভাইরে চুমু খাওয়া নিয়েই গল্প লিখ্যা ফালাও। আনকমন হইবো।” আমি কিছু না বলে রুম থেকে বের হয়ে ছাদে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলাম। এক লাইন গল্প লেখা হল না আর আছে দুই দিন। এই চক্করে পড়ে আমার টিউশনিটাও গেছে। খুবই খারাপ লাগছিল। এর মধ্যেই দেখি আরফাতের কল। “হ্যা আরফাত বলেন।” “ভাই আপনার লেখার কী অবস্থা?’’ “ভাল না ভাই। আপনার?’’ “আমারো খারাপ অবস্থা। আপনি ফ্রি থাকলে পুরান স্টেশনের এখানে আসেন। এই ব্যাপারে কথা বলি।” আমি গেলাম। পরিত্যক্ত একটা স্টেশন। কেউ আসে না এখানে। মাঝে মাঝে পোলাপাইন এসে গাজা টাজা খায়। গিয়ে দেখি আরফাত সিগারেট টানছে। অন্ধকারে তার সিগারেটের লাল আগুন দেখা যাচ্ছে। “কি অবস্থা?’’ কাছে গিয়ে বললাম। “আর বইলেন না। কি নিয়ে লিখতে দিসিলো আপনারে?’’ “চুমু নিয়ে। কেমন লাগে বলেন তো দেখি। আপনাকে?’’ “এই যে দেখেন।” আরাফাত একটা লেখার প্যাড এগিয়ে দিল। খুলেই দেখি প্রথম পাতায় উপরে লাল কালিতে লেখা বিষয়ঃ খুন!
একটা কবিতা লিখতেছে সে। প্রথম কয়েক লাইন লিখেছে। “কোজাগরি চাঁদ লুকোচুরি খেলছে ঘুণে ধরা এক স্টেশনের কাছে, এক কবি আর এক লেখক। কবিকে আজ একটা খুন করতে হবে.....’’
আমি বুঝে গেলাম কি হতে যাচ্ছে। ততক্ষণে আরাফাতের হাতে বের হয়ে এসেছে বিশাল এক ছুরি। তার কবিতাটা মনে হয় প্রথম হয়েই যাবে।
গল্পটা অনেক ভালো লেগেছে
কবির মর্ম আরেক কবিই বুঝতে পারে, তার নাদ্য আমাদের কপালে নেই তাই কেদে যাই