একজনের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলাম
২৮ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ১০:৩৮
কিছুদিন আগে এক চাচাতো ভাইয়ের সাথে
গিয়েছিলাম তার নানা বাড়ী।
চাচাতো ভাই
য়ের নানা বাড়ী মানে আমারও নানা বাড়ী।
নানার তিন ছেলে। মেঝ ছেলের নাম শরিফুল
আলম।
স্থানীয় একটি মাদ্রাসার শিক্ষক। কবিরাজী চিকিৎসার
সাথেও জড়িত।
মামার বোন মানে চাচীর কাছে ছোটবেলা
থেকেই শুনে আসছি যে মেঝ মামার সাথে নাকি
কোন এক জ্বীনের পরিচয় আছে। কিন্তু
কখনোই বিশ্বাস করতে পারি নাই। কারণ জ্বিন
মানুষের সাথে দেখা সাক্ষাত করে সেটা কল্পনা
করাও কঠিন।
যাই হোক, বিশ্বাস করি বা না করি, কৌতূহল আমার ছিলই।
তাই মামার কাছে অনেকদিন ধরে আবদার করে
আসছি জ্বিনের সঙ্গে সাক্ষাত করিয়ে দেয়ার
জন্যে।
মামা প্রথম প্রথম পাত্তা দিতেন না। কিন্তু এক সময়
আমার আগ্রহ ও কৌতূহল দেখে তিনি রাজী হলেন।
তাছাড়া আমি যে জ্বিন নিয়ে অনেক দিন ধরে
গবেষনা করে আসছি সেটাও তিনি ভালো ভাবেই
জানেন। মূলত সে কারনেই তিনি একসময় নমনীয়
হলেন।
যাই হোক আসল কথায় আসি। গত মার্চ মাসের ২৫
তারিখ, শুক্রবার রাতে আনুমানিক পৌনে এগারটার সময় মামা
বললেন, ‘চল, এক জায়গায় যাই। তোকে একজনের
সাথে পরিচয় করিয়ে দেব’।
মামার সিডি-৮০ মোটর বাইকের পেছনে চড়ে
বসলাম। গ্রামের ভেতর দিয়ে সশব্দে বাইক
এগিয়ে চলল। মিনিট দশেক পরে আমরা গ্রাম
পেরিয়ে মাঠের মাঝে একটা জায়গায় থামলাম। এখানে
একটা বড় গাছের নীচে আমরা দাড়ালাম। কিছুক্ষন
দুজন নিজেদের মধ্যে টুকিটাকি কথা বললাম। তারপর
মামা সামনের দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, ‘ভাইজান
আসতেছে’।
দেখলাম একজন লোক মাঠের ভেতর থেকে
আইলের উপর দিয়ে হেটে রাস্তার দিকে
আসছে। আমাদের থেকে ৪০/৫০ গজ দুরে
হবে। রাতটা বেশি অন্ধকার না আবার আলোকিতও না।
আকাশে হালকা মেঘ আছে। চাদের আলো মাঝে
মাঝেই ঢেকে যাচ্ছে মেঘের আড়ালে। যাই
হোক মানুষটি ক্রমশ আমাদের কাছে এগিয়ে
আসছে। আমি ভেতরে ভেতরে শিহরিত হচ্ছি।
কিছুটা ভয়ও লাগছে। মনে মনে সুরা ফাতেহা পড়া শুরু
করলাম। আমার অবস্থা মামা কিছুটা আঁচ করতে
পারলেন।
বললেন, ‘ভয় নেই। তার সাথে কথা বলে দেখবি
উনি যে জ্বিন সেটা টেরই পাবি না। স্বাভাবিক থাকিস’।
উনি এখন আমাদের থেকে মাত্র দশ বারো হাত
দুরে। উচু লম্বা একজন লোক বলে মনে হলো।
হাত উচু করে সালাম দিলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম
শরিফুল আলম ভাই। আসসালামু আলাইকুম ইয়াজিদ সিকান্দার
ভাই’। বলতে বলতেই উনি আমাদের কাছে চলে
এলেন।
প্রথমে মামার সাথে আলিঙ্গন ও করমর্দন করলেন।
ভয় পাচ্ছিলাম। তবুও মামা যেহেতু আলিঙ্গন করলেন।
