top of page
Writer's pictureJust Another Bangladeshi

বৃষ্টির অনুপাত


হারুন ইয়াহিয়া লিখেছেন,


“পৃথিবীর মতো গ্রহের জন্য বৃষ্টি প্রকৃতপক্ষে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। মানুষসহ জীবন্ত সবকিছুর জন্য গুরুত্ব বয়ে আনা বৃষ্টির কথা কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে উল্লেখিত হয়েছে যেখানে বৃষ্টির গঠন, অনুপাত এবং প্রভাবের ব্যাপারে বাস্তব তথ্য দেয়া হয়েছে। কুরআন প্রকাশ হওয়ার সময় এই তথ্য সমূহের কোনোটাই আবিষ্কৃত হওয়া সম্ভব না হওয়াটা আমাদের কাছে জাহির করে যে কুরআন আল্লাহর বাণী। এখন, আসুন বৃষ্টি নিয়ে কুরআনে বর্ণিত তথ্য সমূহ নিয়ে আলোচনা করি। সূরা আয-যুখরুফ এর একাদশ আয়াতে [কুরআন ৪৩:১১] বৃষ্টিকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে পরিমিতভাবে বর্ষিত পানি হিসেবে। আয়াতটি: 43:11 وَ الَّذِیۡ نَزَّلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءًۢ بِقَدَرٍ ۚ فَاَنۡشَرۡنَا بِہٖ بَلۡدَۃً مَّیۡتًا ۚ کَذٰلِکَ تُخۡرَجُوۡنَ ﴿۱۱﴾ Bengali – Bayaan Foundation আর যিনি আসমান থেকে পরিমিতভাবে পানি বর্ষণ করেন। অতঃপর আমি তা দ্বারা মৃত জনপদকে সঞ্জীবিত করি। এভাবেই তোমাদেরকে বের করা হবে। আয়াতে উল্লেখিত এই ‘নির্ধারিত পরিমাণ’ এর সাথে বৃষ্টির বেশকিছু বৈশিষ্ট্যের সম্পর্ক আছে। প্রথমত, পৃথিবীতে সর্বদাই একই পরিমাণ বৃষ্টি পড়ে। এক সেকেন্ডে আনুমানিক ১৬ মিলিয়ন টন পানি পৃথিবী থেকে বাষ্পীভূত হয়। এই সংখ্যাটি এক সেকেন্ডে পৃথিবীতে পড়া পানির পরিমাণের সমান। তারমানে, একটি নির্ধারিত পরিমাণ অনুযায়ী পানি একটি সুষম চক্রের মাধ্যমে ক্রমাগত প্রবাহিত হয়। বৃষ্টির সাথে ‘নির্ধারিত পরিমাণ’ এর আরেকটি যোগসূত্র হচ্ছে বৃষ্টির ‘পড়ার গতি’। বৃষ্টি-মেঘের সর্বনিম্ন উচ্চতা ১,২০০ মিটার। এই উচ্চতা থেকে পড়া এক ফোঁটা বৃষ্টির সমান ওজন এবং আয়তনের কোনো পদার্থ ক্রমাগত গতিবৃদ্ধি করবে এবং ঘন্টায় ৫৫৮ কিলোমিটার গতিতে ভূমিতে পড়বে। অবশ্যই এমন গতিতে পড়া কোনো পদার্থ বড় ধরনের ক্ষতি করবে। বৃষ্টি যদি একইভাবে পড়ে তাহলে সকল চাষের জমি ধ্বংস হয়ে যাবে, আবাসিক এলাকা, ঘরবাড়ি, যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, প্রয়োজনীয় সতর্কতা গ্রহণ না করে মানুষ বাইরে হাঁটাচলা করতে পারবে না। এসব হিসাব ১,২০০ মিটার উপরে থাকা মেঘের জন্য, অপরদিকে ১০,০০০ মিটার উচ্চতায়ও বৃষ্টি-মেঘ আছে। এমন উচ্চতা থেকে পড়া এক ফোঁটা বৃষ্টি স্বাভাবিকভাবেই অনেক ধ্বংসাত্মক একটি গতিতে পৌঁছায়। তবে এটা সেভাবে কাজ করে না; যত উচ্চতা থেকেই পড়ুক, ভূমিতে পৌঁছানোর সময় বৃষ্টির গড় গতি ঘন্টায় ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার। এমনটা হয় তাদের বিশেষ আকার গ্রহণ করার কারণে। এই বিশেষ আকার বায়ুমণ্ডলের ঘর্ষণ প্রভাব বৃদ্ধি করে এবং ত্বরণ হ্রাস করে যখন বৃষ্টির ফোঁটা সমূহ নির্দিষ্ট গতিসীমায় পৌছায়।”

