গর্ভবতী মায়েরা সাবধান!
আল্লোপনিষদ ও খ্রিস্টপুরান,কিছু বুদ্ধি প্রতিবন্ধীর উল্লম্ফন
কি শিরোনাম দেখেই চমকে উঠলেন? ছান্দেগ্য শুনেছি,ঐতেরেয়,তৈত্তিরীয় শুনেছি আল্লোপনিষদ আবার কি জিনিস! বিষ্ণুপুরান শুনেছি, ভাগবত পুরাণ শুনেছি কিন্তু খ্রিস্টপুরাণ! এ কি!
না ভয় পাবেন না।কেন ভয় পাবেন না তা বলার আগে একটু অন্য প্রসঙ্গে কথা বলে নিই।ধরুন আপনার নাম কেষ্টা। বন্ধু এসে বলল জানিস একখানা কেষ্টা উপনিষদ আছে।চমকে উঠলেন! এও কি সম্ভব!যাহা কিছুই ঘটে ঘটুক কেষ্টা ব্যাটা ই কি তবে...! তখন কিভাবে বুঝবেন কথা টি ঠিক কিনা?তার কি কোন উপায় আছে? হ্যাঁ আছে আর তা হল মুক্তিকা নামক একটি গ্রন্থ।এই গ্রন্থের মূল বিষয় হল কি কি উপনিষদ আসলে আছে এবং তার মধ্যে কখন কোনসময়ের তা বলা।মুক্তিকা বলছে উপনিষদ মোট ১০৮ খানা যার মধ্যে ১০ টি হল মুখ্য বা প্রধান আর বাকী ৯৮ টি যেগুলো পরবর্তীকালে রচিত বিভিন্ন সময়ে।আর এই তালিকা দেখেই বুঝবেন নামের শেষে উপনিষদ লাগালেই তা উপনিষদ হয়না।
এবার আসি কিছু খুব মাথামোটা লোকের মাথাব্যাথা নিয়ে আর তা হল আল্লোপনিষদ নামের অদ্ভুতুরে একটি বই নিয়ে।জাকির নায়েক সহ মুমিনরা হিন্দুদের ব্রেনওয়াশ করতে আসলেই বলে দেখ তোমাদের আল্লোপনিষদেও আল্লার কথা বলা আছে।তোমরা সবাই ইসলামের সায়াতলে চলে এসো!কিন্তু আসলে এটি কি? গবেষকদের কথা ই শুনি।
আল্লোপনিষদ হল সকল ধর্ম কে এক করে সম্রাট আকবরের বানাতে চাওয়া ধর্ম দিন ই ইলাহি এর প্রাক্কালে তার নির্দেশে লিখিত ১৫৫৬ খ্রিস্টাব্দের একটি বই।সভাপণ্ডিত ব্রাহ্মন রা এটি লেখেন এবং তার আনুষ্ঠানিক অভিষেক এর দিনে রানী দেবী চৌধুরানী এটি পাঠ করে শোনান। ( Indian literature: Volume 41 , page 175, Sahitya Academy )
মজার বিষয় হল আল্লোপনিষদ নাম শুনে যারা না বুঝে খুব ই আনন্দ পাচ্ছিল তাদের জন্যে খুব দুঃসংবাদ হল এই বইটিতে মোহাম্মদ এর খুব গুণগান করা হয়েছে।ভাবছেন এ তো খুব ভালো কথা,ইসলামের নবীর গুণগান করা হয়েছে!অপেক্ষা করুন,অত অধৈর্য হবেন না,নবী মোহাম্মদ নয় আল্লাহর “নবী মোহাম্মদ আকবর” এর গুনকীর্তন করা হয়েছে,আরবের নবী মোহাম্মদ এর নয়।
Eliot, Sir Charles (2004). Hinduism and Buddhism: An Historical Sketch, Volume 1. Philadelphia, USA: Psychology Press. p. 270. “It declares that the Allah of the prophet Muhammad Akbar (i.e., not the Allah of the Koran) is the God of Gods.”
