মহাপরিকল্পনা
সরকারি মেডিকেল কলেজ পড়ুয়া একজন ডাক্তার যদি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ পড়ুয়া ডাক্তারের চেয়ে নিজেকে সেরা ভাবে, গর্ব করে, অহংকার করে তাহলে সেটা খারাপ। কিন্তু মেডিকেল কলেজ পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থী যদি নন- মেডিকেল একজনের থেকে নিজেকে সেরা ভাবে, গর্ব করে, অহংকার করে, সেটা খারাপ না?
বুয়েটে EEE তে পড়ুয়া একজন যদি IPE তে পড়া একজনের চেয়ে নিজেকে সেরা ভাবে, ভাব নেয়, অহংকার দেখায়, সেটা খারাপ। কিন্তু বুয়েট পড়ুয়া শিক্ষার্থী যখন ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির একজনের সাথে ভাব নেয়, নিজেকে সেরা ভাবে, সেটা খারাপ না?
চেহারা সুন্দর, গায়ের রঙ ফর্সা, এজন্য একজন ভাব নেয়, এটা খুব খারাপ। কিন্তু অংকে খুব মাথা খেলে, মুখস্থ শক্তি বেশ ভালো, পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে, এজন্য কেউ যখন ভাব নেয়, সেটা খারাপ না?
নিজেকে আরেকজনের চাইতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ মনে করা, নিজের যোগ্যতার বড়াই করা, অহংকার করা, নিজের ইগোর যন্ত্রনায় অস্থির থাকা, সব অবস্থায়ই খারাপ।নিজের সৌন্দর্যের অহংকার করা যতটা খারাপ, ঠিক ততটা অথবা তার চেয়েও বেশি খারাপ নিজের মেধার অহংকার করা। সব সময় আরেকজনের অহংকার আমাদের চোখ টাটায়, আমরা এর অসারত্বটুকু বুঝতে পারি। কিন্তু নিজের অহংকার, ইগো আর সেরা হওয়ার অনুভুতিকে ব্যক্তিত্ব, আত্মমর্যাদা এসব গালভরা নাম দিয়ে দেই। অথচ আমাদের সৌন্দর্য, আমাদের মেধা, আমাদের যোগ্যতার কোনটাই আমাদের ঠিক নিজের অর্জন নয়। যা কিছু নিয়ে আমরা গর্ব করি, তা আমাদের নাও হতে পারতো। তা আমাদের না হলেও, আমরা কিছু করতে পারতাম না। আপনার চমৎকার মেধা, সৌন্দর্য, তার কোনটাই না নিয়ে আপনি পৃথিবীতে আসতে পারতেন। এমনকি এসব যোগ্যতা কোনো কাজেই লাগতো না, যদি আপনি ভুল জায়গায় জন্মগ্রহণ করতেন। চিন্তা করুন, বিল গেটস কোনো এক পার্বত্য উপজাতীয় অঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেছেন, তাহলে তিনি কি করতে পারতেন? অথবা কেট উইন্সলেট জন্মগ্রহণ করেছেন কোন শরণার্থী শিবিরে, তার অপূর্ব অভিনয় কিংবা মোহনীয় দেহবল্লরি ঠিক কি কাজে আসতো?
এই পৃথিবীতে আমাদের আগমন মহাপরিকল্পনা কিংবা দুর্ঘটনা(যদি আপনি সংশয়বাদী হয়ে থাকেন), যেটাই হোক না কেনো, আমরা কেউই অহংকার করার যোগ্যতা অর্জন করি নাই। আমরা কেউই বড় নই, বড় হওয়ার অহংকার আমাদের সাজে না। প্রতিদিন নিজেদের কাজগুলো ঠিকভাবে করে যাওয়ার মাঝেই এ মানবজন্মের সার্থকতা।
Comments