top of page
Writer's pictureJust Another Bangladeshi

হিন্দু ধর্ম এবং টেস্টটিউব বেবী


ভারতে এমন অনেক লোক আছেন, আধুনিক বিজ্ঞান কিছু আবিষ্কার করার পর তারা দাবী করতে থাকেন যে, “ আমাদের পূর্বপুরুষেরা তো আগেই এসব আবিষ্কার করে ফেলেছিলেন।” এর সমর্থনে তারা বেদ পুরাণের নানা উদাহরণ দিয়ে থাকেন।

যখন থেকে আধুনিক বৈজ্ঞানিকেরা টেস্টটিউবের মাধ্যমে বাচ্চার জন্ম দিচ্ছেন, তখন থেকে তারা প্রমাণ করতে উঠেপড়ে লেগেছে যে, তাদের পূর্বপুরুষেরা তো হাজার হাজার বছর আগেই এসব আবিষ্কার করে ফেলেছিল।

এজন্য তারা বেদ পুরাণ প্রভৃতির বিভিন্ন কাল্পনিক এবং অসম্ভব গালগল্পকে বৈজ্ঞানিক শব্দ ব্যবহার করে পরিবেশন করে থাকে এবং এই ধরণের লেখাগুলো বিভিন্ন পত্রপত্রিকা বেশ উৎসাহের সাথেই প্রকাশ করে থাকে।

ঐ গালগল্পগুলোর বিবরণ দেওয়ার আগে এবং বিচার করার আগে আমাদের স্পষ্টভাবে জানা উচিত টেস্টটিউব বেবী কি এবং টেস্টটিউব বেবী জন্ম দেওয়ার প্রক্রিয়া কি?

এই প্রক্রিয়াটিকে ইংরেজিতে in vitro fertilization and embryo transfer বলা হয়ে থাকে। এর অর্থ হল – টেস্টটিউবে নিষেক এবং গর্ভের স্থানান্তর।

এই প্রক্রিয়ায় কি করা হয়? নারীর ডিম্বাশয়ে হরমোনের দ্বারা ডিম্বকে পরিপক্ক করা হয়। এরপর একে ওখান থেকে বের করা হয়।

ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বকে বের করার জন্য এখন আলট্রা সাউন্ড তরঙ্গের ব্যবহার করা হচ্ছে। মহিলাদের গর্ভে যখন তরঙ্গ ছাড়া হয়, তখন ডিম্বাশয়ের ডিম্ব আলট্রা সাউণ্ড নিঃসরণকারী যন্ত্রের পর্দায় উঠে আসে। এই ডিম্বকে এস্পাইরেটর দ্বারা বের করা হয়।

(এই প্রক্রিয়ায় মহিলাদের অজ্ঞান করার প্রয়োজন হয় না এবং এতে অধিক সময়ও লাগে না। সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াতে মহিলাটিকে একবারমাত্র ইঞ্জেকশন দেওয়ার প্রয়োজন হয়। )

এই বের করা ডিম্বকে সূক্ষ্মদর্শী যন্ত্র দ্বারা নিরীক্ষণ করার পর তাকে পেট্রি ডিশে রেখে দেওয়া হয়, যাতে জীবাণুমুক্ত পোষক দ্রব্য থাকে।

এভাবে পাওয়া ডিম্বকে ছয় ঘন্টা অবধি এবং পুরুষের শুক্রাণুকে ৩০ মিনিট অবধি ৩৭ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় ইনকিউবেটরে রেখে গতিশীল করা হয়।

পূর্বোক্ত পেট্রি ডিশে ডিম্বাণু এবং শুক্রাণুকে মিলিয়ে আবার একই রকম ইনকিউবেটর এ রেখে দেওয়া হয়। দুদিন পর এটা ভ্রুণে পরিণত হয়। এই ভ্রুণকে একটি নালি দ্বারা বায়ুচাপের মাধ্যমে মহিলার গর্ভে স্থাপন করা হয় এবং উপযুক্ত সময়ে মহিলাটি শিশুর জন্ম দেয়।

