top of page
Writer's pictureJust Another Bangladeshi

কর্ণ থেকে নেয়া শিক্ষা



সূর্যের ঔরসে পান্ডবমাতা কুন্তীর কুমারী অবস্থায় জন্ম কর্ণের, লোকলজ্জার ভয়ে কুন্তী জন্মের পরেই তাঁকে নদীতে ভাসিয়ে দেন। রাজ পরিবারে জন্ম নেয়া কর্ণের ভাগ্য তাকে ঠেলে দেয় রথচালক অধিরথ এবং রাধার সংসারে। কুড়িয়ে পাওয়া এই সন্তানকে পরম মমতায় লালন করে তারা, আর কর্ণও সারাজীবন সেই মমতার প্রতিদান দিয়ে গিয়েছে কৃতজ্ঞচিত্তে।



সারথী বা সূতপুত্র হওয়ায় কর্ণ কোনদিনই তার যোগ্যতার দাম পায়নি, বরং জন্ম থেকে প্রতি পদে পদে সে বঞ্চনার শিকার হয়েছে। তৃতীয় পান্ডব অর্জুন যখন যোগ্যতর প্রতিদ্বন্দ্বী একলব্যের আঙুল কেটে ফেলার ব্যবস্থা করে গুরুকে দিয়ে, কর্ণ তখন সদম্ভে মুখোমুখি হতে চায় চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর।


বংশপরিচয়ের তোয়াক্কা না করা কর্ণের এই দুর্বিনীত রূপটি বড় প্রিয় আমার। জীবনে একটা জায়গাতেই কর্ণ নিজের পরিচয় লুকিয়েছে, তা হল পরশুরামের কাছে অস্ত্রশিক্ষার সময়। সে জানত, সারথীর ছেলে জানলে তাকে শিক্ষাদান করবেন না পরশুরাম।


প্রাতিষ্ঠানিকভাবে প্রতি পদে পদে বঞ্চনার উদাহরণ কর্ণের চাইতে বড় আর কাউকে মনে হয় খুঁজে পাওয়া যাবেনা।


দ্রৌপদীর স্বয়ম্বর সভাতেও এই একই কাহিনী। সবাই যখন ধনুক তুলতেই ব্যর্থ হচ্ছে, কর্ণ তখন নিশানা তাক করামাত্র দ্রৌপদী বলে ওঠে- “আমি সূতপুত্রের গলায় মালা দিতে পারবনা”।


এই জায়গাটায় এসে কর্ণের জন্যে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয় আমার। পৌরুষদীপ্ত প্রেমের কি নিদারুণ পরাজয় সমাজ আরোপিত জাতপ্রথার কাছে! অপমান আর বেদনায় নীল হওয়া কর্ণ একটা কথা না বলে তীর ধনুক নামিয়ে রাখে, শুধু চোখ তুলে আকাশের দিকে তাকায় একবার। সুনীলের ভাষায়, ” যেন বলতে চায়, হে সূর্যদেব, পিতা আমার, এই অপমানটুকু তুমি দেখে নিয়ো, মনে রেখ বঞ্চনার এ ইতিহাস”


রাজপুত্রদের অস্ত্রপ্রদর্শনীতে কর্ণ যখন অর্জুনের সব কীর্তি প্রতিফলিত করে তার সাথে লড়তে চায়, তখন আবার সেই অপমান- রাজার ছেলের সাথে সারথির ছেলে লড়তে পারবেনা।


এই অপমান থেকে তাকে বাঁচায় দুর্যোধন- অঙ্গদরাজ্যের রাজা হিসেবে অভিষিক্ত করে কর্ণকে। বিনিময়ে কর্ণ প্রতিজ্ঞা করে আমৃত্যু বন্ধুত্বের। মহাভারত পড়েছেন এমন সকলেই জানেন, সারা পৃথিবীর বিনিময়েও কর্ণ তার প্রতিজ্ঞা থেকে এক চুল টলেনি।


রাজা হবার পরেই সারথী অধিরথের পায়ের কাছে স্থান নেয় কর্ণ, পালক পুত্রের রাজগৌরবে আনন্দাশ্রু নামে বৃদ্ধ রথচালকের চোখে। এভাবেই কর্ণ সম্মান দেয় পালক পিতাকে, ভুলে যায়না নিজের অতীত।


