জ্বিনের সাথে বিয়ে
- Just Another Bangladeshi
- Jun 6, 2017
- 4 min read
আজকে অাব্বু ছেলেকে দেখে এসেছে।
অাব্বু যেন আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠে
পড়ে লেগেছে।
আমি বিয়ে করতে চাই না লেখাপড়া করতে
চাই অাব্বুকে বলেছি।
কিন্তু অাব্বু আমার কোন কথাই শুনলেন না।
অাব্বু চান এই বছরের মধ্যে বিয়ে দিতে।
আমিও অাব্বুকে বলে দিয়েছি
পড়ালেখা করব তারপর বিয়ে।
আমি সবে এইচ.এস.এসসি দিয়েছি।
আর আমাদের গ্রামে আমিই ভাল ছাত্রী।
অাব্বু আমাকে বলল..
--তাবা্ছুম মা, তোকে ১৯বছরের আগে বিয়ে
দিতে চাই তাতেই তোর সুখ।
--মোটেও না।বিয়েতে আমার সুখ না আমার
সুখ হল লেখাপড়ায়।
-তার জন্য এমন ছেলে খুজছি যে তোকে
বিয়ের পর পড়াবে।
আমি আর কোন কথাই বললাম না।
আমার মা মারা গেছে যখন আমার বয়স ৮
বছর।
আমার বাবা এরপর আর কোন বিয়ে করে
নেই।
আমার চাচারা অনেক বলেছিল তাও করেন
নি। আমাকে আর আমার ছোট ভাই মোহনকে
নিয়েই সে জীবন কাটিয়েছে।
আমার অাব্বুএকটু ধার্মিক। উনি মসজিদের
মাওলানা আর গ্রামের হুজুর।
গ্রামে আমার অাব্বু সম্মান অনেক বেশি।
আর আমাকে অাব্বু খুব বেশি ভালবাসে
কখনো আমি কিছু চেয়েছি আর অাব্বু দেন নি
এমন টা হয় নি।
কিন্তু
কেন যে অাব্বু আমাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য
এমন করছে তা আমি নিজে জানি না।
তাই অবশেষে অাব্বুর কথা ভেবে বিয়ে
করতে রাজি হয়েছি।
আমার বিয়ে আমার ১৯বছর হওয়ার ১দিন আগে
হয়েছে।
ছেলের নাম রিয়াজ। ছেলে শহরের তাই আমি
একটুও রাজি ছিলাম না।
আমি গ্রামের মেয়ে অাব্বুকে ছেড়ে এতদুরে
এসেছি তাও বিয়ে করে মন
টা জানি কেমন করছিল।
রিয়াজ আর আমি বিয়ের গাড়ীতে বসে
আছি।
রিয়াজ আমার থেকে এক্টু দূরে বসে আছে
আমার কান্না দেখছে তাও কোন কথা বলছে
না।
বিয়ে করে আসার সময় অাব্বু আমাকে এক্টা
তাবিজ দিয়েছে আর বলেছে...
--তাবাচ্ছুম মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তোর কাছে
রাখবি, মা।
আর রিয়াজকে যেন কানে কানে কি বলেছে
।
বিয়ের গাড়ি একবারে শহরে যাচ্ছে।
এখনো গ্রামের সীমান্ত ছাড়ী নেই
যখন গ্রামের সীমান্ত ছাড়তে যাব
তখনি গাড়ি টা যেন ধাক্কা খেল খুব
জোড়ে।
মনে হচ্ছিল কেউ যেন গাড়ীটাকে পিছন
থেকে ধরে রেখেছে।
রাত্রের সময় আমি একটু নাড়া খেয়ে গাড়ি
থেকে পড়ে যেতে নিচ্ছিলাম তখনি রিয়াজ
আমাকে ধারলো।
কিন্তু দুভাগ্যবশত অাব্বুর দেওয়া তাবিজ হাত
থেকে পড়ে গেল।
গাড়ি অনেক স্পিডে চলছে
রিয়াজ কে যে বলব গাড়ি থামাতে সেই
সাহসটুকু আমার ছিল না লজ্জা করছিল।
তখনি অাব্বুর কথা
মনে আসছিল তাই চোখ দিয়ে পানি পড়ছিল।
তখনি রিয়াজ বলল...
--তাবাচ্ছুম ঠিক আছো??
আমি আমার মাথা নাড়িয়ে বললাম
--জ্বি
--তাবাচ্ছুম এদিকে তাকাও। দেখি ঠিক আছ
কি না?