সংক্ষেপে এই হল টেস্টটিউব বেবী তৈরির প্রক্রিয়া। এখানে আমরা জটিল মেডিকেল টার্মের বদলে সহজ শব্দ ব্যবহার করেছি, যাতে সাধারণ মানুষেরা সহজেই এই প্রক্রিয়াটি বুঝতে পারে।

এখন আমরা দেখবো ধর্মগ্রন্থের কোন ধরণের গালগল্পকে অতীতবাদী হিন্দুরা টেস্টটিউব বেবীর উদাহরণ হিসেবে পরিবেশন করে থাকে।

এই ধরণের কিছু উদাহরণ বিভিন্ন গ্রন্থ থেকে উল্লেখ করা হলঃ

কলসি থেকে আগস্ত এবং বশিষ্ঠ

ঋগ্বেদে আছে, মিত্র এবং বরুণ নামক দেবতা উর্বশী নামক অপ্সরাকে দেখে কামার্ত হয়ে পড়েছিলেন। তারা তাদের স্খলিত বীর্যকে যজ্ঞের কলসিতে রেখেছিলেন। সেই কলসি থেকে অগস্ত এবং বশিষ্ঠ ঋষি উৎপন্ন হয়েছিলেনঃ

উতাসি মৈত্রাবরুণো বসিষ্ঠোর্বশ্যা ব্রহ্মন্ মনসোধি জাতঃ,

দ্রপ্সং স্কন্নং ব্রহ্মণা দৈব্যন বিশ্বে দেবাঃ পুস্করে ত্বাদদন্ত।

সত্রে হ জাতাবিষিতা নমোভিঃ কুম্ভে রেতঃ সিষিচতুঃ সমানম্,

ততো হ মান উদিয়ায় মধ্যাত্ততো জাতমৃষিমাহুর্বসিষ্ঠম্।

-ঋগ্বেদ ৭/৩৩/১১, ১৩

অর্থাৎ, হে বশিষ্ঠ, তুমি মিত্র এবং বরুণের পুত্র। হে ব্রহ্মন, তুমি উর্বশীর মন থেকে জাত। সেই সময় মিত্র এবং বরুণের বীর্য স্খলন হয়েছিল। বিশ্ববেদগণ দৈব স্তোত্র দ্বারা পুষ্কর মধ্যে তোমায় ধারণ করেছিলেন। যজ্ঞে দীক্ষিত মিত্র এবং বরুণ স্তুতি দ্বারা প্রার্থিত হয়ে কুম্ভের মাঝে একসাথে বীর্য (রেত) স্খলন করেছিলেন। এরপর মান (অগস্ত্য) উৎপন্ন হল। লোকে বলে ঋষি বশিষ্ঠও এই কুম্ভ হতেই জন্মেছিলেন।

কার্তিকের উৎপত্তি

বাল্মিকী রামায়ণে (বালকাণ্ড) আছে, অগ্নি দেবতা গঙ্গাকে গর্ভবতী করেছিলেন। যখন গঙ্গা তা ধারণ করতে অসমর্থ হলেন তখন তিনি তাকে হিমালয়ের পাশে এক জঙ্গলে ফেলে দিলেন। সেই ফেলে দেওয়া গর্ভ হতে যে বালক উৎপন্ন হল, তাকে কার্তিকেয় (শিব এর দ্বিতীয় পুত্র ) বলা হলঃ

দেবতানাং প্রতিজ্ঞায় গঙ্গামধ্যেত্য পাবকঃ,

গর্ভ ধারয় বৈ দেবী দেবতানামিদং প্রিয়ম্। (৩৭/১২)

