top of page

প্লাজমা থেরাপি WHO রিকমান্ডেট কোন চিকিৎসা নয়

প্লাজমা থেরাপীর নামে ঝুঁকিপূর্ণ প্লাজমা ট্রান্সফিউশান করে মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা বন্ধ করুন।


এক সাসপেক্টেড কোভিড রোগীর জন্য প্লাজমা থেরাপী নিয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে যা জানলাম তা রীতিমতো পিলে চমকানোর মতো।

এই বিষয়ে আমি যাদের সাথে আলোচনা করেছি, তাদের মাঝে এমন একজন ছিলেন যিনি বাংলাদেশে হাতে গোণা কিছু মানুষ যদি এই থেরাপী বুঝে থাকেন, তাদের একজন। স্যারের সাথে বিস্তারিত আলোচনার চুম্বক অংশটুকু আমি সহজ ভাষায় লিখার চেষ্টা করছি।

প্লাজমা থেরাপী দেয়ার খুব অনমনীয় দুটি শর্ত হলো,

এক, ডোনার ভাইরাসমুক্ত।

দুই, ডোনারের রক্তে সেই ভাইরাসের বিরুদ্ধে ইমিউনোগ্লোবিউলিন যথেষ্ট শক্তিতে বিদ্যমান।

একে একে দুটি শর্ত কিভাবে পূরণ করা হয় আলোচনা করছি।

ডোনারের রক্ত ভাইরাসমুক্ত প্রমাণ করার জন্য যা লাগে, সেটা হলো কনসিকিউটিভ দুটি পিসিআর নেগেটিভের পর ২৮ দিন সুস্থ জীবন যাপন করা। অর্থাৎ আপনি সিম্পটম ফ্রি বা পিসিআর নেগেটিভ মানেই আপনি ভাইরাস ফ্রি নন। ভাইরাল লোড বা ঘনত্ব আস্তে আস্তে কমতে থাকবে এবং আপনি সুস্থ হবার পরও ভাইরাস ফ্রি হতে ২৮ দিন সময় লাগতে পারে। তাই সুস্থ হবার ২৮ দিন পর থেকে আপনি নিরাপদ ডোনার। এর বাইরেও নিরাপদ ডোনার হবার জন্য আপনার রক্তের রুটিন স্ক্রিনিং এবং গ্রহীতার সাথে ক্রস ম্যাচিং আবশ্যক।

এবার আসি দ্বিতীয় শর্তে, সেটা হলো আপনি নিরাপদ ডোনার নিশ্চিত হবার পর আপনার রক্তে ভাইরাসের বিরুদ্ধে ইমিউনোগ্লোবিনের শক্তি মাত্রা দেখা হবে, সহজ ভাষায় যাকে বলে এন্ডিবডি টাইটার।

স্যার আমাকে এটাও বললেন, আমি যদি ইলিজিবল রেডি ডোনার নিয়ে আসি, তবে উনি আমাকে প্লাজমা থেরাপীর পুরো সেট আপ বিনামূল্যে ব্যবহার করতে দিবেন।

এরপর শুরু হলো ডোনার খোঁজা। রোগীর অভিভাবকগণ একজন পেয়ে গেলেন। আমি তাড়াতাড়ি তার ফোন নাম্বার নিয়ে কথা বললাম।

কথা বলে জানতে পারলাম ডোনার ভদ্রলোক চার সপ্তাহ আগে পজেটিভ হয়েছিলেন, আর বারো দিন আগে তার কোভিড পিসিআর নেগেটিভ আসে। যেহেতু তার সিম্পটম চলে গিয়েছিলো, তিনি আর দ্বিতীয়বার নেগেটিভের জন্য টেস্ট করাননি।

কথা বলেই আমি বুঝে গেলাম, উনি নিরাপদ ডোনার না। মাত্র বারো দিন ধরে তিনি সিম্পটম ফ্রি, এর উপর টেস্টও যথেষ্ট করা হয়নি।