তাই বুকের ভেতর কিছুটা সাহস সঞ্চয় করলাম।
লোকটা প্রায় ৭ ফুট লম্বা। অনেকটা নীচু হয়ে
আমাদের হয়ে আমার সাথে আলিঙ্গন করলেন।
করমর্দন করতে করতে জিজ্ঞেস করলেন,
‘ইয়াজিদ ভাই, ভয়ের কিছু নেই। আমিও আপনাদের
মতই মহান আল্লাহর সৃষ্টি’।
তার কথায় আমার ভয় কিছুটা কেটে গেল। তাছাড়া
স্পর্শ করার সময় মনে হলো আমি যেন কোন
মানুষের সাথেই আলিঙ্গন করছি।
কুশল বিনিময় হলো। লোকটার শরীর যতটা বলিষ্ঠ,
কন্ঠ ঠিক তার বিপরীত। কিছুটা ফ্যাসফ্যাসে
মেয়েলী কন্ঠ।
নিজেই থেকেই বললেন, ‘ইয়াজিদ ভাই, অবাক
হচ্ছেন, না? অবাক হওয়ারই কথা। আমি শরিফুল ভাইয়ের
অনুরোধে আজ আপনার সাথে সাক্ষাত করে
এলাম’।
এরপর আমরা রাস্তার পাশে একটা পড়ে থাকা একটা
গাছের লগের উপর যেয়ে বসলাম। জ্বিন ভাইটির
সাথে অনেক কথা হলো। সব কথা মনেও নেই।
ভীষন উত্তেজিত ছিলাম। তবে আমাদের
আলোচনার মূল অংশটুকু আপনাদের জন্যে নীচে
তুলে দিলাম।
আমিঃ ভাই, আপনার সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে
ইচ্ছে করছে। কোনটা রেখে কোন প্রশ্ন
করি। তার চেয়ে আপনি নিজেই নিজের সম্পর্কে
কিছু বলেন।
জ্বিনঃ ইয়াজিদ ভাই, আমার নাম সোলায়মান বিন হুশশাম।
সুলেমান নামেই পরিচিত। আমার বসত ভারতের
কাস্মীর উপত্যকায় অবস্থিত বান্দিপোড়া জেলায়।
আমার গ্রামের নাম সুবানগর। একেবারেই পাহাড় ঘেষা
নিরিবিলি একটা গ্রাম। এখানে আমরা প্রায় দেড় হাজার
জ্বিন-পরী বসবাস করি। এই গ্রামে কোন মানুষ
বসবাস করে না। আমরা জ্বীনরাই গ্রামটির জন্ম
দিয়েছি। প্রায় আড়াই হাজার বছর ধরে আমরা এখানে
বসবাস করছি। আগে আমাদের পূর্ব পুরুষরা বসত
করত। এখন আমরা করি। আশপাশের এলাকার মানুষেরা
আমাদেরকে তাদের মতই মানুষ বলে মনে করে।
আমরা ওই এলাকার ভোটার। আদম শুমারিতেও
আমাদেরকে গননা করা হয়।
গোটা পৃথিবীকে ৭টি এলাকায় বিভক্ত করে
জ্বীনরা বসবাস করে। তবে আপনাদের মতো
আমাদের এলাকাগুলো স্থল কেন্দ্রিক নয়।
আমাদের এলাকাগুলো দ্বীপ কেন্দ্রিক। মোটামুটি
নির্জন ও বিস্তীর্ন এলাকা আমাদের পছন্দ।
পৃথীবিতে অনেক দ্বীপ আছে যেখানে
কোন মানুষ বসবাস করে না। শুধু জ্বীন-পরীরা
বসবাস করে। তবে স্থলেও প্রুচর জ্বিন পরীর
বসবাস আছে। সবচেয়ে বেশি বসবাস রাশিয়া, ইরান,
ভারত ও গ্রানাডায়।
আমিঃ সোলায়মান ভাই, পৃথিবীতে এখন কত জ্বিন
আছে?
সোলায়মান জ্বিনঃ সেটা বলা মুশকিল। এক এলাকার জ্বিন
অন্য এলাকায় যেতে পারে না। তাই অন্য এলাকার খবর
রাখাও কঠিন। তবে মানুষের থেকে জ্বিন পরীর
সংখ্যা অনেক কম হবে। জ্বিনের সংখ্যা সবচেয়ে
কম। পরীরা বেশিদিন বাচে, আর তাদের সংখ্যাও
অনেক বেশি।
আমিঃ সোলায়মান ভাই, আপনার পরিবার সম্পর্কে
বলেন....