সমন্ততস্তদা দেবীমভ্যষিংচত পাবকঃ। ১৪

তমুবাচ ততো গঙ্গা সর্বদেবপুরোগমম্,

অশক্তা ধারণে দেব তেজস্তব সমুদ্ধতম্।১৫

ইহ হৈমবতে পার্শ্বে গর্ভোহয়ং সংনিবেশ্যতাম্,

গঙ্গা তু গর্ভমতিভাস্বরম্।১৭

উৎসসর্জ মহাতেজাঃ স্রোতেভ্যো হি তদানধ।১৮

নিক্ষিপ্তমাত্রে গর্ভে তু তেজাভিরভিরঞ্জিতম্।২১

তং কুমারং ততো জাতম্… ২৩

-বাল্মিকী রামায়ণ, বালকাণ্ড, অধ্যায় ৩৭

অর্থাৎ, দেবতাদের প্রতিজ্ঞা করে অগ্নি দেবতা গঙ্গার কাছে এসে বললেন, “ হে দেবী, তুমি আমার দ্বারা গর্ভবতী হও, এটাই দেবতাদের ইচ্ছা।“ তখন অগ্নি তাকে সেচন করেছিলেন অর্থাৎ গর্ভবতী করেছিলেন। তিনি অগ্নির তেজোময় গর্ভকে ধারণ করতে অসমর্থ হয়েছিলেন। গঙ্গা অগ্নির কথামত সেই গর্ভকে হিমালয়ের পাশে ফেলে দিয়েছিলেন। তা থেকে এক তেজস্বী কুমার অর্থাৎ কার্তিকেয়ের জন্ম হয়েছিল।

ষাট হাজার পুত্র

বাল্মীকি রামায়ণের বালকাণ্ডে অন্য এক কথা পাওয়া যায়। এখানে বলা হয়েছে, রাজা সগরের দুই রানী ছিল। কেশিনী এবং সুমতি তাদের নাম। কেশিনী এক পুত্রের জন্ম দিলেন কিন্তু সুমতির গর্ভ হতে একটি তুম্ব (লাউ) বের হল। সেটি ফেটে ষাট হাজার পুত্রের জন্ম হল।

সুমতিস্তু নরব্যাঘ্র গর্ভতুংবং ব্যজায়ত,

ষষ্টিঃ পুত্রসহস্রাণি তুম্বভেদাদ্ বিনিঃসৃতাঃ। ১৭

ঘৃতপূর্ণেষু কুম্ভেষু ধাত্র্যস্তান্ সমবর্ধয়ন্,

কালেন মহতা সর্বে যৌবনং প্রতিপেদিরে। ১৮

-বাল্মীকি রামায়ণ, বালকাণ্ড, অধ্যায় ৩৮

অর্থাৎ, সুমতি একটি তুম্বের জন্ম দিলেন। তা বিদীর্ণ করে ষাট হাজার পুত্র বেরোলেন। ধাত্রীরা তাদের ঘৃতপূর্ণ পাত্রে রাখলেন। কিছু সময় পরে এরা বড় হয়ে গেল।

ব্রহ্মাণ্ডপুরাণে এই কাহিনীর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিবরণও পাওয়া যায়। সেখানে বলা হয়েছে-

