সোনার নাও পবনের বৈঠা
কলেজেই যাচ্ছিলো আবির। কিন্তু কলেজ পৌছাবার আগেই মাঝপথে একদল ছেলের হাতে মার খেয়ে নাক,মুখ,গাল ফাটিয়ে হাসপাতালে যেতে হলো তাকে।কলেজ আর যাওয়া হলো না। ছেলেগুলা প্রচনয়ড নিষ্ঠুরভাবে পিটিয়েছে তাকে। এরকম সহজ-সরল একটা ছেলেকে যে কেউ এভাবে পিটাতে পারে তার বন্ধুদের কাছে সে কথা বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হচ্ছিলো না, তাই তারাও হাসপাতালে এসেছিলো তাকে দেখার জন্যে। কলেজ আর হাসপাতাল একই এলাকায় অবস্থিত,শুধু স্থানটা ভিন্ন। কলেজ যেতে যে পথে তার বিপরীত পথেই হাসপাতাল। দুটোই সরকারী প্রতিষ্ঠান।
আবিরের মন একদম অস্থির হয়ে আছে। আবির জানে না কি কারণে তাকে মার খেতে হলো। আর কার আদেশেই বা তাকে মারা হলো।যতক্ষন এর কারণ সে না জানতে পারবে ততক্ষন তার শান্তি হবে না। আবিরকে বেশিক্ষন অপেক্ষা করতে হলো না। মুহুর্তেই আবিরের আরেক বন্ধু মেনন এসে হাজির হলো। আবিরের হাল-চাল জিজ্ঞেস না করেই এক রাশ কৌতুহল নিয়ে সে আবিরের দিকে এগিয়ে গিয়ে বিছানায় বসলো। তারপর তার হাতের মোবাইলখানা আবিরের দিকে এগিয়ে দিলো। মোবাইলের স্ক্রিনে তাকাতেই আবিরের চোখ কপালে উঠলো। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে তার কষ্ট হচ্ছে। মেনন অত্যন্ত গম্ভীর দৃষ্টিতে আবিরের দিকে তাকিয়ে আছে।
— এইসব কি আবির? এটা কি করেসিছ তুই?
আবির আবারো তার চোখ দুটোকে ঢলে পরিষ্কার করে স্ক্রিনের দিকে তাকালো। ফেইসবুকে কেউ একজন পোস্ট করেছে। খুবই কিউট কিউট দুটো ছেলের অন্তরঙ্গ অবস্থার ছবি। হয়তো এডিট করা পিক,কিন্তু এজমাত্র কম্পিউটার গ্রাফিস্ক ছাড়া তা কিছুতেই ধরা যাবে না। আবির বুজতে পারলো, এই কারণেই হয়তো তাকে মারা হয়েছে। আর তাকে মেরেছে বাকের ভাইয়ের দল। কেননা এই বাকের ভাইয়ের সাথেই তার ছবি এডিট করা হয়েছে।
—আবির,চুপ করে আসিস যে! এইসব কি করেসিছ? পাগল হয়ে গেছিস নাকি?
—তুই একটু চুপ করবি! আমি কেন এইসব করতে যাবো! আমি তো নিজেই দেখে অবাক হয়ে যাচ্ছি। এতক্ষন ভেবে মরছিলাম,কে মারলো আমাকে আর কিসের জন্যই বা মারলো! আর এখন ভাবছি কে করলো এইসব এডিট। ইসস, কি কাজটা করেছে! আমার তো গেছে গেছেই, বাকের ভাইয়ের ইজ্জতটাও একদম শেষ হয়ে গেছে। আর এই কারণেই হয়তো ওনি আমারে মারছে। আচ্ছা, এই পিকগুলি তুই কার আইডি থেকে পাইলি?
—কার আইডি থেকে পাইনাই এটা বলো। ফেইসবুক ভরা এখন একটা জিনিসই আছে। তোর আর বাকের ভাইয়ের এই গে পিক। এটা এখন ভাইরাল।
—কে করতে পারে এই কাজ? কার আমি এত বড় ক্ষতি করেছি যে সে আমার ইজ্জত মারার জন্য উঠে-পড়ে লেগেছে? আচ্ছা, বাকের ভাইয়ের সাথে কি তোর দেখা হইছিলো আজ?
—না। একটা কথা শোন আগে, বাকের ভাই যা খুশি তাই করতে পারে। তুই সেইফ থাকিস, আবারো এসে তোর উপর আক্রমণ করতে পারে!এখন আমি যাই,ভালো থাকিস!