আলোচ্য আয়াতটি ইংরেজি-সহিহ ইন্টারন্যাশনালসহ একাধিক বাংলা অনুবাদের সাথে তুলে ধরছি:

43:11

وَ الَّذِیۡ نَزَّلَ مِنَ السَّمَآءِ مَآءًۢ بِقَدَرٍ ۚ فَاَنۡشَرۡنَا بِہٖ بَلۡدَۃً مَّیۡتًا ۚ کَذٰلِکَ تُخۡرَجُوۡنَ ﴿۱۱﴾

English – Sahih International

And who sends down rain from the sky in measured amounts, and We revive thereby a dead land – thus will you be brought forth –

Bengali – Bayaan Foundation

আর যিনি আসমান থেকে পরিমিতভাবে পানি বর্ষণ করেন। অতঃপর আমি তা দ্বারা মৃত জনপদকে সঞ্জীবিত করি। এভাবেই তোমাদেরকে বের করা হবে।

Bengali – Mujibur Rahman

এবং যিনি আকাশ হতে বারি বর্ষণ করেন পরিমিতভাবে। এবং আমি তদ্বারা সঞ্জীবিত করি নির্জীব ভূখন্ডকে। এভাবেই তোমাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে।

সূরা আয-যুখরুফ এর একাদশ আয়াতটিতে বলা হয়েছে আল্লাহ্ পরিমিতভাবে বৃষ্টি বর্ষণ করেন। হারুন ইয়াহিয়া এই আয়াত নিয়ে যে দাবিটি করেছেন বা ইসলামিস্টরা এই আয়াতকে কেন্দ্র করে যে কথিত বৈজ্ঞানিক মিরাকলের দাবিটি প্রচার করেন তার পুরোটাই এই আয়াতে ব্যবহৃত “পরিমিতভাবে” কথাটিকে কেন্দ্র করে। না, আয়াতটিতে “পরিমিতভাবে বর্ষিত বৃষ্টি” বলে সেটা বোঝানো হয়নি যেটা হারুন ইয়াহিয়া দাবি করেছেন। আয়াতটি দ্বারা মূলত বোঝানো হয়েছে যে, আল্লাহ্ আকাশ থেকে এমন পরিমাণে বৃষ্টি বর্ষণ করেন যে পরিমাণ চাষের জমির জন্য ভালো, তিনি এমন পরিমাণে বৃষ্টি বর্ষণ করেন যে পরিমাণের কারণে ভূমি ঠিকঠাকমতো শস্য-শ্যামল হয়, মানুষ এবং অন্যান্য জীবের জন্য উপকার হয়, মৃত জমি সজীব হয়ে ওঠে, বনাঞ্চল এবং মাঠ-ময়দান সবুজ-শ্যামল হয়ে ওঠে এবং গাছপালা ফুলে ফলে পূর্ণ হয়ে যায়, বিভিন্ন প্রকারের সুন্দর ও সুস্বাদু ফল-মূল উৎপন্ন হয়। আলোচ্য আয়াতটিতে “পরিমিতভাবে” কথাটি আল্লাহর “সঠিক বিবেচনা” এবং “ন্যায়বিচার” বা “সুবিচার” প্রকাশিত হয়। হারুন ইয়াহিয়া যা দাবি করেছেন তা একটি আয়াতের একটি অংশকে কেন্দ্র করে তার নিজস্ব অনুমান ব্যতীত কিছুই নয়। হারুন ইয়াহিয়া যা অনুমান করেছেন, আয়াতটিতে যে তাই বোঝানো হয়েছে তার প্রমাণ হারুন ইয়াহিয়া বা কোনো ইসলামিস্ট বের করতে পারবেন না।