আমি চোখ উঠিয়ে তাকালাম
এই প্রথম রিয়াজ কে এত কাছের থেকে
দেখছি।
বিয়ের আগে অাব্বু আমার রিয়াজএর সাথে
কথা বলতে দেয় নি।
এমনকি দেখাও করাইনি। আমি ভেবেছি
ধার্মিক ত তাই।
কিন্তু রিয়াজকে দেখে যেন আমি মুগ্ধ হয়ে
গেলাম।
কি সুন্দর চেহারা,কি সুন্দর গায়ের রং মনেই
হচ্ছিল না যে উনি একজন মানুষ।
মানুষ এত সুন্দর হয়। তখনি রিয়াজ হাত ধরে
বলল...
--তাবাচ্ছুম ঠিক আছেন???
আমি ওনাকে বললাম
--আপনার মুখে আমার নামটা যেন বড়
বেমানান।
তাবাচ্ছুম নামটা আপনাকে মানায়।কিন্তু
পরিতো মেয়েদের ডাকে।
ছেলেদের কি ডাকে?
--জ্বিন
আমি যেন জ্বিন নামটা শুনেই ভয়ে শিউরে
উঠলাম।
আর একটা অন্য রকম বাতাস শরিরে লাগল।
রিয়াজ আমার অবস্থা দেখে খট খট করে
হেসে উঠল
রিয়াজের হাসিটা যেন মনে হচ্ছিল কোন
শয়তানের হাসির মত।
আমি চুপ করে মাথা নিচের দিকে দিয়ে
রাখলাম। অবশেষে আমি শ্বশুরবাড়ি আসলাম।
রাত্রেই এসেছি।
গাড়ি থেকে নেমেই দেখি দুইটা মেয়ে
দরজায় দাঁড়িয়ে আছে আমাকে ঘরে নেওয়ার
জন্য। রিয়াজের বাবা মা নেই। এটা অাব্বু
বলেছিল।
ওদের বাড়িটা বেশ বড় আর অদ্ভুত। আমার
কেমন জানি ভয় করতে শুরু করল ওদের। ওই
দুইটি মেয়ে আমাকে
রিয়াজের ঘরে নিয়ে বসাল।
আমি খুব ক্লান্ত ছিলাম তাই বিছানায় বসতে
না বসতেই আমি ঘুমিয়ে পড়লাম।
হঠাৎ ঘুম মাঝ রাত্রে ভেঙে গেল। ঘুম
ভাঙতেই দেখি রিয়াজ সাদা একটা
পাঞ্জাবি পড়ে নামাজ পড়ছে আমি একটু
অবাক ই হলাম।
কারণ ও এত ধার্মিক না। অাব্বু বলেছিল
-তাবাচ্ছুম মা, স্বামীর সাথে তাহাজ্জুদের
নামাজ পড়িস
তাই আমি বিয়ের বউ এর সাজেই অজু করে
রিয়াজের সাথে নামাজ পড়তে শুরু করলাম।
নামাজ শেষে মনে হয় ওনি আর আমি এক
সাথেই
সালাম ফিরাচ্ছিলাম।
যেই সালাম ফিরিয়ে রিয়াজের দিকে
তাকালাম
আমি ভয়ে শেষ হয়ে গেলাম রিয়াজের
চেহারাটা কেমন ফ্যাকাশে আর ওর দুইটা
চোখ দৈত্যের মত আগুনের গোলা তা দেখেই
আমি জ্ঞান হারালাম
আমি রিয়াজকে দেখে অজ্ঞান হয়ে গেলাম।
কিছুক্ষণ পর হুশ ফিরল।
কিন্তু আজব ব্যপার রিয়াজ আমার পাশে
ঘুমাচ্ছে।
আর ঘড়িতে ৩টা বাজে। কিন্তু আমি নামাজ
পড়তে উঠেছিলাম
তখনো ৩টা বাজছিল।
আমার যেন আকাশ পাতাল লাগছে সব। মনে
হচ্ছে আমি সপ্ন দেখেছি কোন।
তাই আবার ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।কিন্তু ঘুম
আর আসছে না তাই কি আর করব???