মেনন উঠে দাড়িয়ে দরজার সামনে গেলো। দরজা খুলতেই মেনন ছিটকে উঠলো। যেখানে বাঘের ভয়,সেখানেই সন্ধ্যাে হয়। বাকের ভাই দরজার চৌকাঠ ধরে দাড়িয়ে আছে। তার চোখ মুখ রাগে টগবগ করছে। যদি কোনোমতে রুমের ভেতর ঢুকতে পারে আজ আবিরের শেষ দিন হয়ে যাবে বলে ভয়ে অস্থির হলো মেনন। মেনন বাকেরকে উপেক্ষা করেই তার মুখের উপর দরজা আটকে দিলো,তারপর আবিরের দিকে দৌড়ে এলো! —আবির, খাটের নিচে গিয়ে লুকা। তাড়াতাড়ি কর, এখান থেকে সর! বাকের ভাই আসছে!
বাকের ভাই আসছে কথাটা শুনে আবির ভয় পাবার বদলে আনন্দিত হলো। সে মেননকে দরজা খুলে দিতে বললো,কিন্তু মেনন এতটাই ভয় পেয়ে আছে যে নড়ার সাহস পাচ্ছে না। আবির নিজেই তার অসুস্থ শরীর নিয়ে এগিয়ে গেলো দরজার দিকে, সে দরজা খুলে দিতেই বাকের থমকে গেলো। সে দরজা ভাঙার জন্য লাথি মারার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। আবির কিছু বলবার আগেই বাকের আবিরের গলা ধরে বসলো। আবির মোটেও ভীতিগ্রস্থ না হয়ে আনন্দিত মুখে বাকেরের হাত ধরে ভেতরে টেনে নিলো। বাকের পুরোপুরিভাবে অবাক হয়ে আবিরের সাথে ভেতরে ঢুকলো। মেনন ভয় পেয়ে খাটের নিচে লুকিয়ে আছে। আবির বাকেরকে বেডে বসিয়ে দিয়ে দেওয়ালে লাগানো পাখার সুইচ অন করে দিয়ে তার সামনে এসে দাড়ালো।
—বাকের ভাই, আমি কিন্তু এই ছবিগুলোর ব্যাপারে কিছুই জানি না। আপনার ছেলেগুলো বিনা অপরাধেই আমাকে মেরেছে।
বাকেরের অভ্যাস সবাইকে তুই করে বলা, কিন্তু আবির যেহেতু তার সাথে সুন্দর করে কথা বলছে এই মুহুর্তে তুই করে বলাটা সুন্দর দেখায় না।
—তুমি কি এই পিকগুলোর ব্যাপারে বলছো?
—জ্বি। আমি তো আপনাকে খুব ভালো করেই চিনি, তো আপনার পিক এডিট করার সাহস আমি পাই কি করে?
—তুমি এডিট করো নাই এগুলো?
—জ্বি না।
—তো এই পিকগুলো তোমার আইডিতে এলো কি করে?
—আমি সত্যিই ভাই কিছুই জানি না। আপনি বিশ্বাস করুন, আমার তো এন্ড্রয়েড মোবাইলই নেই। আপনার পিক ছাড়বো কি করে? প্রায় তিন মাস আগে আমার ফোনটা চুড়ি হয়ে গেছে।
—শুনো তোমার অনেক কথা শুনছি। এবার আমার কথা শুনো। পিকগুলো ভালোয় ভালোয় ডিলেট করে দাও বলছি। নয়তো কিন্তু এবার তোমাকে পুলিশের হাতের মার খেতে হবে।
—আপনি বুজার চেষ্টা করুন ভাই। আমি কেনই বা আপনার সাথে আমার পিক এডিট করবো,আপনার সাথে আমার কি এমন শত্রুতা।আমি কেনই বা নিজের পিক এভাবে এডিট করবো? এতে কি আমার মান যাবে না?
—তবে কে করেছে এইকাজ?
—হয়তো আপনার কোনো শত্রু হবে। নয়তো আমার শত্রু।
—তোমার সাথেই কেন?
—আমি তো একটু অন্যরকম, সহজেই সবাই বিশ্বাস করবে তাই হয়তো। আপনি যদি বিশ্বাস না করেন তো, আমাকে আরো মারতে পারেন, নয়তো পুলিশেও দিতে পারেন । আমি আর কি বলবো ভাই,যদু বিশ্বাস না করেন তো?