সুমতিশ্চাপি তৎকালে গর্ভালাবুমসূয়ত,

ভগবানৌর্বস্তত্রাগচ্ছদ্ যদৃচ্ছয়া তমুবাচ ত্বরান্বিতঃ।

গর্ভালাবুরয়ং রাজন্ন ত্যক্তুং ভবতার্হিতি,

পুত্রাণাং ষষ্টিসহস্রংবীজভূতো যতস্তব।

তস্মাত্তত্সকলীকৃত্য ঘৃতকুম্ভেষু যত্নতঃ,

নিঃক্ষিপ্য সপিধানেষু রক্ষণীয়ং পৃথক্পৃথক্,

কালে পূর্ণে ততঃ কুম্ভান্ ভিত্বা নির্য়ান্তি তে পৃথক্,

এবং তে ষষ্টিসাহস্রং পুত্রাণাং জায়তে নৃপ।

রাজা চ তত্তথা চক্রে ততঃ সংবৎসরে পূর্ণে ঘৃতকুম্ভাত্,

ক্রমেণ তে ভিত্ত্বাভিত্ত্বা পুনর্জজ্ঞুঃ সহসৈবানুসারম্।

-ব্রহ্মাণ্ড পুরাণ, উপোদ্ঘাতপাদ, ৫১/৩৯-৪৬

অর্থাৎ, সুমতি তখন গর্ভ হতে একটি তুম্বের জন্ম দিলেন। তখনই সেখানে ঔর্ব ঋষি হঠাৎ এসে উপস্থিত হলেন। তিনি রাজাকে বললেন, এই তুম্বকে ফেলে দিও না। এর মধ্যে তোমার ষাট হাজার পুত্রের বীজ নিহিত আছে। একে কেটে ষাট হাজার টুকরো করো এবং প্রত্যেক টুকরোকে একটি করে ঘি এর পাত্রে রেখে ঢাকনা দাও। সময় হলে তারা ওই পাত্রগুলোকে ভেঙ্গে নিজে নিজেই বেরিয়া আসবে। রাজা এমনটিই করলেন। এক বছর পরে, প্রত্যেকটি পাত্রকে ভেঙ্গে তারা বেরোতে শুরু করলো।

নাক থেকে শিশুর জন্ম

বিষ্ণু পুরাণে আছে, মনু হাঁচি দিলে তার নাক থেকে একটি শুশুর জন্ম হয়েছিলঃ

ক্ষুতবতশ্ত মনোরিক্ষ্বাকুঃ পুত্রো জজ্ঞে ঘ্রাণতঃ। -বিষ্ণু পুরাণ ৪/২/১১

অর্থাৎ, হাঁচি দেওয়ার সময় মনুর নাক থেকে ইক্ষ্বাকু নামক এক পুত্রের জন্ম হল।

কোলে পড়া বীর্য থেকে বাচ্চা

শিবপুরাণে আছে, শিব ও পার্বতীর বিবাহে যখন পার্বতী চারবার মাত্র প্রদক্ষিণ করেছিলেন তখন ব্রহ্মা পার্বতীর আঙ্গুল দেখতে পেয়েছিলেন।। তা দেখেই ব্রহ্মা কামোদ্দীপ্ত হয়ে পড়েন এবং তার বীর্যস্খলন হয়। সেই বীর্য ব্রহ্মার কোলে পড়েছিল। তিনি সেটাকে লুকোতে চাইলেন, কিন্তু তা থেকে অসংখ্য ব্রহ্মচারীর জন্ম হয়েছিলঃ

প্রদক্ষিণং তথা চাগ্নেশ্চতুর্ধা চ কৃতং তদা,

ব্রহ্মণঃ স্খলনং জাতং শিবাংগুষ্ঠদর্শনাত্।

তদ্ গোপিতং তেন হ্যুত্সংগে পতিতং চ যত্,

ততো জাতস্ত্বসংখ্যাতা বটুকা ব্রহ্মসূত্রকাঃ। – শিবপুরাণ, জ্ঞানসংহিতা ১৮

পতিত বীর্য হতে হাজার বছর পরে শিশুর জন্ম

ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে আছে যে, কৃষ্ণের বীর্যস্খলন হলে, তিনি লজ্জাবশত তা জলে মিশিয়ে দেন। এক হাজার বছর পরে সেই বীর্য হতে একটি শিশুর জন্ম হয়েছিলঃ

কৃষ্ণস্য কামবাণেন রেতঃ পানো বভূব হ,

জলে তদ্রেচনং চক্রে লজ্জয়া সুরসংসদি।

সহস্রবৎসরান্তে তড্ ডিম্বরূপং বভূব হ,

ততো মহান্ বিরাড্ জজ্ঞে। -ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ, ব্রহ্মখণ্ড, ৪/২৩-২৪

অর্থাৎ, কামবশীভূত হওয়ার ফলে কৃষ্ণের বীর্যস্খলন হল। তিনি লজ্জাবশত দেবসভায় একে লুকোতে গিয়ে জলে ফেলে দিলেন। এক হাজার বছর পরে সেটি ডিম্ব হয়ে গিয়েছিল এবং তা থেকে মহান বিরাটের জন্ম হয়েছিল।