আমি কি উদ্দেশ্যমূলকভাবে কোনো অপব্যাখ্যা দিলাম? তাহলে এবিষয়ে প্রখ্যাত তাফসীরকারক ইবনে কাসিরের তাফসীর দেখে নিন:

তিনি আকাশ হতে এমন পরিমিত পরিমাণে বৃষ্টি বর্ষণ করেন যে, তা জমির জন্যে যথেষ্ট হয়। এর ফলে ভূমি শস্য-শ্যামল হয়ে ওঠে। এই পানি মানুষ ও অন্যান্য জীবজন্তু পানও করে থাকে। এই বৃষ্টির দ্বারা মৃত ও শুষ্ক জমিকে সজীব করে তোলা হয়। শুষ্কতা সিক্ততায় পরিবর্তিত হয়। জঙ্গল ও মাঠ-ময়দান সবুজ-শ্যামল হয়ে ওঠে এবং গাছপালা ফুলে ফলে পূর্ণ হয়ে যায়। বিভিন্ন প্রকারের সুন্দর ও সুস্বাদু ফল-মূল উৎপন্ন হয়। এটাকেই আল্লাহ তা’আলা মৃতকে পুনর্জীবিত করার দলীল হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেনঃ ‘এই ভাবেই তোমাদেরকে পুনরুত্থিত করা হবে।’ কুরআন ৪৩:১১ তাফসীর ইবনে কাসির

আরও তাফসীর দেখুন:

[১] অর্থাৎ, যতটায় তোমাদের প্রয়োজন পূরণ হয়। কারণ, প্রয়োজনের কম বৃষ্টি হলে তা তোমাদের জন্য ফলপ্রসূ হত না এবং বেশী হলে তা বন্যায় পরিণত হবে, যাতে তোমাদের ডুবে যাওয়ার ও ধ্বংস হওয়ার ভয় আছে। [২] অর্থাৎ, যেভাবে বৃষ্টির পানিতে মৃত ভূমি সজীব হয়ে ওঠে, অনুরূপ কিয়ামতের দিন তোমাদেরকেও জীবিত করে কবর থেকে বের করা হবে। কুরআন ৪৩:১১ তাফসীর আহসানুল বায়ান

