ভূত নেই, তবুও তেনারা ঘুরে ফিরে আসে
ভূত নেই, তবুও তেনারা ঘুরে ফিরে আসে। কখনো গল্পগাঁথায়, কখনো সিনেমা - সিরিয়ালে তো কখনো আবার অন্ধবিশ্বাসীদের আলোচনায়। আমজনতা অন্ধবিশ্বাস কেই বেশি বিশ্বাস করেন, তাই তো লজিক কম, ম্যাজিক বেশি চলে। আর এটাও সত্যি আমজনতা ( যাঁদের ভেতরে উচ্চশিক্ষিত অনেকে) যুক্তি-বুদ্ধি কে সব বাক্সবন্দী করে গুজবে বেশি আস্থা রাখেন।
গত কয়েকদিন ধরে এমনই একটি গুজবের আগুন দ্রুত ছড়িয়েছ দাবানল এর মতন। ঘটনাটা উত্তর ২৪ পরগণার অশোকনগরের জে.এন.পি. কলেজের। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবী রাত ক্রমশ গভীর হলে নাকি হোস্টেল থেকে একজন মহিলার আর্তনাদ ভেসে আসছে, তারপর গোঙানির আওয়াজ। দিনের বেলায় সেখানে গেলেও নাকি গায়ে কাঁটা দিচ্ছে অনেকের। মিডিয়ার মাধ্যমে খবরটা এখন আমজনতার হেঁসেল পর্যন্ত পৌছে গেছে এই কোরোনা আবহেও। সেখানকার এলাকাবাসীদের অনেকের ই নাকি ভূতের ভয়ে রাতের ঘুম উড়ে গেছে।
এতো গেলো ভূত-প্রেত-জ্বীন- ইত্যাদিতে বিশ্বাসীদের কথা। কিন্ত বাঁধ সেধেছেন মুক্তমনা, যুক্তিবাদীরা। যুক্তিবাদীদের স্পষ্ট দাবী, এইসব ভূত টুত সব গপ্পো এবং মানুষের মনের ভ্রম এবং মনোজগৎ এর অলীক কল্পনা যার বাস্তবে কোনো প্রমাণ ই নেই। কারণ বিজ্ঞান কোনো আত্মা বা Soul এর অস্তিত্বকে স্বীকারে ই করেনা।
কারন,বিজ্ঞানের দরবারে কোনো কিছু তখনই প্রতিষ্ঠিত হয় যখন সেটা বিজ্ঞানের - পরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ এবং সিদ্ধান্ত এই তিন সহজ - সরল ধাপে উপনিত হয় বা সাফল্য ( পাশ) লাভ করে। এমনটা আগেও হয়েছে কল্পিত প্রস্তাবনা বা হাইপোথিসিস। অর্থাৎ কোনো ঘটে যাওয়া ঘটনা দেখে যদি মনে হয় ( সন্দেহ জনক কিছু রয়েছে) গবেষণা চালানো প্রয়োজন, তাকেই বলা হয় ' হাইপোথিসিস '। এখান থেকেই বিজ্ঞানের ঘরে প্রবেশ করার পক্রিয়া শুরু হয়। আত্মা নামক বিষয় টা এখনও পর্যন্ত হাইপোথিসিস এ পা টাই রাখতে পারেনি, বাকি তিন ধাপ তো অনেক দুরের কথা। এখনও পর্যন্ত এমন কিছু ঘটনা ঘটেনি যা ইঙ্গিত করে অলৌকিক কিংবা আত্মার অস্তিত্ব কে। এখনও সেই রকম কিছু ঘটেনি যার জন্য বিজ্ঞান পরীক্ষা এবং পর্যবেক্ষণ চালিয়ে দেখবে,তারপর আসবে একটা সিদ্ধান্তে। আত্মার কোনো কার্যকলাপ এখনও পর্যন্ত বিজ্ঞান কে প্রভাবিত করতেই পারেনি। তাই বিজ্ঞান আজও মাথা ঘামায়নি যে আত্মার অস্তিত্ব আদৌ আছে, নাকি নেই। তাই আত্মা,অলৌকিক ইত্যাদি সবটাই শুধুমাত্র মনোজগৎ এর কল্পনা ছাড়া অন্য কিছুই নয়।
ফিরি অশোকনগর এর ঘটনাটায়। বিজ্ঞানমনষ্ক, যুক্তিবাদী মানুষের দাবী, ঐ কলেজে রাতের অন্ধকারে নির্ঘাৎ হানা দিচ্ছে কোনো জ্যান্ত ভূত। হয়তো রাতের অন্ধকারে সেখানে কোনো অসামাজিক কাজকর্ম কে আড়াল করতেই ভূতের গল্প ফাঁদা হয়েছে। প্রকৃত সত্যানুসন্ধানে এই রহস্য ফাঁস হবে।
এই ফাঁকে জানিয়ে রাখি, অনেকেই আত্মার অস্তিত্ব প্রমাণ করতে প্রেতচক্র বা প্ল্যানচেট এর উদাহরণ টেনে আনেন। সম্প্রতি অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত এর আত্মার সাথে নাকি কথা বলেছেন বলে দাবী করায় স্টিভ হাফ এর কয়েকটা ভিডিও ভাইরাল ইতিমধ্যে। অথচ আত্মার অস্তিত্বই যেখানে নেই, সেখানে প্ল্যানচেটে আত্মাকে ডেকে আনা টা অন্ধবিশ্বাসীদের খাওয়ানোর জন্য আদর্শ এবং বিড়াট মাপের ধাপ্প ছাড়া অন্য কিছু নয়।
জানিয়ে রাখি, " ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি " র সভাপতি এবং বিশিষ্ট লেখক, প্রবীর ঘোষ এর খোলা চ্যালেঞ্জ, কোনো ব্যাক্তি বিনা কৌশলে কিংবা প্রতারণা ছাড়া যদি প্ল্যানচেটে আত্মাকে আনা অথবা ভূত-প্রেত-জ্বীন- ইত্যাদির অস্তিত্ব প্রমাণ করতে সক্ষম হন, তাহলে প্রবীর বাবু সেই ব্যাক্তিকে দেবেন ভারতীয় মুদ্রায় ৫০ লক্ষ টাকা পুরস্কার।
গভীর দুঃখের সাথে জানাই। আজ পর্যন্ত কেউই প্রবীর বাবুর এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার সৎ সাহস দেখান নি। যারাই চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন তাঁদেরই বুজরুকি ফাঁস হয়েছে। বুজরুকি ফাঁসের সেই সব খবরগুলো প্রবীর বাবুর বিভিন্ন বইতেই লেখা রয়েছে।
আসলে ভূত থাকে আমাদের মনের অন্ধকার জগৎ এ। সেখানে জ্ঞানের আলো জ্বলালেই তেনারা ভ্যানিশ।
Comentarios