কাঠ হতে পুূত্রের জন্ম

দেবীভাগবত পুরাণে আছে, একবার বেদব্যাস যজ্ঞের উদ্দেশ্যে আগুন জ্বালানোর জন্য অরণিমন্থন করছিলেন। তখন তিনি ঘৃতাচী নামে এক অপ্সরাকে দেখলেন এবং কামুক হয়ে পড়লেন। তার বীর্যপাত হল। তা কাঠের উপর গিয়ে পড়লো। সেখান থেকে ব্যাসদেবের সমান আকৃতিযুক্ত এক পুত্র উৎপন্ন হল। তার নাম হল শুকদেবঃ

কামস্তু দেহে ব্যাসস্য দর্শনাদেব সংগতঃ,

বহুশো গৃহ্যমাণং চ ঘৃতাব্যা মোহিতং মনঃ।

মন্থনং কুর্বতস্তস্য মুনেরাগ্নিচিকীর্ষয়া,

অরণ্যামেব সহসা তস্য শুক্রমথাপতত্।

সোবিচিন্ত্য তথা পাতং মমন্থারণিমেব চ,

তস্মাচ্ছুকঃ সমুদ্ভূতো ব্যাস্যাকৃতিমনোহরঃ। -দেবীভাগবতপুরাণ ১/১৪

অর্থাৎ, তাকে ( ঘৃতাচী অপ্সরাকে) দেখার সাথে সাথেই ব্যাস কামবশীভূত হয়ে পড়লেন। ঘৃতাচী তার হৃদয় হরণ করেছিলেন। আগুন জ্বালানোর জন্য অরণীমন্থন করছিলেন ব্যাসদেব। তার বীর্য অরণিতে পতিত হল। এর পরোয়া না করে তিনি অরণীমন্থন করতে লাগলেন। তা থেকে ব্যাসের সমান আকৃতি সম্পন্ন শুক নামে এক বালকের জন্ম হল।

শ্রীমদ্ভাগবতে আছে, নিজের বড় ভাই উতথ্যের স্ত্রী মমতাকে বৃহস্পতি ধর্ষণ করেছিলেন। তার বীর্য হতে ভরদ্বাজ নামক এক পুত্রের জন্ম হয়েছিলঃ

অন্তর্বত্ন্যাং ভ্রাতৃপত্ন্যাং মৈথুনায় বৃহস্পতিঃ,

প্রবৃত্তে বারিতো গর্ভং শপ্ত্বা বীর্যমবাসৃজত।

তং ত্যক্তুকামাং মমতাং ভর্তৃত্যাগবিশংকিতাম্,

নামনির্বচনং তস্য শ্লোকমেকং সুরা জগুঃ।

মূঢে ভর দ্বাজমিমং ভর দ্বাজং বৃহস্পতেঃ,

যাতৌ তদুক্ত্বা পিতরৌ ভরদ্বাজস্ততস্ত্বয়ম্।

চোদ্যমানা সুরৈরেবং মত্বা বিতথমাত্মজম্,

ব্যসৃজত্ … –শ্রীমদ্ভাগবতপুরাণ ৯/২০/৩৬-৩৯

অর্থাৎ, বৃহস্পতি গর্ভবতী ভ্রাতৃবধূর সাথে সম্ভোগে প্রবৃত্ত হলেন। তাকে থামালেন। তিনি গর্ভকে অভিশাপ দিয়ে সম্ভোগ করতে লাগলেন এবং তার বীর্য স্খলিত হল। সেই বীর্যকে ভ্রাতৃবধূ ফেলে দিতে চাইছিলেন, যাতে তার স্বামী তার উপর ক্রুদ্ধ হয়ে তাকে ত্যাগ না করেন। তখন দেবতারা বললেন- হে মূর্খ নারী, এই বীর্য ধারণ করে থাকো। তিনি তাকে ধারণ করলেন এবং যে পুত্রের তিনি জন্ম দিলেন তার নাম হল ভরদ্বাজ।