বৃষ্টির গঠন

হারুন ইয়াহিয়া লিখেছেন,

“বৃষ্টি কিভাবে তৈরি হয় সেটা দীর্ঘসময় ধরে মানুষের কাছে বড় একটি রহস্য হয়ে ছিলো। এয়ার রাডার আবিষ্কৃত হওয়ার পরই এটা জানা গেছে যে কোন পর্যায় সমূহের মধ্যে দিয়ে বৃষ্টি গঠিত হয়। বৃষ্টি তিনটি পর্যায়ের মধ্যে দিয়ে গঠিত হয়: প্রথমে বৃষ্টির কাঁচামাল বাতাসে উদিত হয়। তারপর, মেঘ গঠিত হয় এবং শেষে, বৃষ্টি ফোঁটার আবির্ভাব ঘটে। শতশতবছর পূর্বেই এই পর্যায় সমূহ কুরআনে বর্ণিত হয়েছে যেখানে বৃষ্টির গঠন সম্পর্কে যথাযথ তথ্য দেয়া হয়েছে; 30:48 اَللّٰہُ الَّذِیۡ یُرۡسِلُ الرِّیٰحَ فَتُثِیۡرُ سَحَابًا فَیَبۡسُطُہٗ فِی السَّمَآءِ کَیۡفَ یَشَآءُ وَ یَجۡعَلُہٗ کِسَفًا فَتَرَی الۡوَدۡقَ یَخۡرُجُ مِنۡ خِلٰلِہٖ ۚ فَاِذَاۤ اَصَابَ بِہٖ مَنۡ یَّشَآءُ مِنۡ عِبَادِہٖۤ اِذَا ہُمۡ یَسۡتَبۡشِرُوۡنَ ﴿ۚ۴۸﴾ Bengali – Bayaan Foundation আল্লাহ, যিনি বাতাস প্রেরণ করেন ফলে তা মেঘমালাকে ধাওয়া করে; অতঃপর তিনি মেঘমালাকে যেমন ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তাকে খন্ড- বিখন্ড করে দেন, ফলে তুমি দেখতে পাও, তার মধ্য থেকে নির্গত হয় বারিধারা। অতঃপর যখন তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাদের উপর ইচ্ছা বারি বর্ষণ করেন, তখন তারা হয় আনন্দিত।”

এই আয়াতটি কেবল আল্লাহর শক্তির প্রশংসা করে বলছে যে, মেঘমালা যেখানেই থাকুক না কেন আল্লাহর প্রেরিত বায়ু তা বয়ে নিয়ে যায় এবং আল্লাহ্ নিজের খুশিমতো মেঘমালাকে আকাশে ছড়িয়ে দেন, তারপর তিনি মেঘমালাকে বিভিন্ন খণ্ডে ভাগ করেন এবং সেই বিভিন্ন খণ্ডে ভাগ হওয়া মেঘ থেকেই বৃষ্টি বর্ষিত হয়। এই আয়াতটি আমাদের কেবল দুটো বিষয়ই জানাতে চায়: ১) আল্লাহ্ বাতাসের মাধ্যমে মেঘ এক স্থান থেকে আরেক স্থানে নেন, ২) মেঘ থেকে বৃষ্টি হয়। এখানে বৈজ্ঞানিক মিরাকলের কিছুই নেই। সপ্তম শতাব্দীর একজন মানুষের জন্য এটা পর্যবেক্ষণ করা এবং অনুধাবন করা কোনোভাবেই কোনো কঠিন কাজ ছিলো না যে, বাতাসের ফলে মেঘ একস্থান থেকে আরেক স্থানে যায়, বা মেঘ খণ্ডে খণ্ডে ভাগ হয়, বা মেঘ থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হয়। এমনটা অনুমান করার কোনো সুযোগ নেই যে আয়াতটি প্রকাশিত হয়েছিলো মানবসভ্যতাকে পানিচক্র শেখাতে। কেননা, পানি সর্বদাই কিভাবে পুনর্ব্যবহৃত হয় তার বর্ণনা খুব সহজেই উল্লেখ করা যেতো।

হারুন ইয়াহিয়া লিখেছেন,

“প্রথম পর্যায়: “আল্লাহ, যিনি বাতাস প্রেরণ করেন … [“] সমুদ্র ফেনা দ্বারা গঠিত অগণিত বায়ু বুদবুদ ক্রমাগত বিস্ফোরিত হয় এবং পানি কণা সমূহকে আকাশের দিকে নিক্ষিপ্ত করে। লবণাক্ত এই কণা সমূহ বাতাসের মাধ্যমে বাহিত হয় এবং বায়ুমণ্ডলের উপরের অংশে যায়। অ্যারোসল নামক এই কণা সমূহ মেঘ গঠন করে নিজেদের আশেপাশে থাকা জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করার মাধ্যমে, যা “ওয়াটার ট্র‍্যাপ” নামক একটি মেকানিজমের মাধ্যমে অতি ক্ষুদ্র ফোঁটা হিসেবে আবার সমুদ্র সমূহ থেকে ঊর্ধ্বগামী হয়।”