আমি দেরি না করে সাথে সাথে সেই স্যারকে ফোন করলাম, জানতে চাইলাম কি করবো? উনি বললেন, এখনই মানা করে দিও না। উনাকে রিপিট পিসিআর করতে দাও, নেগেটিভের পর আমরা ইন্টিবডি টাইটার করে দিবো। উনাকে রেডি করা শুরু করো। তবে রোগীর অভিভাবকদের জানিয়ে দিও, ডোনার রেডি করতে সময় লাগবে। আগামী এক সপ্তাহে যেন উনার থেকে কোনভাবে রক্ত না নেয়া হয়।

আমিও সেভাবেই রোগীর অভিভাবকদের বুঝালাম।

স্বাভাবিকভাবেই উনারা আমার কথায় আশাহত হলেন এবং ডোনারকে সরাসরি সেই প্রাইভেট হাসপাতালে পাঠিয়ে দিলেন যেখানে রোগী ভর্তি ছিলো।

আমি আসলে মানবিক কারণে উনাদের বাঁধা দিতে পারিনি। কারণ যেহেতু আমি রোগী পরিক্ষা দেখতে পারছিলাম না, তাই আমি জানি না আসলে রোগীর কন্ডিশান কেমন। রোগীর এটেন্ডেন্টদের কথায় রোগী মুমূর্ষ। তাই স্বাভাবিকভাবেই আমি সায়েন্টিফিক ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এই ভেবে বাঁধা দেইনি, যে রোগীটা যদি কাল মারা যায়, তবে আজীবন উনাদের এটা মনে হবে আমার কারণে উনারা শেষ চেষ্টাটি করতে পারেননি।

যাই হোক, সেই ডোনার সেই হাসপাতালে গেলো।

পরদিন আমি খবর নিয়ে যা জানলাম, তাতে আমি ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।

সেই প্রাইভেট হাসপাতালে কোন ধরনের রিপিট পিসিআর ছাড়াই মাত্র দুই সপ্তাহ আগের রিকভার্ড ডোনার থেকে ট্রেডিশনালি ডোনারের ব্লাড কালেক্ট করা হয় এবং সেখান থেকে সেন্ট্রিফিউজ করে প্লাজমা আলাদা করে পরদিন রোগীকে ট্রান্সফিউজ করা হয়।

এবং যেহেতু আমার হাতে শক্ত প্রমাণ নেই আর সেই হাসপাতাল এতোটাই শক্তিশালী পার্টি যাদের নাম মুখে নিলে আমার রাতের ঘুম হারাম করে দিবে।

আমি শুধু এতোটুকু বলতে চাই, যদি ২৮ দিনের আগের সুস্থ, রিপিট পিসিআর আর এন্টিবডি টাইটার ছাড়া কারও শরীরে কোভিড আক্রান্ত কারও প্লাজমা ট্রান্সফিউজ করা হয়, তার মানে তার শরীরে সরাসরি ভাইরাস ঢুকিয়ে দেয়ার মতোই।

এই কাজ শুনেছি কিছু ব্যবসায়ী সেন্টারে করা হচ্ছে।

বাকিটা আল্লাহই জানেন কি হচ্ছে আর কার কপালে কি লিখা।

তবে আপনাদের কাছে হাতজোর আবেদন, সায়েন্টিফিক এপ্রোচে না গিয়ে দয়া করে কোনকিছু সেন্টিমেন্টে করে ফেলবেন না। চিকিতসা একটা বিজ্ঞান এবং চিকিৎসক মানেই বিজ্ঞানী।

বিজ্ঞানীদের ঘাড়ের উপর যখন ব্যবসায়ীরা চড়ে বসেন, তখন ফলাফল বোধহয় খুব ভালো কিছু হয় না।

বিঃদ্রঃ প্লাজমা থেরাপি WHO রিকমান্ডেট কোন চিকিৎসা নয়। এটি একটি ট্রায়াল মাত্র।

Comments


Enjoy
Free
E-Books
on
Just Another Bangladeshi
By
Famous Writers, Scientists, and Philosophers 
click here.gif
lgbt-bangladesh.png
click here.gif

Click Here to Get  E-Books

bottom of page