ধর্ম যদি মানুষের ভাল করতো তাহলে ধর্ম গরিবীর বিরুদ্ধে লড়াই শেখাতো.
পাকিস্তানের লাহোরের শাহিদি আস্থান ভাই তারু জি গুরুদ্বয়ারাকে মসজিদে রূপান্তরের বিরুদ্ধে ভারত প্রতিবাদ জানিয়েছে । বিশ্বে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা ক্রমশ বাড়ছে । কিছুদিন আগে তুরস্কের আঙ্কারার সোফিয়া খ্রিস্টান মিউজিয়ামকে মসজিদে পরিণত করা হয়েছে । এটা খ্রিস্টানদের ভাবাবেগে আঘাত করেছে কিন্তু কোন মাতামাতি বা প্রতিক্রিয়া শুনতে পাইনি কারণ ইউরোপের খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীরা জানে ধর্ম নিয়ে বেশী বাড়াবাড়ি করলে তার ধ্বংস অনিবার্য । ইউরোপিয়ানরা অধিকাংশই ধর্ম মোহ থেকে বেরিয়ে এসেছে । বহুদিন আগে আফগানিস্তানের বামিয়ান বুদ্ধও রক্ষা পায় নাই , ইসলামি মৌলবাদী গোষ্ঠী তালিবানেরা এই পুরাকীর্তিকে নির্মমভাবে ধ্বংস করেছে ।এগুলিতে নেতৃত্ব দিচ্ছে ইসলামি ধর্মাবলম্বী মৌলবাদী উগ্রপন্থীরাই বেশী করে সারা পৃথিবীতে । ভারতেও এসব শুরু করেছে নাগপুরিয়া গরুর দল । এই অসহিষ্ণুতাই ধর্মের প্রধান চরিত্র । কিছু ব্যতিক্রমী ঘটনা দিয়ে ধর্মকে ভাল বলা যায়না ।
এতো বছর এই পৃথিবীতে কাটিয়ে দেওয়ার পরও ধর্মের মর্ম বুঝতে পারলাম না । একবিংশ শতাব্দীতেও ধর্ম সেই বিশ্বাসের নাড়ু আর বিভিন্ন আচারে ভর্তি বিধিনিষেধই রয়ে গেল । ধর্ম ব্যক্তিগত স্তরে থাকলে তা সমাজের ক্ষতি করেনা কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেলে তা সমাজের অধিকাংশের কাছে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে । হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ ধর্মাচারণ করলেও মানুষ মানুষ হতে পারলোনা , সেই হিন্দু মুসলিম খ্রিস্টান বৌদ্ধ ইহুদী ------ হয়েই রইল । প্রকৃতি সৃষ্ট আর কোন জীব ধর্মাচারণ করে বলে জানা নেই । সুন্দরবনে হিন্দু বাঘ বা মুসলিম কুমির মেলেনা । প্রকৃতির বিভাজন ছাড়া মানুষের মধ্যেই একমাত্র জাতপাতের বিভাজন বিরাজমান আর তা ভারতে প্রকট । আর যেদিন থেকে ------- “ এটা আমার শব্দটি সমাজে এলো “ ---- সেদিন থেকেই এই ব্যক্তি সম্পদ রক্ষা করতে লাঠি ছুরি তলোয়ার বন্দুকের সাথে ধর্ম অস্ত্রও সহায় হলো ।