বাকের চলে গেলো। মেননও খাটের তলা থেকে বের হয়ে পালালো। কিছুক্ষনের মাঝেই আবিরের বাড়ির লোক চলে এসে তাকে বাড়ি নিয়ে গেলো। তারাও কথা বেশি দূর এগুলো না,কেননা নেতাদের উপর কথা বলতে নেই! এতে হীতে বিপরীত হতে পারে।
সুস্থ হবার পর আবির কলেজের দিকে পা বাড়ালো। কলেজের মানুষগুলো তার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে রইলো যেন কোনো ভিনগ্রহের প্রাণী কলেজে ঢুকে পড়েছে। কেউ কেউ তাকে দেখে মুখ চেপে হাসতেও লাগলো। কেউ কেউ বা তাকে দেখে নাক ছিটকাতে লাগলো। হয়তো তাদের শুচিবায়ু আছে, আবিরের গায়ের গন্ধ তাদের জ্বালাতন করছে। আবিরের তার রুমে যেতেই কয়েকজন ম্যাম,টিচার তাকে কিছু উপদেশ দিয়ে রুম থেকে বের করে দিলো। তার বন্ধুগুলোও তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলো। আবির কলেজমাঠের বটগাছের নিচে গিয়ে কিছুক্ষন একা একা বসে থেকে বাড়িতে চলে গেলো। সে প্রতিদিনই কলেজে আসে, কিন্তু রুমে যেতে পারে না। কোনো শিক্ষকই তাকে পড়াতে নারাজ। এমনকি শিক্ষার্থীরাও তার সাথে বসে পড়তে নারাজ।
বাকের হচ্ছে কলেজের ছাত্রলীগের সভাপতি। এইসব সামান্য পিকচারে তার কিছুই যায় আসে না। এই পিকচারগুলোর কারণে তার ইমেজ নষ্ট হবার বদলে আরো উপরে উঠেছে। সে যে এক প্রতারক ইডিটোরকে পিটিয়েছে সেটাও রাতারাতি ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। অতএব তার কোনো দোষ নেই, যা দোষ ইডিটোরের।
একদিন সন্ধ্যায় পায়ে হেটে বাড়ি ফিরছিলো আবির। চারিদিকে বড় বড় গাছের কারণে জঙ্লী এলাকা বলে মনে হচ্ছে। হঠাৎ আবির শুনতে পেলো কেউ গ্যাঙাচ্ছে। সে একটু সাএনে এগুতেই দেখলো একজন ছেলে পড়ে আছে। অন্ধকারে তার মুখটা চেনা যাচ্ছে না।তার গায়ে হাত দিতেই আবিরের হাত ভিজে গেলো। আবির বুজতে পারলো এ রক্তের প্রসবণ। আবির ছেলেটিকে টেনে-টুনে দাড় করিয়ে কাধে ভর করিয়ে বাড়ি নিয়ে গেলো। বাতির আলোতে আবির চিনতে পারলো,ছেলেটি বাকের ভাই। তার হাত-পা জায়গায় জায়গায় ক্ষত। রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। আবিরের মা ভয়ে ভয়ে বললো, এই নেতারে ববাড়ি আনসোস কেন? আবার কোন জামেলায় পড়তে চাস! আবির মায়ের কথা উপেক্ষা করেই একজন ডাক্তার খবর দিয়ে নিয়ে আসলো। ডাক্তার বাকেরের ক্ষতস্থান ড্রেসিং করে কিছু ওষুধ দিয়ে গেলো। দুই-তিনদিন যত্ন নেওয়ার পর বাকের সুস্থ হয়ে উঠলো। এতদিন সে আবিরের বাড়িতেই ছিলো, আর আবিরের কাছে বাকেরদের দলের কারো নম্বর ববা িঠকানাও নেই যে তাদের খবর দিবে।
প্রায় মাস দেড়েক পর আবির আবারো কলেজে ঢুকলো। সেদিনও কেউ তাকে প্রশ্রয় বা আশ্রয় দিলো না। সে আগের মতোই বটগাছের তলায় গিয়ে মাথা নিচু করে বসে রইলো। হঠাৎ কেউ একজন তার পাশে এসে বসলো। তার হাতে হাত রাখলো। আবির চমকে উঠে তার দিকে তাকালো। —বাকের ভাই। আপনি? —ধন্যবাদ আবির। আমি যে লোক দিয়ে তোমাকে মার খাওয়ালাম তার পরেও তুমি আমাকে বাচালে,যত্ন নিলে। তুমি খুবই ভালো একটি ছেলে।