যুদ্ধ শুরুর আগে কৃষ্ণ কর্ণকে জানিয়ে দেয় তার বংশপরিচয়, আহবান করে পাণ্ডবপক্ষে যোগ দিতে। যেহেতু কর্ণ বড় ভাই, কৃষ্ণ এটাও বলে, সেই হবে রাজা। শুধু তাই নয়, দ্রৌপদীর স্বামীত্বের এক ভাগও তার জন্যে বরাদ্দ থাকবে।


এই পর্যায়ে কর্ণ বলে, “কৃষ্ণ, আমি জানি, এ যুদ্ধেই আমার বিনাশ হবে, পাণ্ডবরাই ন্যায়ের পক্ষে আছে। তবুও, যে দূর্যোধন আমার খারাপ সময়ে পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল, তার চরম বিপদে আমি পক্ষত্যাগ করতে পারব না। যুদ্ধের ফলাফল যাই হোক, আমি আমার সেরাটুকু দিয়ে কর্তব্য পালন করব- ফলাফল যাই হোক”


পাণ্ডবজননী কুন্তিও কর্ণকে তার আসল পরিচয় জানিয়ে অনুরোধ করেন পক্ষত্যাগ করতে। এই অংশটুকু রবি ঠাকুরের “কর্ণকুন্তী সংবাদ” কবিতায় দারুণভাবে বর্ণিত আছে।


কর্ণ কুন্তীকে কথা দেয়, অর্জুন বাদে আর কোন পুত্রকে সে হত্যা করবেনা। সেই সাথে নিজের পরিচয় বাকি পাণ্ডবদের না জানাতে অনুরোধ করে। “আমি চাইনা পাণ্ডবদের মনে আমার প্রতি কোন দয়া জন্মাক”।


জন্মের সময় কর্ণের দেহে অক্ষয় বর্ম আর কানে কুন্তল ছিল, যা তাকে যুদ্ধে অজেয় করে তুলত। অর্জুনের পিতা ইন্দ্রদেব ছদ্মবেশে এদুটোও চেয়ে নেন তার কাছ থেকে।


পরশুরামের কাছে ক্ষত্রিয় পরিচয় ধরা পড়ার পর তিনি অভিশাপ দেন, সংকটকালে কর্ণ তার শেখা সব অস্ত্র ভুলে যাবে, তার রথের চাকা দেবে যাবে মাটিতে।


শুধু তাই নয়, তার রথচালক শল্য পর্যন্ত বিশ্বাসঘাতকতা করে শত্রুকে সহায়তা করে, কটুকথার মাধ্যমে কর্ণের তেজ কমিয়ে দেবার চেষ্টা করে যুদ্ধের ময়দানে।


এমনিভাবে, যতরকম উপায়ে সম্ভব আমাদের কর্ণ বঞ্চিত হয়েছে, অসম লড়াইয়ে নিরস্ত্র অবস্থায় প্রাণ দিয়েছে অর্জুনের হাতে।


সারা মহাভারত জুড়ে এক ফোঁটা ভালবাসা এই বীরকে কেউ দেয়নি, যা দিয়েছে সবটাই স্বার্থের কারণে।


তবুও যতবার মহাভারত পড়ি, এই বীর মোহমুগ্ধ করে আমাকে।


জয় বা পরাজয় নয়, কর্তব্যপালনই বীরের ধর্ম- গীতার এই মর্মকথা কর্ণের চাইতে ভালভাবে আর কেউ পালন করতে পেরেছে কি!


এই যে আমরা কাজের ফলাফল প্রত্যাশা করি, এর কতটুকু আসলে আমাদের হাতে আছে? এত অনিশ্চয়তা মাথায় না রেখে শুধু নিজের কাজটুকুতে মনোযোগ দেয়াই কি শ্রেয়তর নয়?


চলুন না, নিজেদের ভেতরে কর্ণকে জাগিয়ে তুলি!

23 comments

Recent Posts

See All

23 comentarios


Abonti
Abonti
19 ago 2020

পোস্টটি থেকে অনেক কিছু শেখার আছে

Me gusta

Abonti
Abonti
19 ago 2020

পোস্টটি থেকে অনেক কিছু শেখার আছে

Me gusta

Jihan
Jihan
19 ago 2020

কর্ণের জীবনী তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ

Me gusta

Dipika
Dipika
19 ago 2020

যথার্থ লিখেছেন দাদা……

Me gusta

Surjo Saha
Surjo Saha
19 ago 2020

লিখাটি খুব ভাল লাগলো।

Me gusta
Enjoy
Free
E-Books
on
Just Another Bangladeshi
By
Famous Writers, Scientists, and Philosophers 
click here.gif
lgbt-bangladesh.png
click here.gif

Click Here to Get  E-Books

bottom of page