রোজার ওপর গবেষণা করে জাপানি বিজ্ঞানী ইওশিনোরি ওশুমি নোবেল পেয়েছেন?
লিখেছেন: মাহনাজ হোসেইন ফারিবা
(এই লেখাটির লেখিকা নাস্তিক নন, তিনি নাস্তিকতা প্রচারের উদ্দেশ্যে এই লেখাটি লেখেন নি। লেখাটি অনুমতি সাপেক্ষে তার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে)
১ম প্রশ্নঃ নোবেল পুরস্কার আসলে কোন বিষয়ে পেয়েছেন ইওশিনোরি?
☞ ২০১৬ সালে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়েছে ইওশিনোরিকে অটোফ্যাগির মেকানিজম আবিষ্কারের জন্য। নোবেল কমিটির ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী [1] তিনি অটোফ্যাগির মেকানিজম আবিষ্কার করেছেন। কোথায়? বলা বাহুল্য, তিনি ইস্ট কোষে সেই মেকানিজম আবিষ্কার করেছেন। ইস্ট হল সেই ছত্রাক, যা আমরা পাউরুটি তৈরীতে ব্যবহার করি। তিনি প্রথম দেখেছিলেন ল্যাবরেটরীতে মিডিয়াতে (অর্থাৎ, পেট্রিডিশে যে গ্রোথের জন্য মিডিয়া ব্যবহৃত হয়) সেখানে নিউট্রিয়েন্ট কনটেন্ট কিছুটা কমিয়ে দিলে ইস্টে কিছু অতিরিক্ত কোষ গহবরের মত তৈরী হয়। তিনি বলেছিলেন এই গহবরগুলো সাধারণ কোষ গহবর নয়, এগুলো অটোফ্যাগোসোম, অর্থাৎ ইস্ট কোষ নিজের অপ্রয়োজনীয় অঙ্গানুগুলো ভেঙ্গে ওই গহবরে নিয়ে রিসাইকেল করে এমিনো এসিডে ভেঙ্গে আবার কোষে নিচ্ছে নতুন কাজে ব্যবহার করতে।
তিনি এই প্রক্রিয়ার উপরে গবেষণা করে, ইস্টের কোন জিন দায়ী এবং কোন সিগন্যালে কোন জিন কিরকম প্রোটিন তৈরী করে এই কাজটি করে সেগুলো আবিষ্কার করে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন।
ইস্ট কোষ রোযা করেনা। কাজেই রোযার উপর গবেষণা করে ২০১৬ তে ওশুমি নোবেল পেয়েছেন, ব্যাপারটি চরমতম মিথ্যা।
২য় প্রশ্ন ও দাবীঃ ২০১৬ এর কাজে নোবেল হয়েছে কাজেই এর আগের কোনো পেপার বিশ্বাস করা যাবেনা।
☞ নোবেল কমিটির সারসংক্ষেপ অনুযায়ী ওশুমির চারটি পেপারে চারটি কাজের উপর মূলত নোবেল দেয়া হয়েছে। এই চারটি পেপার হলঃ
1. Takeshige, K., Baba, M., Tsuboi, S., Noda, T. and Ohsumi, Y. (1992). Autophagy in yeast demonstrated with proteinase-deficient mutants and conditions for its induction. Journal of Cell Biology 119, 301-311 2. Tsukada, M. and Ohsumi, Y. (1993). Isolation and characterization of autophagy-defective mutants of Saccharomyces cervisiae. FEBS Letters 333, 169-174 3. Mizushima, N., Noda, T., Yoshimori, T., Tanaka, Y., Ishii, T., George, M.D., Klionsky, D.J., Ohsumi, M. and Ohsumi, Y. (1998). A protein conjugation system essential for autophagy. Nature 395, 395-398 4. Ichimura, Y., Kirisako T., Takao, T., Satomi, Y., Shimonishi, Y., Ishihara, N., Mizushima, N., Tanida, I., Kominami, E., Ohsumi, M., Noda, T. and Ohsumi, Y. (2000). A ubiquitin-like system mediates protein lipidation. Nature, 408, 488-492
এই চারটি কাজই ইস্ট কোষের উপরে করা, এবং সর্বশেষ পাবলিকেশন ২০০০ সালে করা। খেয়াল করুন প্রথম পাবলিকেশন ১৯৯২তে, শেষটি ২০০০ এ। সাধারণত একজন বিজ্ঞানীর অনেকবছর ধরে করা অনেক আগের কাজকে নোবেল দিয়ে সম্মানিত করা হয়। এমন না যে যেই বছরে করেছেন সেই বছরে নোবেল দিয়ে দিল। এত সহজ না ব্যাপারটা।
তৃতীয় প্রশ্নঃ তাহলে আমরা কেন জানি যে রোযার ওপর গবেষণা করে ওশুমি নোবেল পেয়েছেন?