হারুন ইয়াহিয়া যা বর্ণনা করেছেন তার সাথে কুরআনের আয়াতের কোনো মিল নেই। হারুন ইয়াহিয়া যা বর্ণনা করেছেন কুরআন যে তাই নির্দেশ করছে তার প্রমাণ হারুন ইয়াহিয়া কিংবা অন্য যেকোনো ইসলামিস্ট দিতে পারবেন না। আলোচ্য আয়াতটি কেবল বলছে, আল্লাহ্ বাতাস প্রেরণ করেন, যা মেঘ একস্থান থেকে আরেক স্থানে নিয়ে যায় এবং মেঘের প্রসার ঘটায়। এখানে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় না যা সপ্তম শতাব্দীর বিজ্ঞানের জন্য বৈজ্ঞানিক মিরাকল।

হারুন ইয়াহিয়া লিখেছেন,

“দ্বিতীয় পর্যায়: “অতঃপর তিনি মেঘমালাকে যেমন ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং তাকে খন্ড- বিখন্ড করে দেন … [“] মেঘ জলীয়বাষ্প থেকে গঠিত হয় যা বাতাসের সল্ট ক্রিস্টাল বা ডাস্ট পার্টিকল সমূহের আশেপাশে ঘনীভূত হয়। কারণ এসবে থাকা পানির ফোঁটা খুবই সামান্য। মেঘ বাতাসে ভেসে থাকে এবং আকাশে ছড়িয়ে পড়ে। সেজন্য আকাশ মেঘে আবৃত হয়ে যায়।”

আবারও একই কথা বলতে হচ্ছে, আলোচ্য আয়াতটি কেবল বলছে, আল্লাহ্ মেঘকে একস্থান থেকে আরেক স্থানে নেন, প্রসার ঘটান এবং খণ্ডে খণ্ডে ভাগ করেন। এখানে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় না যা সপ্তম শতাব্দীর বিজ্ঞানের জন্য বৈজ্ঞানিক মিরাকল। বাতাস যে মেঘের ওপর প্রভাব ফেলে সেটা জানার জন্য কোনো ঈশ্বরের দূত প্রয়োজন নেই।

হারুন ইয়াহিয়া লিখেছেন,

“তৃতীয় পর্যায়: “এবং তুমি দেখতে পাও ওটা হতে নির্গত হয় বারিধারা … [“] সল্ট ক্রিস্টাল এবং ডাস্ট পার্টিকল সমূহকে ঘিরে থাকা পানি কণা সমূহ ঘন হয় এবং বৃষ্টি ফোঁটা গঠন করে। তাই যেসকল ফোঁটা বায়ু থেকে ভারী হয়ে যায় সেসকল ফোঁটা মেঘ থেকে প্রস্থান করে এবং বৃষ্টি হিসেবে ভূমিতে পড়তে শুরু করে।”

আয়াতটি কেবল বলছে, বৃষ্টি মেঘ থেকে আসে। এখানে এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায় না যা সপ্তম শতাব্দীর বিজ্ঞানের জন্য বৈজ্ঞানিক মিরাকল।

