কর্মযোগ ২য় পর্ব
- Just Another Bangladeshi
- Jul 21, 2013
- 2 min read
পূর্বে উক্ত কর্ম সমূহের সংস্কার(স্মৃতি) আমরা কিভাবে দূর করবো? ইহা খুবই মূল্যবান প্রশ্ন, কেননা সকল সংস্কার(স্মৃতি) দূর না হলে যে চূড়ান্ত মুক্তি লাভ কখনোই সম্ভব নয়। কেননা, "ভালো খারাপ সকল সংস্কারই(স্মৃতি) শেষ পর্যন্ত দুঃখ জনক-যোগ দর্শন ২/১৫।" কর্মযোগ আমাদের শিক্ষা দেয়, সংস্কারের প্রাবল্যই মানুষকে সৎ বা অসৎ কর্মে প্রভাবিত করে। কারণ, মানুষের কৃত কর্ম ও চিন্তার তরঙ্গের বিরাম হলেও তা একেবারে নাশ হয় না। তা চিত্তের ভেতরে যে রেখাপাত করে যায় তথা স্মৃতি রেখে যায় তার নামই 'সংস্কার'। কারণ, "স্মৃতি ও সংস্কার(বাসনা) উভয়ই স্বরূপতঃ একই- যোগ দর্শন ৪/৯।" বস্তুত "জীবের বেঁচে থাকার ইচ্ছা অনাদি কাল হতে বর্তমান, তাই ঐ সমস্ত বাসনা(সংস্কার) অনাদিকাল থেকে যায়-যোগ দর্শন ৪/১০।"

প্রতিটি ব্যক্তির চরিত্রই সংস্কারের সমষ্টি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। কেউ ভালোভাবে চেষ্টা না করলে এই সংস্কারের বাহিরে যেতে পারে না। তাই তো শ্রীকৃষ্ণজীও অর্জুনকে বলেছিলেন, "তুমি যুদ্ধ করবে না বলে মনে করছ? কিন্তু তোমার প্রকৃতিই(সংস্কারই) তোমাকে যুদ্ধে নিযুক্ত করবে-গীতা ১৮/৫৯।" প্রকৃত পক্ষে সাধারণ মনুষ্য স্বভাবতই তার প্রকৃতির হস্তের কাঠের পুতুলের মত। যে ব্যক্তি সর্বদা অসৎ কর্ম ও চিন্তা করে, তার অসৎ প্রকৃতি বা সংস্কার এত প্রবল হয় যে, তার নিজের অজ্ঞাতাসারেও সকল কার্য প্রবৃত্তিকে পরিচালিত করে, সে অনিচ্ছা সত্ত্বেও খারাপ কর্ম করতে বাধ্য হয়। আর তা উপলব্ধি করে গীতায় অর্জুনও কৃষ্ণজীকে প্রশ্ন করে বলেছেন, "হে কৃষ্ণ! এই পুরুষ অনিচ্ছা সত্ত্বেও বল পূর্বক কার দ্বারা প্রেরিত হয়ে পাপ আচরণে নিয়োজিত হয়-গীতা ৩/৩৬?" প্রতি উত্তরে ভগবান শ্রী কৃষ্ণ বলেছেন, "কামনা(আকাঙ্ক্ষা/আসক্তি) দ্বারা জ্ঞান আচ্ছাদিত থাকে, ইহা জ্ঞানীর নিকট নিত্য শত্রু। ইন্দ্রিয়, মন ও বুদ্ধি এই কামের বাসস্থান বলে কথিত, এই কাম ইন্দ্রিয়ের দ্বারাই জ্ঞানকে আচ্ছাদিত করে জীবকে মোহগ্রস্ত করে- গীতা ৩/৩৮-৪০।"
পক্ষান্তরে যিনি সর্বদা সৎ কর্ম ও সৎ চিন্তা করেন, তার মনে সৎ সংস্কার এত প্রবল হয় যে, তিনিও অজ্ঞাতসারেও সৎ কর্ম করে থাকেন। তিনি না জেনে কোন অসৎ কর্ম করতে অগ্রসর হলেও তার সৎ সংস্কার তাকে সেই অসৎ কর্ম করতে বাঁধা প্রদান করে। তখন কোন ব্যক্তি অবিরত সৎ কর্ম ও চিন্তা দ্বারা শুভ সংস্কারের হস্তে কাঠের পুতুলের মত হয়ে যায়।
সৎ কর্ম ও সৎ চিন্তার ফলে মনুষ্য ইন্দ্রিয়ের উপর প্রভুত্ব স্থাপন করতে সমর্থ হয়। কিন্তু যে তার ইন্দ্রিয়গুলোকে বশে আনতে পারে নাই, সে ইন্দ্রিয়ের আজ্ঞায় কৃতদাসের মত সমগ্র জীবন কার্য করতে বাধ্য হয়। এই কারণেই উপনিষদের ঋষি ঘোষণা করে বলেছেন, "জীবাত্মাকে রথের স্বামী ও শরীরকে রথ বলিয়া জানবে। বুদ্ধিকে রথচালক ও মনকেই লাগাম বলে জানবে-কঠোপনিষদ ১/৩/৩।" সে অশুভ কর্ম ইচ্ছে মাত্র ত্যাগ করতে পারে না। ঠিক যেন কোন মাদকাসক্ত বা নিকোটিনে আসক্ত ব্যক্তি! কেননা, "যে বুদ্ধি অসংযত মনের সহিত সর্বদা যুক্ত থাকায় বিবেকহীন হয়, তার ইন্দ্রিয় সমূহ সারথির দুষ্ট অশ্বেরই ন্যায় দুর্দমনীয় হয়-কঠোপনিষদ ১/৩/৫।" কিন্তু যিনি সকল ইন্দ্রিয়কে বশে এনেছেন, তিনি প্রথমে অশুভ কর্মকে বর্জন এবং পরে শুভ কর্মকে ত্যাগ করে শুভ ও অশুভ উভয় বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারেন। তাই তো ঋষিগণ তা প্রত্যক্ষ করে বলেছেন, "পরন্তু যে বুদ্ধি সর্বদা সমাহিত মনের সহিত যুক্ত থাকায় বিবেকবান হয়, তার ইন্দ্রিয় সমূহ সারথির সুসংযত অশ্বসমূহের ন্যায় আজ্ঞাধীন হয়ে থাকে। কিন্তু যিনি বিবেকবুদ্ধিরূপ সারথি’র সহিত যুক্ত এবং সংযতমনা ও সর্বদা পবিত্র, তিনি সেই পদই(মুক্তি) প্রাপ্ত হন, যা হতে আর পুনর্জম্ম হয় না- কঠোপনিষদ ১/৩/৬,৮।"
תגובות