top of page

মুর্তি পূজা সম্পর্কে বেদ কি বলে? ঈশ্বর সাকার না নিরাকার?

মানুষ সাধারণত নিজের অভিজ্ঞতা ও গুণ দিয়ে সব কিছু বিচার করে। মানুষ যেহেতু সাকার ও নিরাকার দুই বিপরীত বিষয়ের ধারণা রাখে তাই সহজে একই বিষয়কে সে উভয় গুণ সম্পন্ন ধারণা করতে পারে না। বাতাস যেমন কখনো সাকার আবার নিরাকার, এমনকি জল বায়ুতে মিশ্রিত অবস্থায় নিরাকার (সাধারণ চোখে অদৃশ্য) আবার সমুদ্রে জল তরল এবং মেরু অঞ্চলে একই জল বরফ তেমনি ঈশ্বর যেমন অরূপ তেমনি ঈশ্বর স্বরূপ। এই অরূপ-স্বরূপ ও সাকার-নিরাকার উভয়বিদ্ কথা বেদে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বেদে সরাসরি প্রতিমা পূজার প্রসঙ্গ নেই এমনকি বিরোধিতাও নেই।



ন তস্য প্রতিমা অস্তি যস্য নাম মহদ্ যশঃ। হিরণ্যগর্ভ ইত্যেষ মা মা হিংসীদিত্যেষা যস্মান্ন জাত ইত্যেষঃ।।যজুর্বেদ, ৩২/৩ অনুবাদ: মহতী কীর্তিতেই যাঁহার নামের স্মরণ হয়, যাঁহার গর্ভে জ্যোতিষ্কমণ্ডলী স্থান পাইয়াছে বলিয়া প্রত্যক্ষ, আমাকে তোমা হইতে বিমুখ করিও না- এইরূপ ভাবে যাঁহার উপাসনা বিধেয় সেই পরমাত্মার কোন প্রতিকৃতি বা মূর্তি নাই। আবার উপনিষদ বলেছে- দ্বে বা ব্রহ্মণো রূপে মূর্তং চেব্যমূর্তং চামৃতং চ স্থিতং চ যচ্চ সচ্চ ত্যচ্চ।। বৃহদারণ্যক উপনিষদ, ২/৩/১ অনুবাদ: ব্রহ্মের দুইটি রূপ- মূর্ত ও অমূর্ত, মর্ত্য ও অমৃত, স্থিতিশীল ও গতিশীল, সত্তাশীল ও অব্যক্ত।


সরাসরি ব্রহ্মের প্রতিমা বা মূর্তি না থাকলেও ব্রহ্মের রূপের বর্ণনা করেছে উপনিষদ। ‘এই পুরুষের রূপ হরিদ্রারঞ্জিত বসনের মতো পীতবর্ণ, মেঘলোমের মতো পাণ্ডুবর্ণ, ইন্দ্রগোপ কীটের মতো রক্তবর্ণ; অগ্নিশিখার মতো, শ্বেত-পদ্মের মতো এবং চমকিত বিদ্যুতের মতো’। বৃহদারণ্যক উপনিষদ, ২/৪/৬ এরকম দেবতাদের রূপের বর্ণনাও বেদে উক্ত হয়েছে।


আর পরবর্তী পৌরাণিক যুগে সকল দেবতার প্রতিমা তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু হিন্দু কখনই সেই প্রতিমাকেই ব্রহ্ম বলে না, সেই প্রতিমা ব্রহ্মের প্রতীক। প্রত্যেক প্রতীকরূপ মূর্তিকে সর্বভূতে বিরাজমান বলেই মন্ত্র উচ্চারণ করা হয়। ঠিক একটি দেশের পতাকা যেমন দেশের প্রতীক, পতাকাকে সম্মান করলে আমরা যেমন স্বদেশকেই শ্রদ্ধা করি তেমনি। অদৃশ্য শব্দকে চেনা মানুষের পক্ষে কঠিন বলে মানুষ শব্দকে প্রথমে ছবির সাহায্যে জেনে নেয়। যেমনটি ‘আ’ বর্ণের ধ্বনির সাথে ‘আম’ শব্দের মিল আছে সেভাবে। ‘আ’ তে শিশুকে ‘আম’ সেখানো হয়। বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে মানুষ শিশু স্বরূপ আর সেই পূর্ণ আত্মাকে জানতে মানুষ শিশুর মতোই উপাসনা করে।


তবে এই প্রতিমা পূজাকে একমাত্র অবলম্বন বলা হয়নি। স্বয়ং বেদ বলেছে- অমূর্ত ব্রহ্ম প্রাপ্তি দুর্জ্ঞেয় ও তপস্যাদি বহু প্রয়াসের পরও ব্রহ্মদর্শন ব্রহ্মেরই কৃপাসাপেক্ষ। কঠ উপনিষদ, ১/২/২৩ এই দুর্জ্ঞেয়কে সহজ করাই সহায়ক প্রতিমার কাজ। একারণে প্রতিমা কোন গর্হিত উপাসনা পদ্ধতি নয়। বরং যিনি এতসব সৃষ্টির রূপদান করেছেন তিনিও যে স্বরূপে প্রকাশিত হতে পারেন তাও ঈশ্বরের একটি মহিমা ও ক্ষমতার বহিপ্রকাশ। মহাবিশ্বের সবই তাঁর থেকে উৎপন্ন হয়েছে অর্থাৎ সব কিছুতেই তিনি বিরাজমান। এই বৃহৎ সত্ত্বার আকার তাই ভাবনার অতীত।


ঈশ্বর যেহেতু আকার ও নিরাকার এই দুই গুণেরও অধিকর্তা তাই তিনি সর্ব আকার ও নিরাকার উভয়েরই ধারক, যে কারণে বেদ তাঁকে নিরাকার বলেছে আবার আকার স্বরূপও বলেছে। আকাশের আকার নেই তবু মানুষ চিত্রে আকাশের আকৃতি প্রকাশ করে সহজেই অনুধাবন করতে পারে। তেমনি প্রতিমার মধ্য দিয়ে স্বরূপ ঈশ্বরের সাধনা সহজসাধ্য।

Comments

Couldn’t Load Comments
It looks like there was a technical problem. Try reconnecting or refreshing the page.
Enjoy
Free
E-Books
on
Just Another Bangladeshi
By
Famous Writers, Scientists, and Philosophers 
click here.gif
lgbt-bangladesh.png
click here.gif

Click Here to Get  E-Books

bottom of page