এই গুজবের শুরু হয়েছে ২০১৭ সালে, প্রখ্যাত ফেসবুক সেলিব্রিটি আরিফ আর হোসাইন একটি ভ্রান্ত স্ট্যাটাস দেন ফেসবুকে যে রোযাকে মডার্ন সায়েন্স বলে অটোফ্যাগি। সেই থেকেই চলছে। আরিফ আর হোসাইনও কতগুলো অসমর্থিত ওয়েবসাইট থেকে বানিয়ে লেখাটা লিখেছেন কিছু লাইক পাবার আশায়। কোনো রিসার্চ আর্টিকেলের উপর ভিত্তি করে লিখেননি। আর বাংলাদেশের কিছু আলতু ফালতু অনলাইন পোর্টালও এটি কপি করে দিয়েছে হিট পাবার আশায়। অথচ রোযার সাথে অটোফ্যাগির এখন পর্যন্ত কোনো সম্পর্ক নেই। অটোফ্যাগি শরীরে হয় চারটি কারণেঃ
১। নিউট্রিয়েন্ট ডেপ্রাইভেশন (অর্থাৎ পুষ্টি উপাদান কম হলে) ২। হাইপোক্সিয়া (অর্থাৎ শরীরে অক্সিজেন কম হলে) ৩। ইনফেকশন (শরীরে ভাইরাস অথবা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হলে ৪। শরীরে গ্রোথ ফ্যাক্টর কম হলে (অর্থাৎ ধরেন বিভিন্ন ধরনের গ্রোথ প্রোটিন/হরমোন কম হলে)
বলতে গেলে শরীরে স্ট্রেস থাকলে। এখন এর জন্য সব জার্নাল আর্টিকেলেই বলা আছে, ক্যালরিক রেস্ট্রিকশন/নিউট্রিয়েন্ট রেস্ট্রিকশনের কথা। আপনি কম খাবেন অথবা খাওয়া বন্ধ রাখবেন, আর্টিফিসিয়ালি বডিতে স্ট্রেস দিবেন, অটোফ্যাগি হবে। কিন্তু এর সিস্টেম আছে। পানি ছাড়া সেটা হবে কি হবেনা তা নিশ্চিত নয়। স্বীকৃত সব মাউস মডেলে পানি খেতে দেয়।
আর অটোফ্যাগির ফলে কী সুবিধা-অসুবিধা হল না হল তা হোস্ট বডির উপর নির্ভর করে। এখন ধরেন আপনি সুস্থ আমি অসুস্থ। আপনার উপর অটোফ্যাগির প্রভাব আর আমার উপর অটোফ্যাগির প্রভাব এক নাও হতে পারে।
আর সব রোগেই অটোফ্যাগি যে ভালো প্রভাব ফেলে তাও না।
এ বিষয়ে বিস্তারিত রেফারেন্সসহ আমি পোস্ট লিখেছি।
চতুর্থ দাবীঃ রমযানে ওয়েট লস হয় তাই রোযা করি। আপনি কী উদ্দেশ্যে এসে পোস্ট দেন এসব?
☞ গত কিছুদিন বিভিন্ন গ্রুপে আমি দেখেছি অনেকে ওজন কমাতে রোযা করছেন। আমি তাই দেখেই মনে করলাম এটি আসলেই সঠিক কিনা দেখি। পেপার ঘেঁটে দেখলাম রমযানে কমলেও রমযান শেষে ২-৫ সপ্তাহের মধ্যে আবার শরীর যে কি সেই আগের মত হয়। এ বিষয়েও যা লিখেছিঃ
তথ্যসূত্র
খুবই ভালো লাগলো পোস্টটি পড়ে
ধন্যবাদ দাদা এগুলো তুলে ধরার জন্য
খুবই চমৎকার লিখেছেন
খুব ভালো হয়েছে আপনার পোস্টটি
খুবই অসাধারণ লিখেছেন…