অর্থাৎ এটি নবী মোহাম্মদ আকবর এর আল্লাহ ই যে সব কিছুর প্রভু তা এই বই এ ঘোষণা করা হয়েছে,নবী মোহাম্মদ এর আল্লাহ নয়।আমরা সবাই জানি দিন ই ইলাহি এর প্রবর্তন এ আকবর নবী এর মর্যাদা পেতে চেয়েছিলেন।
আরও বিশেষজ্ঞদের মতামত উপস্থাপন করছি দেখুন।
Texts called “Upanishads” continued to appear up to the end of the British rule in 1947. The Akbar Upanishad and Allah Upanishad are examples having been written in the 17th century, at the instance of Darah Shikoh, in praise of Islam – Harry Oldmeadow in ‘Light from the East: Eastern Wisdom for the Modern West’ ,Page 37
অর্থাৎ ব্রিটিশ শাসনকাল পর্যন্ত বেশ কিছু উপনিষদ লেখা হতে থাকে যার মধ্যে ১৭ তম শতকে লেখা আল্লোপনিষদ অন্যতম।
এন্থনি এলেনজিমিত্তামও একই কথা বলছেন আকবর কর্তৃক রচিত আল্লোপনিষদ সম্বন্ধে-
Some count up to 200 Upanishads, others up to 100. Barth says that the number of the Upanishads may go up to 250, including the Allah Upanishad that was composed at the time of Akbar – Anthony Elenjimittam in ‘The Upanishads: Isa, Katha, Mundaka, Mandukya’ Page 10
বিখ্যাত বিদেশী ভারততত্ত্ববিদ ম্যাক্স মুলার বলেছেন- Some of the Upanishads are, no doubt, quite modern, for mention is made even of an Allah-upanishad. - Max Muller in ‘Upanishads’ Page lxvii
এস এন সদাশিবম বলছেন দিন ই এলাহি নামক নতুন ধর্ম তৈরি করতে আকবর ব্রাহ্মনদের আদেশ দেন আল্লোপনিষদ লিখতে যার কারনে ব্রাহ্মন রা সম্পূর্ণ নতুন এই বইটি লিখেন হিন্দু-ইসলাম ধর্মের সমন্বয়কারী একটি বই হিসেবে।
Some upanishads are written by self-seeking Brahminism as demanded by expediency and when emperor Akbar was toying with the idea of a new religion Dil-Il- Adi, the Brahmins had written for him, a new upanishad called Allopanishad. - S. N. Sadasivan in ‘A social history of India’ -Page 178
তাই যারা আকবরের আমলে লিখিত দিন-ই-ইলাহি ধর্মের এই বইটি কে হিন্দু ধর্মের উপনিষদ নামে চালানোর জন্যে খুব উত্তেজিত তাদের পরামর্শ দেব,”শান্ত হোন”,অধিক উত্তেজনা হৃদরোগ এর ঝুঁকি বাড়ায়। হ্যাঁ খ্রিস্টপুরাণ নিয়েও কিছু জানুন।এটাও কোন পুরাণ নয় কিন্তু,ফাদার থমাস স্টিফেন কর্তৃক লিখিত ষোড়শ-সপ্তদশ শতকের একটি বই যিনি গোয়া তে বসবাস করতেন,১৬১৬ সালে বইটি প্রথম মুদ্রিত হয়।অর্থাৎ আল্লোপনিষদ এবং খ্রিস্টপুরাণ দুটি ই প্রায় একই সময় লিখিত দুটি বই যার সাথে হিন্দুধর্মের কোন সম্পর্ক নেই।আল্লোপনিষদ মুক্তিকা পরিক্রমনিকার তালিকায় ই নেই,কারন এটি আকবরের সভায় লেখা একটি বই মাত্র।
এই বইটি মূলত আরবি ভাষার সাথে সংস্কৃত ভাষা মিলিয়ে লেখা ১০ শ্লোক এর একটি ছোট লিফলেট এর মত যা মুঘল আমলে দিন-ই-ইলাহি ধর্ম প্রচারের জন্য লেখা হয়েছিল মুসলিম শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায়।
তাই সবশেষে বলব বেশী বেশী কাঁঠালপাতা চাবান,ভাতের উপর চাপ কমান।নবী মোহাম্মদ নন,নবী মোহাম্মদ আকবর ই আল্লোপনিষদ এর নবী।আর ভুলেও গর্ভাবস্থায় ধূমপান বা নেশা করবেন না,তাহলে বাচ্চার মস্তিস্কের ক্ষয় হয়ে জাকির নায়েক জন্ম নেব!
Comments