বাকের আবিরকে ক্লাসে নিয়ে গেলো। তারপর সব টিচারদের বুজিয়ে বললো পিকগুলো আসল ছিলো না, আর আবিরও ওমন ছেলে নয়। সবাই আবিরকে সাদরে গ্রহণ করে নিলো।কয়েক মাস আগেই মেনন বিদেশ চলে গেছে, তাই তার সাথে আবিরের দেখা হয়নি। আজ সে সেই কথা জানতে পারলো।মেননের উপর তার একটু শভিমান জন্মালো, না জানিয়েই চলে গেলো।
বাকের ভাইয়ের সাথে আবিরের খুব ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে গেলো। প্রায়ই প্রায়ই আবিরকে সে তার বাইকে করে জায়গায় জায়গায় থেকে ঘুরিয়ে নিয়ে আসে,নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়। আবিরের বাড়িতে দিয়ে যায়। এক রাতে বাকের ভাই আবিরকে নিজের রুমে আমন্ত্রণ জানালো। আবির য়া গ্রহণও করলো। বাকের ভাইয়ের কি যেন হলো, সে মুহুর্তেই আবিরকে কাছে টেনে নিলো। তারপর অনেক কথা বলার পর আবিরকে তার ভালোবাসার কথা জানালো। আবিরকে বুকে জড়িয়ে নিলো। পাশের ড্রেসিং টেবিলে নিজের মোবাইলখানা চার্জ দিয়ে সেখান থেকে একটা জেলজাতীয় কিছু নিয়ে এসে এক আদিম খেলায় মত্ত্ব হলো দুজনে।
পরদিন আবির আর বাকের বটগাছের নিচে কিছুক্ষন বসে ছিলো। হঠাৎ বাকেরের একটি কল এলো, সে উপরে চলে গেলো। আবিরের হাতে বাকেরের হাতের ঘড়িখানা রয়ে গেছে। আবির ট্রাই করে দেখছিলো, বাকেরের ঘড়ি তার হাতে কেমন লাগে। আবিরও বাকেরকে খুজতে খুজতে উপরে চলে গেলো। বাকের যে রুমে ছিলো সে রুমে ঢুকতে গিয়েই আবির যা শুনতে পেলো তা শুনে সে সেখানেই দাড়িয়ে পড়লো। কেউ একজন বলছিলো, বাকের ভাই তুমি তো সেই অভিনয় করতে পারো! এখন করতাছো প্রেমের অভিনয়, যা মোটেও ধরতে পারবো না। আরেকজন তাকে ধমক দিয়ে চুপ করিয়ে নিজে বলতে লাগলো,আইডিয়াটা তো আমার ছিলো! তাই না! আমিইতো বলেছিলাম আবিরের সাথে পিক এডিট করে ফেইসবুকে ছেড়ে দিতে, এতে এটা সেই ভাইরাল হবে। তারপর আবিরকে একদিন রাম কেলানি দিলেই বাকের দুধে ধোয়া তুলসী পাতা হয়ে যাবে,আর আবির হবে মুখপোড়া। ওই তো সহজ-সরল পোলা, ওর কথা সবাই বিশ্বাস করবে।
আবির দীর্ঘশ্বাস ফেললো। সে এখন নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছে না। ভেতর থেকে আবারো শব্দ এলো, কাল রাতে সেক্স করে ভিডিও করার প্ল্যানটাও তো আমারই ছিলো। বাকের ভাই ঝাক্কাস ভিডিও বানাইছো তো? আর ওই এনামুল হকের পিক এডিট করে তোমার জায়গায় বসাতে বলছিলাম সেটাও করছো তো? দাও তো ভিডিও টা দেখি! নিশ্চয়ই এতক্ষনে ভাইরাল ভিডিও হয়ে গেছে।
কথাটা শুনে আবিরের দম আটকে আসলো। সে বুজতে পারলো এতদিন যা হচ্ছিলো সবই নাটক হচ্ছিলো। সে যাকে বিশ্বাস করে নিজেকে তার হাতে তুলে দিয়েছিলো সেই বিশ্বাসঘাতক ছিলো। সে তো এখন প্লে বয় হয়ে গেছে। একটু পরেই সবাই তার দিকে কুদৃষ্টিতে তাকাবে, খারাপ কথা বলবে। সবাই ঘৃণা করবে। তার মা-বাবাকেও গালি দিবে, হেয় করবে। আবির ছুটে চললো নিচের দিকে।
