কুরআনে ব্ল্যাকহোল?
- Just Another Bangladeshi
- Apr 27, 2018
- 4 min read
ইসলাম প্রচারকদের একটি বহুল প্রচলিত দাবি হলো, ‘কুরআন ১৪০০ বছর আগেই ব্ল্যাকহোলের ইংগিত দিয়েছে’। অন্যান্য অনেক উদ্ভট দাবি সমূহের মতো ইসলাম প্রচারকদের এই দাবিটিও ইন্টারনেটের কল্যাণে কোটি কোটি সাধারণ মুসলিমের কাছে পৌঁছেছে এবং সাধারণ মুসলিমরাও এই উদ্ভট দাবিটি সত্য মনে করে গ্রহণ করেছে। সুযোগ পেলেই মুসলিমদের অনেকে এই উদ্ভট দাবিটি করে বসে।

ব্ল্যাকহোল কি?
ব্ল্যাকহোল আসলে কি তা না জানা বা সঠিক ধারণা না রাখা লোকজনও দাবি করে, কুরআন ১৪০০ বছর আগেই ব্ল্যাকহোলের ইংগিত দিয়েছে। তারা খুব নিশ্চিত যে, সকল বৈজ্ঞানিক তথ্যের ইংগিত কুরআনে কোনো না কোনোভাবে আছে। যদিও আজ পর্যন্ত কোনো কুরআন গবেষক কুরআন নিয়ে গবেষণা করে এমন কোনো তথ্য বের করে দেখাতে পারেননি যা বিজ্ঞানীরা পরবর্তীতে আবিষ্কার করেছে। কোনো বিষয়ে না জানাটা আমি লজ্জাজনক মনে করি না। সবাই সবকিছু জানবে না বা বুঝবে না এমনটাই তো স্বাভাবিক। এমন অনেককিছুই থাকতে পারে আমি জানি, আপনি জানেন না। আবার, এমন অনেক কিছুই থাকতে পারে আপনি জানেন, আমি জানি না। কিন্তু, কোনো বিষয়ে সঠিক জ্ঞান না রেখে যদি ভাবেন আপনার ধর্মগ্রন্থ হাজার বছর আগেই সেবিষয়ে ইংগিত দিয়েছে এবং সেটা ভেবেই আত্মতৃপ্তিতে ভোগেন, তাহলে সেটা অবশ্যই লজ্জাজনক। কুরআনে ব্ল্যাকহোলের ইংগিত আছে কি নেই সেটা বুঝতে হলে আগে ব্ল্যাকহোল কি জিনিস সেটা বুঝতে হবে।
ব্ল্যাকহোল এমন একটি জায়গা যেখানে খুব সামান্য পরিমাণ জায়গায় অনেক অনেক ভর ঘনীভূত থাকে। যার ফলস্বরূপ, ব্ল্যাকহোলের মহাকর্ষ বল এতো বেশি থাকে যে কোনোকিছুই এর নির্দিষ্ট সীমানা পেরিয়ে গেলে আর ফিরে আসতে পারে না, এমনকি সেকেন্ডে ১৮৬,০০০ মাইল (৩০০,০০০ কিলোমিটার) বেগে চলা আলোও না।
একটি ব্ল্যাকহোলের জন্ম তখনই হতে পারে যখন একটি নক্ষত্রের সমস্ত জ্বালানি শেষ হয়ে যায়। একটি নক্ষত্রের মৃত্যু থেকেই একটি ব্ল্যাকহোলের জন্ম হয়। প্রত্যেক ব্ল্যাকহোলের চারপাশে একটি সীমা থাকে। ব্ল্যাকহোলের অভিকর্ষ বল অত্যন্ত অত্যন্ত বেশি হয় বলে কোনোকিছু এই সীমা একবার পেরিয়ে গেলে আর ফিরে আসতে পারে না। ঠিক এই কারণেই আমরা ব্ল্যাকহোল দেখতে পারি না। আলো ব্ল্যাকহোলের সীমা একবার পেরিয়ে গেলে আর ফিরে আসতে পারে না বলে আমরা ব্ল্যাকহোল দেখতে পারি না। তাহলে একটি ব্ল্যাকহোল কোথায় আছে কিভাবে জানা যায়? একটি ব্ল্যাকহোলের অস্তিত্ব বোঝা যায় তার আশেপাশের অঞ্চলের ওপর তার প্রভাব লক্ষ্য করে।
বিস্তারিত জানতে এই ভিডিওটি দেখার পরামর্শ রইলোঃ
দাবি
ইসলাম প্রচারকদের অনেকে দাবি করেছেন সূরা আল-মুরসালাতের ৮ নং আয়াতটি ব্ল্যাকহোলের অস্তিত্বের ইংগিত প্রদান করে।
77:8
فَاِذَا النُّجُوۡمُ طُمِسَتۡ ۙ﴿۸﴾
English – Sahih International
So when the stars are obliterated
Bengali – Bayaan Foundation
যখন তারকারাজি আলোহীন হবে,
জবাব