সোলায়মান জ্বীনঃ ইয়াজিদ ভাই, আমার বয়স ২৭৮
বছর। আপনি হয়ত জানেন না আমরা জ্বিনেরা
আপনাদের তুলনায় অনেকদিন বেশি বেচে থাকি।
একেকজন জ্বিন সাধারনত গড়ে ৪৫০ বছর জীবিত
থাকে। স্ত্রী জ্বিন অর্থাৎ পরীরা সাধারনত পাঁচশ
বছর বেচে থাকে। আমার তিনজন বিবি আছেন।
পাঁচটি কন্যা ও দুটি পুত্র আছে।
আমিঃ আপনারা কি সব ভাষায় কথা বলতে পারেন?
সোলায়মান জ্বীনঃ না (হেসে) ইয়াজিদ ভাই, আমি
বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি, উর্দূ ও আসামিজ এই পাঁচটি ভাষা জানি।
আমাদের গ্রামে একটি স্কুল আছে। সেখানে আমি
ইংরেজি ও উর্দূ ভাষা শেখায়।
আমিঃ ভাষাগুলো কিভাবে শিখেছেন?
সোলায়মান জ্বীনঃ আমি প্রায় চল্লিশ বছর
চট্টগ্রামে ছিলাম। সেখানে একটা স্কুলে বাংলা
শিখেছি। ইংরেজি ও হিন্দি শিখেছি দিল্লীতে, উর্দূ
শিখেছি আমার এক চাচার কাছে। উনি দীর্ঘ
দীর্ঘদিন লাহোরে চিলেন। ভালো উর্দূ জানেন।
আর আমার দাদী আসামিজ ভাষা ভালো জানতেন। তার
কাছেই ওটা শিখেছি। মানুষ যেভাবে কোন বিদ্যা
রপ্ত করে, আমরা জ্বিনরাও একই পদ্ধতিতে সেই
বিদ্যা রপ্ত করি। আমরাও স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে
ভর্তি হই, লেখাপড়া করি। আমরা যে কোন
স্তন্যপায়ী প্রানীর আকার ধারন করতে পারি। বাচ্চা
ছেলে থেকে শুরু করে বুড়ো পর্যন্ত আকার
ধারন করতে পারি।
আমিঃ আচ্ছা, আমি তো শুনেছি যেখানে আলো
থাকে সেখানে আপনারা থাকেন না......
সোলায়মান জ্বীনঃ না ইয়াজিদ ভাই, এটা ভুল ধারনা।
অবশ্য অনেকেই এরকম মনে করে। আমরা দিন
রাত যে কোন জায়গায় যে কোন সময় উপস্থিত
হতে পারি। কোন অসুবিধা হয় না। কিন্তু ইয়াজিদ ভাই,
আজ আপনাকে আর সময় দিতে পারছি না। আমাকে
যেতে হবে।
শরিফুল আলমঃ সোলায়মান ভাই, আপনি আমার ভাগ্নের
জন্যে দোয়া করবেন।
সোলায়মান জ্বীনঃ আবার দেখা হবে। ফি আমানিল্লাহ
শরিফুল ভাই, ফি আমানিল্লাহ ইয়াজিদ ভাই....
এই বলে হাত নাড়তে নাড়তে বড় গাছটার ওপাশে
চলে গেলেন। এরপর আর কোন সাড়া শব্দ
নেই। কিছুক্ষন সময় লাগলো আমার ঘোর কাটতে।
দৌড়ে গেলাম গাছের ওপাশে। না, কেউ নেই।
পাশেই ধু ধু মাঠ, কোথাও কেউ নেই।
আমি আর মামা মোটর বাইকে চেপে ফিরে এলাম।
দ্রষ্টব্যঃ জানি এই ঘটনাটা অনেকেই বিশ্বাস করবেন
না। কিন্তু আল্লাহ সাক্ষী আমি মিথ্যা বলছি না। দয়া
করে কেউ কোন আপত্তিকর মন্তব্য করবেন
না। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আপনাদের সকলের
মঙ্গল করুন।
Comments