মৃত ভূ-খণ্ড কে জীবিত করা

হারুন ইয়াহিয়া লিখেছেন,

“কুরআনের বেশকিছু আয়াত বৃষ্টির একটি বিশেষ ক্রিয়ার দিকে আমাদের মনোযোগ আহবান করে, তা হল ‘মৃত জমিতে জীবন দান করা’। এটা একটি আয়াতে বর্ণিত হয়েছে: 25:48 وَ ہُوَ الَّذِیۡۤ اَرۡسَلَ الرِّیٰحَ بُشۡرًۢا بَیۡنَ یَدَیۡ رَحۡمَتِہٖ ۚ وَ اَنۡزَلۡنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً طَہُوۡرًا ﴿ۙ۴۸﴾ Bengali – Bayaan Foundation আর তিনিই তাঁর রহমতের প্রাক্কালে সুসংবাদস্বরূপ বায়ু পাঠিয়েছেন এবং আমি আকাশ থেকে পবিত্র পানি বর্ষণ করেছি, 25:49 لِّنُحۡیِۦَ بِہٖ بَلۡدَۃً مَّیۡتًا وَّ نُسۡقِیَہٗ مِمَّا خَلَقۡنَاۤ اَنۡعَامًا وَّ اَنَاسِیَّ کَثِیۡرًا ﴿۴۹﴾ Bengali – Bayaan Foundation যাতে তা দ্বারা মৃত ভূ-খন্ডকে জীবিত করি এবং আমি যে সকল জীবজন্তু ও মানুষ সৃষ্টি করেছি, তার মধ্য থেকে অনেককে তা পান করাই। পানি দিয়ে পৃথিবীকে সাজানোর পাশাপাশি বৃষ্টি উর্বরতায়ও প্রভাব রাখে। সমুদ্র সমূহ থেকে বাষ্পীভূত হয়ে মেঘে পৌঁছানো বৃষ্টি ফোঁটা সমূহ নির্দিষ্ট পদার্থ সমূহ ধারণ করে যা একটি মৃত জমিতে জীবন দান করে। এই জীবন দানকারী ফোঁটা সমূহকে ‘পৃষ্ঠ-টান ফোঁটা’ বলে। এই পৃষ্ঠ-টান ফোঁটা সমূহ সমুদ্র পৃষ্ঠের শীর্ষস্থানের ওপর গঠিত হয়, যাকে জীববিজ্ঞানীরা মাইক্রো লেয়ার বলেন। এই লেয়ার বা স্তরে আণুবীক্ষণিক জলজ উদ্ভিদ এবং জুপ্লানকটনের দূষণ থেকে ঘটিত অনেক জৈব উচ্ছিষ্ট থাকে।”

এখানেও এই কথাটি বলতে হয় যে, হারুন ইয়াহিয়া যা বর্ণনা করেছেন আয়াতটি দ্বারা যে তাই বোঝানো হয়েছে বা হারুন ইয়াহিয়া যেসকল তথ্য সমূহ দিয়েছেন আয়াতটি যে সেসকল তথ্য সমূহকেই নির্দেশ করে তার কোনো প্রমাণ নেই। কুরআন বলছে না যে, বৃষ্টি ফোঁটা সার ধারণ করে। আয়াতটি কেবল এতটুকুই বলে যে, আল্লাহ বৃষ্টি বর্ষিত করেন, সেই বৃষ্টির ফলে মৃত প্রায় ভূ-খণ্ডে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে এবং মানুষসহ অন্যান্য জীবেরা তা পান করতে পারে। এখানে খুব পরিষ্কারভাবেই বোঝানো হয়েছে যে, পানির অভাবে বা অনুপস্থিতিতে একটি ভূ-খণ্ডের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়, মরুভূমিতে পরিণত হয়ে যায়, তাতে গাছপালা তরু-লতা কিছুই টিকে থাকতে পারে না, আল্লাহ্ বৃষ্টি বর্ষণ করলেই সেই ভূ-খণ্ড প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে, তাতে গাছপালা জন্ম নেয় এবং সেসব ভালভাবে বেড়ে ওঠে। এই সহজ কথাটার মধ্যে এমন কোনো তথ্য নেই যা সপ্তম শতাব্দীর জন্য বৈজ্ঞানিক মিরাকল হতে পারে। বৃষ্টি যে পানির অভাবে মৃতপ্রায় ভূ-খণ্ডের ওপর একটা প্রভাব ফেলে সেটা না বোঝার মতো নির্বোধ সপ্তম শতাব্দীর মানুষরা ছিলো না।