ধর্মের ইতিহাস বড্ড কর্দমাক্ত পিচ্ছিল ও রক্তাক্ত । এক ধর্মে বিনাশ না করে অন্য ধর্মের বিকাশ হয়নি । সমস্ত সভ্যতায় ধর্মের বিকাশের গল্পই এক ।সে মিশর গ্রীস আরব বা ভারতীয় সভ্যতা যাই হোকনা কেন । বাংলার প্রথম স্বাধীন রাজা শৈব ধর্মাবলম্বী শশাঙ্কের বৌদ্ধস্তুপ ধ্বংসের ও বাংলায় বৌদ্ধ ধর্মের বিবরণ আমরা ইতিহাসেই পাই । কর্ণাটকে শৈব বাসবান্নেয়া কর্তৃক ৮০০০ জৈন সন্যাসী নিধনের কথা ইতিহাসেই আছে । আরবে আব্রাহামের নেতৃত্বে পেগানদের ধর্মকে শেষ করার ইতিহাসও আছে । ইহুদী খ্রিস্টান ও ইসলামের লড়াইয়ের ইতিহাসও বড় রক্তাক্ত । মহম্মদের নেতৃত্বে সৌদি আরবের পেগানদের হত্যা ও তাদের মূর্তী ভাঙ্গা ও তাদের লুন্ঠন ও মহিলাদের গনিমতের মাল তৈরির ইতিহাস আছে । ক্রুসেড এক ধর্মের এক রক্তাক্ত ইতিহাস । হিটলারও ইহুদীদের নিধন করেছে দোহাই দিয়েই । ভারতীয় উপমহাদেশে ধর্মের বিভাজনকে কেন্দ্র করে কতো লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এবং আজো হারাচ্ছে । পাকিস্তান আফগানিস্তান বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর অত্যাচার , তাদের সম্পদ লুট করা , তাদের জোর করে ধর্মান্তরিত করা তাদের দেশত্যাগে বাধ্য করা চলছে অবিরত । ধর্মীয় কারণে সারা বিশ্বে উদ্বাস্তুর ঢল সব থেকে বেশী । পূর্ব বঙ্গের বাঙালি জাতির থেকে আর কে বুঝবে সেই কথা । ভারতের ব্রাহ্মণ ও ক্ষত্রিয় শ্রেণি জাতপাতের বিভাজন করে ও ধর্মের নামে হাজার হাজার বছর সমাজের অধিকাংশ শ্রমজীবি মানুষকে শোষণ করছে এবং এখনো তা বহাল তবিয়তেই চলছে । একেশ্বরবাদী ইসলাম ও খ্রিস্টান ধর্ম আসার পর তাই ধর্মান্তর ঘটেছে । এবং গণ্ডগোল চলছে সেই মধ্যযুগ থেকেই , শুধু ইসমাল হিন্দুর দাঙ্গা না , হিন্দুদের মধ্যে শৈব –শাক্ত-বৈষ্ণবদের কাটাকাটিতে ও বাংলায় প্রচুর লোক মারা যায় । মনসামঙ্গল কাব্যেও শিব মনসার দ্বন্দ্ব প্রকট । তারপর ইংরেজ ক্ষমতায় এসে হিন্দু ইসলামের দ্বন্দ্বকে কাজে লাগায় নিজেদের শাসন শোষণ বজায় রাখতে । তারই ফলশ্রুতি আজকের ভারতের সাম্প্রদায়িকতা অনেক কিছুর যোগফল । আর ১৯৯২ সালের নাগপুরিয়া গরুরা বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে ভারতে এক নতুন উপদ্রব শুরু করেছে । কংগ্রেস পার্টীও ভোটে জেতার জন্য নরম ধর্মীয় তাস খেলেছে বিভিন্ন সময় । বামপন্থীরা অনেক সময় মনে হয়েছে দিশাহীন আর কিছু সময় একপেশে আচরণ করেছে । আগামীর ভারত কোন পথে চলবে তা নিয়ে ঘোর সংশয় । যুক্তিবাদী ও উদারপন্থী আন্দোলন কতোটা জোরদার হবে তার উপর নির্ভর করবে ধর্মের ভয়াবহতা থেকে রক্ষার । আজ সারা বিশ্ব জুড়েই উগ্রবাদীরা ক্ষমতায় মোদী ট্রাম্প বরিস এরগোদান মুহাথির পুটিন সব এক গোত্রের । উদারপন্থীরা পিছু হটেছে --- এমতাবস্থায় যুক্তিবাদীদের একাত্ম হওয়া অত্যন্ত দরকার এই বিশ্বে ।
Comments