বন্ধুতে চাটূকারি
বন্ধুত্ব কতটা মেকি হতে পারে, তা আমি বুঝেছি বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে। কারো সাথে কিচ্ছু মিলবে না, তবু গলায় গলা মেলানো একটা ভাব নিয়ে চলতে হয়। সামনাসামনি বিস্তর খাতির দেখালেও অন্তরের টান খুব সামান্য। টান থাকবে কী করে? বন্ধুত্বের ভিত্তিটাই তো নড়বড়ে। যার সাথে জীবন দর্শন মিলে যায়, সে হয়তো গাজার আসরেই বেশি সময় দিচ্ছে। যার সাথে ডেইলি রুটিন মিলে যায়, সে হয়তো রুচির দিক দিয়ে ভিন্ন জগতের বাসিন্দা। যার সাথে জীবন দর্শন, রুচি সব মিলে যায়, সে হয়তো প্রেম করতে করতেই দিন পার করে দিচ্ছে। যার সাথে কোনো পার্থক্য নেই, তার সাথে হয়তো দেখাই হচ্ছে না ঠিকমত। এত এত বৈসাদৃশ্য, তবু আমরা আমলে নিই না। আড্ডায় হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাই। গ্রুপ স্টাডি করি পরম নির্ভরতায়। ক্লাসে পাশাপাশি বসি। সেলফি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করি। আহা কী চমৎকার ফ্রেন্ড সার্কেল!
কিন্তু একটা 'কিন্তু' মনের মধ্যে ঘুরপাক খায়। যখন কল্পনা করি ৫/১০ বছর পরের জীবন; তখন বউ বাচ্চা ওয়ালা সেই জীবনে আমি এই চমৎকার ফ্রেন্ড সার্কেলের ছিটেফোঁটাও খুঁজে পাই না। কে কোথায় থাকবে জানা হবে না। রাস্তায় যদি কখনো দেখা হয়ে যায়, মানিব্যাগ থেকে একটা কার্ড বের করে বন্ধু বলবে, "আরে দোস্ত, কী খবর! আমার কার্ড রাখ। অফিসে আয় একদিন। আড্ডা দেয়া যাবে।" সেও জানবে, আমিও জানবো, কী চমৎকার অভিনয় করলাম দুজন! কার্ডটা শুধুই আমার মানিব্যাগের ওজন বাড়াবে। আর কিছু নয়।
কোথায় যেন পড়েছিলাম, যদি কোনো বন্ধুত্ব ৭ বছরের বেশি টিকে যায়, তবে সেটা আর ভাঙে না। ভার্সিটি লাইফ তো ৪/৫ বছরের। তারপরই অভিযোগহীন যোগাযোগহীনতা। সংশয় তাই রয়েই যায়। স্কুল লাইফের বন্ধুগুলো এই সংখ্যাতত্ত্বে উৎরে যায়। ৭ বছর কেন, নিয়মিত যোগাযোগে কেটেছে ইতোমধ্যে ৮/১০ বছর! কারণ এই বন্ধুত্ব গুলো আবেগের। এখানে কোনো স্বার্থ ছিল না, কোনো জবরদস্তি ছিল না। যার সাথে সব মিলে গেছে, যার সাথে সময় কাটাতে ভালো লেগেছে, তার সাথেই বন্ধুত্ব হয়েছে। সিজিপিএর মত উচ্চাভিলাষী আকাঙ্ক্ষা ছিল না কারো। এদের সাথেও হয়তো বিবাহিত জীবনে খুব বেশি যোগাযোগ থাকবে না। তবে আমি এদের মিস করবো। খুব মিস করবো। বলা যায় না, অফিস ফেরত কোনো এক ক্লান্ত সন্ধ্যায় কলিং বেলের আওয়াজে দরজা খুলে হয়তো দেখবো, বন্ধু তার বৌ বাচ্চা নিয়ে হাজির! আমি কিচ্ছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে থেকে বলবো, "আরে শালা! কেমনে কী!!!" .
Commentaires