বিয়ের শাড়ী টা চেঞ্জ করে আসি।
বিয়ের শাড়ি চেঞ্জ করে বের হলাম।
কিছুক্ষণ হাটাহাটি করলাম তাও ঘুম আসছে
না। শুধু সেই মুখটা বারবার ভেসে উঠছে। আর
আমার কলিজা ছটফট করছে।
আমি ভীষণ ভীতু রাত্রে বিড়ালের ডাক
শুনলেই শিউড়ে উঠে চিৎকার করতাম আর
আব্বা ছুটে আসত। কিন্তু আজ পাশে অাব্বুও
নেই এত ভয় পেয়েছি কাকে বলব?? রিয়াজ
কে বলতে চাইছিলাম কিন্তু ওকে কি বলব??
যে আমি ওর মধ্যে আজ ভয়ানক কিছু
দেখেছি তাই ভাবতে ভাবতে এক ঘুম দিলাম
বেল্কুনির চেয়ারে। হঠাৎ মনে হল কোন এক
বাতাস আমার শরীর ছুয়ে যাচ্ছে। আমি ভয়ে
চোখ খুলতে পারছি না তাই এক চিৎকার
দিয়ে "রিয়াজ রিয়াজ আমাকে বাচাও"।
চিৎকার দেওয়ার ১সেকেন্ডের মধ্যে মনে হল
কেউ আমায় মাথায় হাত দিল আর বলল
-তাবাচ্ছুম ঠিক আছো?কি হয়েছে
আমি রিয়াজের কন্ঠ পেয়ে শান্ত হলাম
চোখ ও খুল্লাম আর রিয়াজ কে জড়িয়ে
ধরলাম
রিয়াজ বার বার জিজ্ঞেস করছিল
--তাবাচ্ছুম কি হয়েছে বল??কি হয়েছে??সপ্ন
দেখেছ কোন??
-আমি ভয় পেয়েছি। মনে হচ্ছিল কেউ
আমাকে ধরেছে। একটা খারাপ অনুভুতি।খুব
খারাপ
--সপ্ন দেখেছ পরী। শান্ত হও
-না সপ্ন না আমি সত্যি অনুভব করেছি
রিয়াজ আমার কথা কিছুতেই বিশ্বাস করতে
চাচ্ছিল না। কিন্তু আমি সিউর প্রথমটা সপ্ন
হলেও দ্বিতীয় টা সপ্ন না। প্রথমের কথা
আমি রিয়াজকে বলতে পারি নাই। রিয়াজ
আমার হাত ধরে বিছনায় নিয়ে গেল বলল
-তাবাচ্ছুম ঘুমাও আমি তোমার মাথায় হাত
বুলিয়ে দিচ্ছি
আমি রিয়াজের কথামত শুয়ে পড়লাম।রিয়াজ
আমার কপালে একটা আদর দিয়ে মাথায় হাত
বুলিয়ে দিল। আমার লজ্জা লাগছিল কিন্তু
সবচেয়ে বেশি ভয়। আজ এক রাত্রের মধ্যে
অনেক কিছু হয়ে গেছে পরে ঘুমালাম।
ঘুম সকালে খুলল। কিন্তু ঘুম থেকে উঠে
দেখলাম রিয়াজ রুমে নেই।সকাল ৭টা বাজে
তাই আমি ফ্রেশ হয়ে রান্নাঘরে গেলাম
রান্নাঘ রে একটা মেয়ে রান্না করছে।মে
বি কাজের মেয়ে
আমি ওকে রিয়াজের কথা জিজ্ঞেস করলাম
মেয়েটি কোন কথাই বলছে না। বড় আজব।
নাম জিজ্ঞেস করলাম কিন্তু তাও বলল না।
এত কথা জিজ্ঞেস করছি তাও বলছে না।
আমি গ্রামের মেয়ে হয়ত শহরে সবাই খুব
ভাবে থাকে
তাই আর কিছুই জিজ্ঞেস করি নাই।মেয়েটা
চায়ের জন্য গরম পানি নামাতে গিয়ে গরম
পানি ছিটে আমার হাতে আসল।
মেয়েটি সাথে আমার পা ধরে ক্ষমা চাইল।
ব্যাপারটি খুব অদ্ভুত লাগল
আমার হাতে এক ফোটা গরম পানি এসেছে
আমি টের পর্যন্ত পাই নেই।
তাতেই এমন করছে আমি ওকে বললাম, যাও
ক্ষমা করেছি।
এই বলে ঘরের দিকে আসতেই! মেয়েটি
চিৎকার দিল,,,
আপা গো.!!
আমি রান্না ঘরে গিয়ে দেখলাম ওর হাত
অর্ধেক পুড়ে গেছে
গরম পানিতে।
আমি অবাক হয়ে গেলাম কি করব বুঝতে
পারছিলাম না।

Comments