ইসলাম প্রচারকরা সারাজীবন দাবি করে এসেছেন যে, ইসলামের সমালোচকরা কোনো আয়াতের আগে পরের আয়াত বিবেচনায় না এনেই সেই আয়াত বিচার করে। মজার ব্যাপার হলো, ইসলামকে একটি মানবিক ধর্ম হিসাবে উপস্থাপন করতে, কুরআনে বৈজ্ঞানিক মিরাকলের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে তারা এমন কিছু আয়াত তুলে ধরেন যেসব আয়াতের আগে পরের আয়াত তারা বিবেচনায় আনেন না।
সূরা আল-মুরসালাতের ৮ নং আয়াতের আগে পরের আয়াত আপাতত বিবেচনায় না আনলাম, ঐ আয়াতটি নিয়েই কথা বলি। আয়াতটি পরিষ্কারভাবেই ভবিষ্যতের একটি সময়ের কথা বলছে যে সময়ে নক্ষত্র সমূহ আলোহীন হয়ে পড়বে। এই আয়াতটি যে বর্তমান সময়ের কথা বলছে না বা অতীতের কথা বলছে না, বরং ভবিষ্যতের কথা বলছে সেটা যেকোনো সুস্থ মানুষের বোঝার কথা। অর্থ্যাৎ, আয়াতটি বলছে, ভবিষ্যতে নক্ষত্র সমূহ আলোহীন হয়ে যাবে। আয়াতটি কিন্তু এমন কোনো ইংগিত দিচ্ছে না যে, আলোহীন নক্ষত্রের অস্তিত্ব এখনো আছে। ব্ল্যাকহোল কোনো বিজ্ঞানীর ভবিষ্যদ্বাণী নয়, ব্ল্যাকহোল চন্দ্র সূর্যের মতোই অস্তিত্বশীল ছিলো আছে থাকবে। মানুষ প্রজাতিটির উদ্ভবের আগেও মহাবিশ্বে ব্ল্যাকহোলের অস্তিত্ব ছিলো, মানুষ প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে গেলেও ব্ল্যাকহোলের অস্তিত্ব মহাবিশ্বে থাকবে। পরিষ্কারভাবেই, আয়াতটি ব্ল্যাকহোলের ইংগিত দেয় না।
আয়াতটির আগে পরের আয়াত সমূহ লক্ষ্য করলে আমরা জানতে পারি, সূরা আল-মুরসালাত ব্ল্যাকহোল নয়, বিচারদিবসের কথা বলে।
77:1
وَ الۡمُرۡسَلٰتِ عُرۡفًا ۙ﴿۱﴾
English – Sahih International
By those [winds] sent forth in gusts
Bengali – Taisirul Quran
পর পর পাঠানো বাতাসের শপথ যা উপকার সাধন করে,
77:2
فَالۡعٰصِفٰتِ عَصۡفًا ۙ﴿۲﴾
English – Sahih International
And the winds that blow violently
Bengali – Taisirul Quran
অতঃপর তা প্রচন্ড ঝড়ের বেগে বইতে থাকে,
77:3
وَّ النّٰشِرٰتِ نَشۡرًا ۙ﴿۳﴾
English – Sahih International
And [by] the winds that spread [clouds]
Bengali – Taisirul Quran
শপথ সেই বায়ুর যা (মেঘমালাকে) ছড়িয়ে দেয় দূর দূরান্তে,
77:4
فَالۡفٰرِقٰتِ فَرۡقًا ۙ﴿۴﴾
English – Sahih International
And those [angels] who bring criterion
Bengali – Taisirul Quran
আর বিচ্ছিন্নকারী বাতাসের শপথ যা (মেঘমালাকে) বিচ্ছিন্ন করে,
77:5
فَالۡمُلۡقِیٰتِ ذِکۡرًا ۙ﴿۵﴾
English – Sahih International
And those [angels] who deliver a message
Bengali – Taisirul Quran
অতঃপর (মানুষের অন্তরে) পৌঁছে দেয় (আল্লাহর) স্মরণ,
77:6
عُذۡرًا اَوۡ نُذۡرًا ۙ﴿۶﴾
English – Sahih International
As justification or warning,
Bengali – Taisirul Quran
(বিশ্বাসী লোকদেরকে) ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ দেয়ার জন্য আর (কাফিরদেরকে) সতর্ক করার জন্য।
77:7
اِنَّمَا تُوۡعَدُوۡنَ لَوَاقِعٌ ؕ﴿۷﴾
English – Sahih International
Indeed, what you are promised is to occur.