হারুন ইয়াহিয়া লিখেছেন,

“এদের মধ্যে কিছু উচ্ছিষ্ট এদের মধ্যে থাকা সমুদ্রের পানিতে দূর্লভ কিছু উপাদান, উদাহরণস্বরূপ: ফসফরাস, ম্যাগনেশিয়াম, পটাসিয়াম এবং তামা, দস্তা, কোবল্ট ও সীসার মতো ভারী কিছু ধাতু সংগ্রহ করে। বাতাসের মাধ্যমে এসব ‘সার’ ফোঁটা সমূহ আকাশে ওঠে এবং কিছু সময়ের পর তারা বৃষ্টি ফোঁটার অভ্যন্তরে থেকে ভূমিতে পড়ে। পৃথিবীতে থাকা বীজ এবং উদ্ভিদ এসব বৃষ্টি ফোঁটা থেকে তাদের বিকাশের জন্য প্রচুর ধাতব লবণ এবং অপরিহার্য উপাদান খুঁজে পায়। এই ঘটনাটি কুরআনের এই আয়াতের মাধ্যমে জানানো হয়েছে: 50:9 وَ نَزَّلۡنَا مِنَ السَّمَآءِ مَآءً مُّبٰرَکًا فَاَنۡۢبَتۡنَا بِہٖ جَنّٰتٍ وَّ حَبَّ الۡحَصِیۡدِ ۙ﴿۹﴾ Bengali – Bayaan Foundation আর আমি আসমান থেকে বরকতময় পানি নাযিল করেছি। অতঃপর তা দ্বারা আমি উৎপন্ন করি বাগ-বাগিচা ও কর্তনযোগ্য শস্যদানা।”

এখানেও আমাকে এই কথাটিই বলতে হবে যে, হারুন ইয়াহিয়া যা বর্ণনা করেছেন আয়াতটি দ্বারা যে তাই বোঝানো হয়েছে বা হারুন ইয়াহিয়া যেসকল তথ্য সমূহ দিয়েছেন আয়াতটি যে সেসকল তথ্য সমূহকেই নির্দেশ করে তার কোনো প্রমাণ নেই। আলোচ্য আয়াতটি কেবল এই ধারণাই প্রকাশ করছে যে, “পানি ব্যতীত গাছপালা মারা যায়”। সপ্তম শতাব্দীর একজন মানুষের জন্য বৃষ্টিকে ‘কল্যাণকর’ বা ‘বরকতময়’ বলে মনে করায় কোনো অলৌকিকতা নেই। কেননা সপ্তম শতাব্দীর মানুষরা এতোটা নির্বোধ ছিলেন না যে তারা এটা বুঝার সামর্থ্য রাখতেন না যে, “পানি ব্যতীত গাছপালা মারা যায়” বা “পানি ব্যতীত মানুষ, অন্যান্য প্রাণী এবং গাছপালা কেউই টিকে থাকতে পারবে না” আর সেজন্য “পানি কল্যাণকর”।

উপসংহার

হারুন ইয়াহিয়া যেসকল আয়াত উপস্থাপন করে কথিত কুরআনের বৈজ্ঞানিক মিরাকল আবিষ্কার করেছেন, সেসব আয়াত খুব সহজেই পর্যবেক্ষণ করে বোঝা যায় এমন তথ্যই দেয়। এমন কোনো তথ্য দেয় না বা তথ্যের ইংগিত পাওয়া যায় না যা সপ্তম শতাব্দীর একজন মানুষের জন্য জানা বা বোঝা অসাধ্য ব্যাপার। কুরআনের সহজ কথার ওপর হারুন ইয়াহিয়ার আধুনিক বিজ্ঞানের আবিষ্কৃত তথ্য সমূহ আরোপ করা হাস্যকর এবং অবশ্যই উদ্দেশ্যমূলক।

0 comments

Recent Posts

See All

Comentarios


Enjoy
Free
E-Books
on
Just Another Bangladeshi
By
Famous Writers, Scientists, and Philosophers 
click here.gif
lgbt-bangladesh.png
click here.gif

Click Here to Get  E-Books

bottom of page