top of page
Writer's pictureJust Another Bangladeshi

ভণ্ডের ভগবান




আমরা পারি। শুধু আমরাই পারি। বীর, তেজস্বী, অসাধারণ, রাজনীতিবিদ, দূরদর্শী, ধর্ম রক্ষাকারী ও দুস্কৃতির বিনাশকারী হিসাবে যার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, যিনি নিজে সারা জীবনের বেশীর ভাগ সময় লড়াই আর যুদ্ধ করে কাটিয়েছেন,একের পর এক দূর্বৃত্তকে বিনাশ করেছেন, গত ৫০০ বছর ধরে তার লীলাকে এমন ভাবে আমরা কীর্তন করতে শুরু করলাম যাতে বর্তমান যুবসমাজ ভাবে গাছের ডালে বসে পা দোলাতে দোলাতে মেয়েদের চান করা দেখা আর মেয়েদের সঙ্গে ফস্টিনস্টি করা ছাড়া তার কোনও কাজ ছিল না।


জীবন যার বীরত্বময় আর যুদ্ধময়, আমাদের পাল্লায় পড়ে সেই জীবন হয়ে উঠল প্রেমময়, লীলাময় আর নারীময়। সারা জীবনে একটা নারীকে, নিজের স্ত্রীকে যিনি ঠিকমত সময় দিতে পারেননি তাকে ষোল শত নারীর সঙ্গে নাচিয়ে দিলাম আমরা। তিনি নিজে কখনো কাউকে খোল -করতাল নিয়ে নাচগান করার পরামর্শ দেননি অথচ সেটাকেই মূখ্য করে আমরা কাঁদতে লাগলাম। সেই যে কান্নার শুরু সেই কান্না আজও সমানে চলছে। অলীক অবাস্তব আর যুক্তিহীন কল্পনা মানুষকে কাঁদতে শেখায়।


আমরা ভণ্ড। তাই ভক্তের ভগবান যখন ভণ্ডের ভগবান হয়ে ওঠে তখন কেঁদেই কেটে যায়। আমরা কাপুরুষ

এবং দূর্বল চিত্ত। যৌনতা আমাদের মজ্জায় মজ্জায়। ভক্তের ভগবানকেও আমরা আমাদের মত বানিয়ে নিয়েছি। আমাদের ভণ্ডামির পাহাড় প্রমাণ ছাই-এর আড়ালে চাপা পড়ে গেছে ভগবান। আর কিছুতেই মাথা তুলতে পারছে না।


আমি কেষ্টঠাকুর, নাড়ুগোপাল বা গোপালঠাকুর নয় — আমি শ্রীকৃষ্ণের কথা বলছি। ভারতের ভগবানকুলের অন্যতম চরিত্র তিনি। অসাধারণ বীর এবং বাগ্নী। দূরদৃষ্টি সম্পন্ন রাজনৈতিক নেতা। অত্যন্ত যুক্তিবাদী। জীবন ও সমাজ কেমন হবে তাঁর বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছে গীতায়। প্রচণ্ড অস্থির সময়েও কি করে মাথা ঠান্ডা রাখতে হয় তা বলেছেন কুরুক্ষেত্রে দাঁড়িয়ে। তার এই চরিত্র আমাদের পছন্দ হয়নি। ভক্ত নয় বলে হয়নি। আমরা ভণ্ড। ষণ্ড মানে যদি ষাঁড় হয়, তাহলে

ভণ্ড মানে ভাঁড় হতে পারে। কৃষ্ণকে নিয়ে আমাদের সেই ভণ্ডামো বা ভাঁড়ামো চলছে দীর্ঘদিন ধরে।


আমরা জানি ভাবনা আমাদের প্রভাবিত করে । কেউ যদি সর্বদা ভাবে আমি চোর হব সে চোর হবেই। কেউ যদি ভাবে আমি ভালো হবো, আমাকে ভালো হতে হবে তাহলে সে ভালো হবেই। গত ৬০০ বছর ধরে একদল মানুষ ভাবছেন জগতে একমাত্র কৃষ্ণই পুরুষ আর সব নারী এরকম ভাবতে ভাবতে গোটা ভারতের বেশীর ভাগ অংশ নারীতে পরিণত হয়েছে। দেখতে শুনতে পুরুষের মতো কিন্তু পৌরষ নেই, তেজ নেই, দীর্ঘদিন ধরে ভাবছে আমরা তো কেউ পুরুষ নই কৃষ্ণ একমাত্র পুরুষ।