Bengali – Taisirul Quran
তোমাদেরকে যার ও‘য়াদা দেয়া হয়েছে তা অবশ্যই সংঘটিত হবে।
77:8
فَاِذَا النُّجُوۡمُ طُمِسَتۡ ۙ﴿۸﴾
English – Sahih International
So when the stars are obliterated
Bengali – Taisirul Quran
যখন নক্ষত্ররাজির আলো বিলুপ্ত হবে,
77:9
وَ اِذَا السَّمَآءُ فُرِجَتۡ ۙ﴿۹﴾
English – Sahih International
And when the heaven is opened
Bengali – Taisirul Quran
যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে,
77:10
وَ اِذَا الۡجِبَالُ نُسِفَتۡ ﴿ۙ۱۰﴾
English – Sahih International
And when the mountains are blown away
Bengali – Taisirul Quran
যখন পবর্তমালা ধুনিত হবে।
77:11
وَ اِذَا الرُّسُلُ اُقِّتَتۡ ﴿ؕ۱۱﴾
English – Sahih International
And when the messengers’ time has come…
Bengali – Taisirul Quran
যখন (হাশরের মাঠে) রসূলগণের একত্রিত হওয়ার সময় এসে পড়বে।
77:12
لِاَیِّ یَوۡمٍ اُجِّلَتۡ ﴿ؕ۱۲﴾
English – Sahih International
For what Day was it postponed?
Bengali – Taisirul Quran
(এ সব বিষয়) কোন দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে?
77:13
لِیَوۡمِ الۡفَصۡلِ ﴿ۚ۱۳﴾
English – Sahih International
For the Day of Judgement.
Bengali – Taisirul Quran
চূড়ান্ত ফয়সালার দিনের জন্য।
সূরা মুরসালাতের ৮ নং আয়াতটি এটাই প্রকাশ করছে যে, বিচারদিবসে নক্ষত্র সমূহ আলোহীন হয়ে পড়বে। ব্ল্যাকহোল কি এমন কিছু যা ভবিষ্যতে কোনো নির্দিষ্ট দিনে গঠিত হবে? অবশ্যই নয়, যদি তাই হতো তাহলে ব্ল্যাকহোলের অস্তিত্ব প্রমাণিত হতো না।
সূরা আল-মুরসালাত বলছে, বিচারদিবসে নক্ষত্র সমূহ আলোহীন হয়ে পড়বে, আকাশ বিদীর্ণ হয়ে যাবে, পাহাড়-পর্বত চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে। ৮ নং আয়াতটি যদি ব্ল্যাকহোলের কথা বলে থাকে, তাহলে ৯ এবং ১০ নং আয়াত অনুযায়ী এখন আকাশ এবং পাহাড়-পর্বত বলে কিছু থাকার কথা না। যদিও আকাশ এমন কিছুই না যা বিদীর্ণ হতে পারে। ১০ নং আয়াতটি আকাশ বিদীর্ণ হওয়ার কথা বলে সলিড আকাশের ভুল ধারণাই প্রকাশ করছে।
দাবি
সূরা আত-তাকভীরের ১৫-১৬ নং আয়াত সমূহ ব্যবহার করেও একই দাবি করা হয়।
81:15
فَلَاۤ اُقۡسِمُ بِالۡخُنَّسِ ﴿ۙ۱۵﴾
English – Sahih International
So I swear by the retreating stars –
Bengali – Taisirul Quran
আমি শপথ করছি (নক্ষত্রের) যা পেছনে সরে যায়,
81:16
الۡجَوَارِ الۡکُنَّسِ ﴿ۙ۱۶﴾
English – Sahih International
Those that run [their courses] and disappear –
Bengali – Taisirul Quran
চলে ও লুকিয়ে যায়,
জবাব
এই আয়াত সমূহ কোনোভাবেই ব্ল্যাকহোলের ইংগিত বহন করে না। বরং, এটাই প্রকাশ করে যে, আল্লাহ্ নক্ষত্র সমূহের শপথ করেন যারা চলতে থাকে এবং এই চলতে থাকার ফলে মানুষের দৃষ্টির বাইরে চলে যায়।
আসুন দেখি, প্রখ্যাত তাফসীরকারক ইবনে কাসির এই আয়াত সমূহের ব্যাখ্যায় কি বলেছেনঃ

এবার আপনি যদি বিশ্বাস করতে চান কুরআন ব্ল্যাকহোলের ইংগিত দেয়, সেটা আপনি করতেই পারেন। আপনি যা খুশি তাই বিশ্বাস করে মনকে তৃপ্ত করতে পারেন, তাতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। তবে এটা ভাবাটা বোধহয় ঠিক হবে না যে আপনার যা তা বিশ্বাসের সাথে কেউ সহমত পোষণ না করলে অশ্রদ্ধা করলে সে অন্ধ, সত্য বুঝার ক্ষমতা তার নেই।
যথার্থ লিখেছেন
সত্যিই দুর্দান্ত লিখেছেন ।
আপনার লেখা গুলোতে বাস্তবতা ফুটে উঠে।
দারুন লিখেছেন দাদা ।
লেখাটি সত্যিই অনেক মজার ছিল