কলসি হতে দ্রোণাচার্যের জন্ম

এই ভরদ্বাজই একবার গঙ্গাস্নান করতে গিয়েছিলেন। সেখানে অপ্সরা ঘৃতাচী স্নান করে কাপড় বদল করছিলেন। ভরদ্বাজ তাকে দেখলেন। ঘৃতাচীর শরীরের এক অংশ হতে কাপড় সরে গিয়েছিল। তা দেখে ভরদ্বাজের বীর্য স্খলিত হল। এই বীর্য তিনি এক দ্রোণে (কলসিতে) রাখলেন। সেই দ্রোণ থেকে এক বালক উৎপন্ন হল। দ্রোণ থেকে জন্ম হওয়ায় তার নাম হল ‘ দ্রোণ’ ঃ

গঙ্গাদ্বারং প্রতি মহান্ বভূব ভগবানৃষিঃ।

ভরদ্বাজ ইতি খ্যাতঃ …

দদর্শাপ্সরসং সাক্ষাদ্ ঘৃতাচীমাপ্লুতামৃষিঃ,

রূপযৌবনসম্পন্নাং মদদৃপ্তাং মদালসাম্।

তস্যাঃ পুনর্নদীতীরে বসনং পর্যবর্তত,

ব্যপকৃষ্টাংবরাং দৃষ্ট্বাং তামৃষিশ্চকমে ততঃ।

তত্র সংসক্তমনসো ভরদ্বাজস্য ধীমতঃ,

ততোহস্য রেতশ্চস্কন্দ তদৃষির্দ্রোণ আদধে।

ততঃ সমভবদ্ দ্রোণঃ কলশে তস্য ধীমতঃ।

-মহাভারত, আদিপর্ব, ১২৯/৩৩-৩৮

তীর হতে কৃপাচার্যের জন্ম

মহাভারতে বলা আছে, শরদ্বান ঋষি জানপদী নামক অপ্সরাকে যখন বনে একবসনা দেখতে পেয়েছিলেন, তখন তার বীর্যপাত হয়েছিল। সেই বীর্য তীরের উপর পতিত হয়েছিল। তা থেকে কৃপ নামে এক বালকের জন্ম হয়েছিল, যে পরবর্তীকালে পাণ্ডবদের ধনুর্বেদ এর আচার্য হয়েছিলঃ

ততো জানপদীং নাম দেবকন্যাং সুরেশ্বরঃ প্রাহিণোত্। ৬

… তামেকবসনাং দৃষ্ট্বা গৌতমোহপ্সরসং বনে,

… প্রোত্ফুল্লনয়নোহভবত্। ৮

ধনুশ্চ হি শারাস্তস্য করাভ্যামপতন্ ভুবি,

বেপথুশ্চাপি তাং দৃষ্ট্বা শরীরে সমজায়ত। ৯

তেন সুস্রাব রেতোহস্য… ১১

… রেতস্তত্ তস্য শারস্তম্বে পপাত চ। ১৩

তস্যাথ মিথুনং জজ্ঞে গৌতমস্য শরদ্বনঃ,

মৃগয়া চরতো রাজ্ঞঃ শংতনোস্তু… ১৪

স রাজ্ঞে দর্শয়ামাস মিথুনং সশরং ধনুঃ । ১৬

কৃপয়া যন্ময়া বালাবিমো সংবর্ধিতাবিতি। ১৯

তস্মাত্ তয়োর্নাম চক্রে তদেব স মহীপতিঃ। ২০

-আদি পর্ব, অধ্যায় ১২৯

অর্থাৎ, তখন ইন্দ্র জানপদী নামক এক অপ্সরাকে পাঠালেন। তাকে বনে একবসনা দেখে শরদ্বান এর চোখ বিস্ফারিত হয়ে গিয়েছিল। তার হাত হতে ধনুর্বাণ পতিত হয়েছিল। শরীর কাঁপতে শুরু করেছিল। তার বীর্য স্খলিত হয়েছিল। সেই বীর্য ধনুর্বাণের উপর পতিত হয়েছিল। তা থেকে দুই শিশুর (একটি ছেলে ও একটি মেয়ের ) জন্ম হয়েছিল। শিকারের জন্য আসা রাজা শান্তনুকে এক লোক সেই শিশুগুলোকে দেখিয়েছিলেন। শান্তনু তাদের নিজের ঘরে নিয়ে এলেন। তিনি যেহেতু তাদের উপর কৃপা করে তাদের পালন করলেন, তাই তাদের নামও সেভাবেই রাখলেন, কৃপ ও কৃপী।