এরকম ভাবতে ভাবতে নিজেরাই কখন পৌরুষ হারিয়েছি সে হুঁশ নেই। পুরুষ যদি নারী হবার চেষ্টা করে তাহলে নারীও হয়না পুরুষও হয় না। এই মাঝা মাঝি লোকের ভিরে ভরে গেছে ভারতবর্ষ। চারপাশের অন্যায় সয়ে সয়ে আমাদের পিঠে ঘা। চারপাশে ভন ভন করে বেড়াচ্ছে বিষাক্ত মাছি। তবুও আমাদের চিন্তা নেই চেতনা নেই। আমরা শুধু কৃষ্ণের নামে হাউ মাউ করে কাঁদছি। ঠাকুরের সামনে দাঁড়িয়ে সেকি হাপুস নয়নে কান্না, দুহাত তুলে কাঁদছি। সেই সুযোগে আমাদের কাপড় খুলে নিয়ে পালাচ্ছে দুস্কৃতিকারিরা।


ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্মস্থানের অর্ধেকটাই দুস্কৃতিরা দখল করে নিয়েছে। তবুও আমরা কাঁদছি, ভাবছি কৃষ্ণ বড় খুশি হচ্ছেন। কৃষ্ণ জানেন এরা কাপুরুষ। এদের দিয়ে কিচ্ছু হবে না। তিনি মুচকি হাসছেন এদের ভণ্ডামো আর নপুংসতা দেখে।


এইসব কৃষ্ণ ভক্তরা মিথ্যার জাহাজ। বীর আর সাহসী কৃষ্ণের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত পুরো জীবনটাকেই ভণ্ডামি দিয়ে আর মিথ্যা দিয়ে চাপা দিয়েছেন। যে কোন টিকিধারী নামাবলীধারী কপালে রস তিলকধারী কৃষ্ণ ভক্তকে জিজ্ঞাসা করুন — আচ্ছা পৃথিবীতে কৃষ্ণ জন্মেছিলেন কেন —অমনি চটপট জবাব কেন লীলাময় এসেছেন লীলা করার জন্য। এই চুরান্ত মিথ্যাটি বহুবার বহুজনকে বলতে শুনেছি। প্রেমাবতার প্রেম ছাড়াবার জন্য অবতীর্ণ হয়েছেন।


মানুষও গোগ্রাসে গেলে এসব, অথচ শ্রীকৃষ্ণ নিজে কি বলেছেন তা আমরা পাত্তাই দিই না। কেন ভগবান জন্ম নেন স্পষ্ট করে বলা আছে গীতায়। শ্রীকৃষ্ণ নিজে বলেছেন — দুস্কৃতির বিনাশ আর সাধুদের পরিত্রান করার জন্য তিনি জন্ম নেন। অধর্ম নাশ করে ধর্ম সংস্থাপন করার জন্য তিনি আসেন। কোন ভণ্ডামো নেই, কোন লুকোছাপা নেই, শ্রীকৃষ্ণ যা বলেছেন তা স্পষ্ট বলেছেন, বলেছেন বীর অর্জুনকে, তাহলে কোন বৈষ্ণব ভক্তের কানে কানে তিনি বলতে গিয়েছিলেন যে, আমি লীলা করতে আসি। অথচ কৃষ্ণের এ কথাটা আমরা প্রচার করিনি কারণ দুস্কৃতি বিনাশ বা ধর্ম সংস্থাপন করতে গেলে সাহস দরকার পৌরুষ দরকার। তার চেয়ে লীলা অনেক সহজ। রস আছে, তাই বার বার লীলার মতো মিথ্যাকথা আওড়ে চলি। চলবে...........।

Recent Posts

See All
Enjoy
Free
E-Books
on
Just Another Bangladeshi
By
Famous Writers, Scientists, and Philosophers 
click here.gif
click here.gif

Click Here to Get  E-Books

lgbt-bangladesh.png
bottom of page