top of page

বোতল ভুতঃ ২য় পর্ব

কবিতা না লিখলে নোবেল প্রাইজ পাওয়া যায় না। তুই আর কথা বলিস না তো। চুপ করে থােক। বেশি কথা বললে উনি রাগ করেন। আমি চুপ করে গেলাম। ভদ্রলোক ঢুকলেন হাতে ছোট্ট একটা হোমিওপ্যাথি, ওষুধের শিশি নিয়ে। ভূতের বাচ্চা কি উনি এর মধ্যে ভরে দেবেন? কী সর্বনাশ! বোতল একটা পাওয়া গেছে, গরম পানিতে ধুতে হবে। সময় লাগবে। আমি কিছু বলব না বলব না করেও বলে ফেললাম, এত ছোট বোতলের মধ্যে থাকবে? আমার কথায় ভদ্রলোক অত্যন্ত রেগে গেলেন। চোখ বড়বড় করে বললেন, ছোট একটা কলসির মধ্যে যদি বিশাল দৈত্য থাকতে পারে, হোমিওপ্যাথির শিশির মধ্যে ভূতের বাচ্চা থাকতে পারবে না? আমি কিছু বললাম না। ভদ্রলোক ধমকের সুরে বললেন, জবাব দাও–পারবে কী পারবে না? পারবে।

হুঁ, দ্যাটস গুড। কী নাম তোমার? হুমায়ূন। ক্লাস সিক্সে পড়? জি। রোল নাম্বারা কত? বত্ৰিশ। ক্লাসে ছাত্র কত জন? বত্ৰিশ। তার মানে পড়াশোনা কিছুই পার না? জি না। স্কুল ভালো লাগে না? জি না। রবি ঠাকুরেরও স্কুল ভালো লাগত না। তাই বলে তুমি মনে করো না যে তুমি রবি ঠাকুর। আমি মনে করি না। গুড। এখন বলে তো আমার চেহারাটা রবি ঠাকুরের মতো না? জি। মুশকিল হচ্ছে কী জানো? টাক পড়ে যাচ্ছে। টাকিওয়ালা রবীন্দ্রনাথ অসহ্য, তাই না? আমরা কিছু বললাম না। ভদ্রলোক আমাদের রেখে হোমিওপ্যাথির শিশি হতে নিয়ে উধাও হয়ে গেলেন। আমি মুনিবকে বললাম তোর এই নানা কি পাগল? না, পাগল হবে কেন? কেমন কেমন করে যেন তাকাচ্ছে। মুনির কী একটা বলতে গিয়েও থেমে গেল, কারণ ভদ্রলোক আবার এসে ঢুকেছেন। হোমিওপ্যাথি, ওষুধের শিশিতে হলুদ রঙের ধোঁয়াটে কী একটা জিনিস। সাবধানে রাখবি। মুখ গালা দিয়ে সিল করে রেখেছি। খবরদার, সিল ভাঙবি না। মাঝে মাঝে চাঁদের আলোতে রাখবি। এরা চাঁদের আলো খায়। ব্ৰহ্মপুত্রের পাড় দিয়ে বোতল হাতে নিয়ে হাঁটবি। এরা টাটকা বাতাস পছন্দ করে। আমি বললাম, বোতলের ভেতর তো বাতাস যাবে না। ভদ্রলোক কড়া গলায় বললেন, এই ছেলে তো বেশি কথা বলে। শোন ছোকরা, কথা কম বলবে। জি আচ্ছা। এখন বাড়ি চলে যাও। যাবার আগে একটা কবিতা শুনে যাও। টাটকা কবিতা। আজ বিকেলে লিখেছি। দুঘণ্টা মতো হয়েছে। এখনো বাসি হয় নি। ছঘণ্টার আগে কবিতা বাসি হয় না। শুধু গরম কালে তিন ঘণ্টাতেই বাসি হয়। আমরা চুপচাপ বসে আছি। রবি নানা পকেটে হাত দিয়ে কবিতা লেখা কাগজ বের করলেন। মাথা দুলিয়ে পড়তে শুরু করলেন– আমাদের ছোটনদী চলে বাঁকে বাঁকে

বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে।

পার হয়ে যায় গরু

পার হয় গাড়ি।

দুই ধার উঁচু তার

ঢালু তার পাড়ি। কবিতাটা আমার বেশ ভালো লাগল। তবে কেন জানি মনে হতে লাগল। আগেও পড়েছি। কবিতাটা কেমন? খুবই ভালো। ব্ৰহ্মপুত্র নিয়ে লেখা। আচ্ছা, যাও এখন, বাড়ি যাও। রাত হয়ে যাচ্ছে। ভূতের বাচ্চা নিয়ে আমরা চলে এলাম। আমার বারবার মনে হতে লাগল এটা সত্যি নয়। কোথাও মস্ত একটা ফাকি আছে। মুনিরের একটা হাত পকেটে। সেই হাতে সে নিশ্চয়ই বোতল ধরে আছে। একবার সে ক্ষীণ গলায় বলল, কেমন জানি গরম-গরম লাগছে। ব্ৰহ্মপুত্রের পাশ দিয়ে আসছি। নদীর উপর ক্ষীণ চাঁদের আলো। আমাদের কেন জানি বেশ ভয়ভয় করতে লাগল। মুনির ফিসফিস করে বলল, বোতলটার ভেতর ঐটা নড়াচড়া করছে রে। ভয় লাগছে। হুঁ। আমার কাছে দিয়ে দে। সকালবেলা নিয়ে নিবি। দিনের আলোয় আর ভয় লাগবে না। মুনির সঙ্গে সঙ্গে আমাকে শিশিটা দিয়ে দিল। প্যান্টের পকেটে রেখে দিলাম। কিছুক্ষণ পর পকেটে হাত দিয়ে দেখি সত্যি সত্যি একটু যেন গরম গরম লাগছে। বাসায় এসে ভয়াবহ দুঃসংবাদ শুনলাম। অংক স্যার নাকি সন্ধ্যার পর এসেছিলেন। আমি এখনো ফিরি নি। শুনে খুব রেগে গেছেন। বলে গেছেন আবার আসবেন। অংক স্যারের এই হচ্ছে একটা বদ অভ্যাস। হঠাৎ হঠাৎ সন্ধ্যার পর ছাত্রদের বাড়িতে উপস্থিত হন। বাজখাই গলায় বলেন, কী, পড়াশোনা হচ্ছে কেমন? দেখি পাটিগণিতটা আন তো।

Comments


Enjoy
Free
E-Books
on
Just Another Bangladeshi
By
Famous Writers, Scientists, and Philosophers 
click here.gif
lgbt-bangladesh.png
click here.gif

Click Here to Get  E-Books

bottom of page