জ্বিনের সাথে বিয়েঃ ৫ম ও শেষ পর্ব
আমার কানে যেন সেই বাতাস বলছে...
--তাবাচ্ছুম তুমি ভুল করছ.!
আমি ভয়ে শেষ হয়ে গেলাম। পরে বাবার দিকে
তাকালাম ভাইয়ের দিকে তাকালাম।
তখনি যেন কেমন একটা সাহস অনুভব করলাম যে
আমাকে পারতেই হবে।
পরে নুহাশকে দেখলাম ও ঘুমের ঘোড়েই
হেটে টয়লেটে যাচ্ছে।
আমিও ওর পিছে পিছে গেলাম লুকিয়ে লুকিয়ে যে
কিসের জন্য ও ভয় পেল???
আমি আড়াল থেকেই নুহাশকে ফলো করছি।
দেখি ও রিয়াজের রুমের সামনে এসেই ভয়ে
কুকড়ে গেছে
আর যাচ্ছে না সামনে। পরে আমি নিজেই ওকে
ওয়াশ রুমে নিয়ে গেলাম।
আমার ভাইটা এত ভীতু না কিন্তু কেন যে আজ এমন
করছে বুঝতে পারছিলাম না।
পরে মাথায় বুদ্ধি আসল ও কথা বলতে না পারলেও ও
লিখতে তো পারবেই।
ও ৪র্থ শ্রেণীতে পড়ে।
আমি ওকে ঘরে নিয়ে দরজা লক করলাম।
পরে ওর কাছে আমি খাতা কলম দিয়ে বললাম....
--ভাই, তুই যা দেখেছিস লিখে দে?
ও লিখতে শুরু করল পরে আমাকে কাগজটা দিল।
কাগজে লিখা ছিল...
--"আপু, ভাইয়া ভুত লম্বা কাপড় পরে ছিল। চোখগুলা
ভুতের মত""
আমি কিছুই বুঝতে পারলাম না। রিয়াজ এমন??
ও মনে হয় ভয়ে এমন করছে।
কিন্তু নুহাশের কথার সাথে আমার সপ্নের অনেক
মিল ছিল।
কেন বা আমি এমন সপ্ন দেখতাম আর নুহাশেও এমন
কেন বা দেখত???!!
আমার সব প্রশ্নের উত্তর যেন ঐ নামাযের ঘরে।
রাত্রে আর যাই নেই নামাজঘরে।
কারন রাত্রে আমার ভয় করছিল। কিন্তু রাত্রে আর ঘুম
হল না।
সকালে ফজর এর নামায পড়েই যখন নামায ঘরে
যেতে নিব তখনি পিছনে রিয়াজ এসে আমায় বলল...
--তাবাচ্ছুম, কোথায় যাও??
আমি ভয় পেলাম আজ ওর কথায় ওর কথাও যেন আজ
আমার কাছে ঐ বাতাসের মত।
ওকে কিছু বলতে মন শায় দিল না। তাই ওকে কিছুই
বললাম না।
--না এই ঘরে অনেক ধুলোত তাই ঝাড় দিতে
চাচ্ছিলাম আর কী।
--পরে দিও আমাকে কিছু খেতে দাও!
আমি ওর কথামত ওকে খাবার দিলাম। পরে ও ঘরে
গেল ওর সামনে কিছুতেই নামাজ ঘরে যাওয়া যাবে
না তা বুঝলাম।
তাই আমি ওকে নতুন জামা সুইটকেস থেকে বের
করে ওকে দিলাম।
যেই না ও আয়নার সামনে আসল আয়নার ওর
প্রতিভিম্ব দেখে আমি বোবা হয়ে গেলাম।
ওকে আয়নায় দেখছিলাম অনেক লম্বা আমাদের
বাড়ির থেকেও বড় ও সাদা জুম্ভা পড়া।
চোখ দুটা আগুনের মত ভয়ংকর। আমি চুপচাপ শুধু
আয়না দেখছি।
যখনি রিয়াজ আমাকে ধরতে আসল। আমি রিয়াজ কে
ধাক্কা দিয়ে দৌড় দিয়ে তাড়াতাড়ি নামাযের ঘরের তালা
খুলে ঘরে গিয়ে ভিতর দিয়ে তালা দিলাম।
ও আমার পিছন পিছন আসল। দরজায় অনেক জোড়ে
জোড়ে ধাক্কা দিচ্ছে আর বলছে...
--তাবাচ্ছুম বের হয়ে আস।
এখন ও অনেক ভয়ংকর কন্ঠে বলছে কথাগুলো
আমি কাদতে লাগলাম ভয়ে কি করব ভেবে পারছি না।
নামাযের ঘরে চোখ খুলে দেখলাম রুমটা অনেক
সুন্দর অনেক আল্লাহ তা'লার নাম লিখা দিয়ে ঘর ভরা।
আর অনেক বই।
কিন্তু টেবিলের উপরে আমার নাম লিখা বড় ডায়েরি।
পিছনে দরজায় ওই টা বিকট শব্দ করে বলছে
--মায়া দরজা খুল। নাহলে সব শেষ করে দিব
আমি কোন কথাই শুনলাম না।
সোজা ওই ডায়েরি টা হাতে নিয়ে পড়া শুরু করলাম।
ডায়েরিটা পড়তে পড়তে যেন আমার পায়ের নিচে
মাটি সরে গেল।
শেষের পাতায় অর্ধেক লিখা ছিল
--তাবাচ্ছুম রিয়াজ তোর জন্য সব শেষ করে দিবে।
ডায়েরির লেখাগুলো পড়ে যেন আমার জ্ঞানবুদ্ধি
সব লোপ পেয়েছে।
ডায়েরি পড়া শেষ আর ওই বদজিন দরজা ভেঙে
দিল।
আমি পিছনে ফিরে দেখলাম বদজিন ওর আসল রুপে
দাঁড়িয়ে আছে। আর বলছে...