প্রায় পয়ত্রিশ মিনিট পর বাকের মিটিং থেকে বাইরে বের হলো। বাইরে বের হতেই তার পা পড়লো একটি ঘড়ির উপর। তার নিজেরই ঘড়ি যেটা এতক্ষন আবিরের হাতে ছিলো। মুহুর্তেই একটা ছেলে দৌড়ে এলো, বাকের ভাই,বাকের ভাই! একটা ছেলে ব্রিজ থেকে লাফ দিয়ে অাত্মহত্যা করছে। ওই যে আপনার সাথে যার পিক ভাইরাল হয়েছিলো ওই ছেলেটা।
কথাটা শুনে বাকেরও খানিকটা স্তব্ধ হয়ে গেলো। নিমিষেই তার চোখদুটো ছলছল করে উঠলো। সেও ছুটে চললো নদীর ঘাটে। নদীর ঘাটে বিশাল এক জনতা ভীর করে দাড়িয়ে আছে। তাদের মাঝে শুয়ে আছে একটি ফুটন্ত নিষ্প্রাণ দেহ। কত সুন্দর সেই মুখখানা।
বাকের বুজতে পারলো, আবির ঘড়ি দিতে উপরে গিয়েছিলো। আর সে সব শুনেই আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু আসলেই কি সে সবটাই শুনেছে? যদি শুনেছে তো এমন করলো কেন? যখন ছেলেটা বলেছিলো, সেক্স ভিডিও ভাইরাল করার কথা একটুপরেই তো বাকের ধমক দিয়ে উঠলো! —এই খবরদার, আবিরকে নিয়ে উল্টা-পাল্টা কিছুই বলবি না। জাহান্নামে যাক এনামুল হক, তাই বলে কি আমি আবিরকে পাঠাবো? যেদিন তোরা ওর সাথে আমার পিক এডিট করেছিলি আমি বাসায় গিয়ে সারারাত ভর সেই পিকগুলো দেখেছি আর ভেবেছি,সত্যিই যদি এমনটা হতো।আমি নিজে থেকেই চেয়েছি যাতে করে সবার চোখে এই পিকটা পড়ে। আল্লাহ আমায় সুযোগ করে দিলেন, আমি জানতাম রোজ সন্ধ্যায় আবির ওই রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরে। তাই ইচ্ছে করে নিজের শরীর ক্ষত-বিক্ষত করে পড়েছিলাম। যাতে করে আবিরের কাছে পৌছাতে পারি। আমি তো সেইদিনই রাদিফের প্রেমে পড়ে যাই,যেদিন হাসপাতালে ও আমার সামনে এসে দাড়ায়। আমার চোখে তাকিয়ে ভয় পায়!
আবির এইসবের কিছুই শুনেনি। সে আগেই চলে গেলো বাকেরকে ছেড়ে। সে জানতেও পারলো না বাকের তাকে সত্যিই মন প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে।
নদীর মাঝে নৌকা চলছে। তাতে নেই কোনো মাঝি,নেই কোনো বৈঠা। আছে দুজন ছেলে। একজনের বুকে আরেকজন শুয়ে আছে। নদীর তীব্র স্রোত তাদের নৌকাটিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বাকেরের চোখ থেকে টুপটুপ করে জল পড়ছে। বাকের এক রাতে আবিরকে বলেছিলো, তুমি কি চাও? আবির হাসিমুখে বলেছিলো সোনার নৌকায় চড়তে চাই! তাতে পবনের বৈঠা থাকবে। বাকের হেসে হেসে বললো, সোনার নৌকা তো রুপকথার গল্পে পাওয়া যায়। আবির বললো, আপনি যে নৌকাতেই চড়বেন সেটাই সোনার নৌকা হয়ে যাবে।
বাকের আবিরকে সোনাত নৌকায় চড়িয়েছে। পড়ন্ত বিকেলের রোদ বাকেরের মুখে পড়ছে। আকাশে কয়েক জোড়া পাখিকেও উড়তে দেখা যাচ্ছে। আকাশ ভীষণ নীল। তারা স্রোতের টানে অনেক দূর চলে এসেছে। হঠাৎ করে বাকেরের প্রচন্ড ঘুম পেলো, সে চোখ বন্ধ করে আবিরের বুকের উপর শুয়ে পড়লো। তার হাত থেকে একটি কাচের বোতল নৌকার ছলুই পেরিয়ে নিচে পড়লো। তার গায়ে লাল কালি দিয়ে বেশ বড় করে লেখা, সাবধান বিষ!
Comments