--তাবাচ্ছুম তুমি আমার। আমার সাথে তোমাকে নিয়ে
যাব তাবাচ্ছুম
হ্যা ও দরজার ঐখানে দাঁড়িয়ে ছিল কেননা
বদজিন এই ঘরে ডুকতেই পারবে না।
আমি শুধু ওকে জিজ্ঞেস করেছি...
--রিয়াজ কোথায়???
--ও বলল, ঐ তুচ্ছ জিনকে আমি আটক করে
রেখেছি তুমি শুধু আমার।
হ্যা ডায়েরিতে বাবা এটাই লিখেছে!
"রিয়াজ আমার পোস্য জিন। ওই শুধু তাবাচ্ছুম
বদজিনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে।
আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম
--মা কোথায়??
বদজীন বলল
--আমার জন্য নাকি মেরে ফেলেছে।
হ্যা ডায়েরিতে এটাই লিখা ছিল"
মায়ের পোস্য জিন ছিল এই বদজিন।
আমার বয়স যখন ৯বছর তখন নাকি এই জিন আমাকে
তার সাথে বিয়ে করে নিয়ে যেতে চেয়েছিল।
মা বাধা দেওয়ায় এই জিন মাকে মেরে
ফেলেছে। তখন বাবা নাকি এই জিনকে আটকিয়ে
রেকেছিল।
কিন্তু আমার১৯ বছরের সময় এই জিন ছাড়া পেয়ে
যাওয়ার কথা তাই বাবা আমার বিয়ে রিয়াজ নামের জিন এর
কাছে দিয়েছে।
আর ওই তাবিজ দিয়েছিল এই বদজিন থেকে রক্ষা
করার জন্য""
ওই জিনের কথামত অইরুম থেকে বের না হওয়ায় ও
নুহাশকে উল্টা করে নিয়ে ঝুলিয়ে দিল।
--তাবাচ্ছুম আমার সাথে না গেলে নুহাশকে ছুড়ে
মারব..
আমি কি করব বুঝতে পারছিলাম। ওর কথামত গেলেও
আমার সর্ম্পুন পরিবার মেরে আমাকে নিয়ে যাবে
ডায়রিতে লেখা ছিল।
আমার মাথা কোন কাজ করছে না। তখনি মনে পড়ল
ডায়েরীর শেষ পাতায় লেখা আমার জন্য সব
করতে পারে।
আমি তখনি দেখলাম নামাজ ঘরে কেরোসিন আর
ম্যাচ
আমি তখন কেরোসিন নিজের শরিরে ঢাল্লাম
ওই বদজিন তখন নুহাসকে ছেড়ে দিয়ে বললছে...
--তাবাচ্ছুম, কি করছ?? কি করছ কান্না কন্ঠে। আমার
সাথে চল। আমি খুব ভালবাসি তোমাকে।
-আমি মরে গেলেই সব শান্তি হবে। তুই শান্তি হবি।
রিয়াজ মুক্ত হবে
-না, না তাবাচ্ছুম এটা করো না। তুমি যা বলবে তাই করব।
-না আমি মরে গেলেই শান্তি হবি। যদি এটা না চাস তুই
চলে যা আমাকে ছেড়ে আর কখনো ফিরবি না।
আমার ভাই আর বাবাকে ভাল করে দিয়ে যা। আর
রিয়াজকে মুক্ত করে দে
অই বদজিন আমার কথা শুনার পর চুপ রইল হয়ত আমারা
মৃত্যুর পর যাবে।
যেই ম্যাচ ধরাতে নিলাম।
সেই ও বলল...
--আমি চললে যাচ্ছি। তুমি নিজের ক্ষতি করো না
তোমার জন্মের পর থেকে তোমাকে ভালবাসি।
ফিরে আসব আমি আবার তোমাকে নিতে।
রিয়াজকে ছেড়ে দিব কিন্তু আসতে দেরি হবে
ওর তাবাচ্ছুম।
এটা বলেই অদৃশ্য হয়ে গেল।আমি মাটিতে লুটে
কান্না করতে লাগলাম।
আমার জীবন কোন মোড়ে এসেছে তা
ভেবে। নুহাশ কিছুদিন পর আবার কথা বলতে শুরু
করল।
বাবাও আস্তে আস্তে সুস্থ হতে শুরু করল। আর
আমি আমার জীন বরের জন্য অপেক্ষা প্রহর
গুনতে শুরু করলাম।
হয়ত এই বর এর সাথে আমার সংসার করা সম্ভব নয় তাও
গুনছি
ভালোবাসা শুধু একবারেই হয় কেউ হয়ত তা মনে
রাখতে চায় না কিন্তু ভুলতে পারে না।
সেটাও আমার সাথে হয়েছে। আর রিয়াজের
দেওয়া লকেট টা হাতে নিয়ে ও বলেছিল এই
লকেট হাতে নিয়ে মনে করলে ও আসবে।
হ্যা আমি জিন বরকেই ভালোবেসে ফেলেছি।
হয়ত রিয়াজ আবার এসে বলবে
--তাবাচ্ছুম তাকাও
Comments