পুরুষের গর্ভ হতে পুত্রের জন্ম

শ্রীমদ্ভাগবতপুরাণে আছে, রাজা যুবনাশ্ব একবার ইন্দ্রযজ্ঞ করেছিলেন। তিনি রাতে পিপাসার্ত হয়ে যজ্ঞশালায় পৌঁছেছিলেন। সেখানে পুরোহিতদের ঘুমিয়ে থাকতে দেখে তিনি এক পাত্র থেকে জল পান করলেন। সেই জলকে পুত্র উৎপন্ন করার মন্ত্র দ্বারা অভিমন্ত্রিত করা হয়েছিল। সুতরাং, কিছু সময় পরে রাজার গর্ভের ডান অংশ ভেদ করে এক বালক উৎপন্ন হলেন। এই বালকই হলেন পরবর্তীকালের চক্রবর্তী রাজা মান্ধাতাঃ

ইষ্টিং স্ম বর্তয়াংচক্রুরৈন্দ্রীং সুসমাহিতাঃ। ২৬

রাজা তদ্ যজ্ঞসদনং প্রবিষ্টো নিশি তর্ষিতঃ,

দৃষ্ট্বা শয়ানান্ বিপ্রাংস্তান্ পপৌ মন্ত্রজলং স্বয়ম্। ২৭

ততঃ কাল উপাবৃত্তে কুক্ষিং নির্ভিদ্য দক্ষিণম্,

যুবনাশ্বস্য তনয়শ্চক্রবর্তী জজান হ।৩০

মান্ধাতা… ৩১

-শ্রীমদ্ভাগবতপুরাণ , নবম স্কন্ধ, অধ্যায় ৬

জঙ্ঘা এবং বাহু হতে শিশুর জন্ম

এই পুরাণের অন্যত্র আছে, রাজা বেন এর মৃত্যুর পর ঋষিরা তার জঙ্ঘার মন্থন করেছিলেন এবং তা থেকে নিষাদ নামে এক পুত্র উৎপন্ন হয়েছিলঃ

ঋষয়ো বিপন্নস্য মহীপতেঃ,

মমন্থরুরুং তরসা তত্রাসীদ্ বাহুকো নরঃ। ৪৩

কাককৃষ্ণোহতিহ্রস্বাংগো হ্রস্ববাহুর্মহাহনুঃ,

হ্রস্বপান্নিম্ননাসাগ্রো রক্তাক্ষস্তাম্রমূর্ধজঃ। ৪৪

স নিষাদস্ততোহভবত্। ৪৫

-শ্রীমদ্ভাগবতপুরাণ , স্কন্ধ ৪, অধ্যায় ১৪

অর্থাৎ, ঋষিরা মৃত রাজা বেন এর জঙ্ঘার অনেক দ্রুত মন্থন করলেন। সেখান থেকে এক পুরুষ বের হলেন। তার গায়ের রঙ ছিল কাকের মত কালো। তার অঙ্গ, বাহু, পা ছিল ছোটো, চোয়াল ছিল বিশাল, নাক ছিল অনুন্নত, চোখ ছিল লাল এবং চুল ছিল তামাটে। সে নিষাদ নামে পরিচিত হল।

আবার সেই মৃত রাজার বাহুকে ঘষা হল। তা থেকে পুনরায় এক ছেলে এবং এক মেয়ের জন্ম হলঃ

অথ তস্য পুনর্বিপ্রৈরপুত্রস্য মহীপতেঃ

বাহুভ্যাং মথ্যমানাভ্যাং মিথুনং সমপদ্যত। ১

তদ্ দৃষ্ট্বাং মিথুনং জাতমৃষয়ো ব্রহ্মবাদিনঃ,

ঊচুঃ । ২

অয়ং তু … পৃথুর্নাম মহারাজো ভবিষ্যতি পৃথুশ্রবাঃ । ৪

ইয়ং চ সুদতী দেবী … অর্চির্নাম বরারোহা … ৫

-শ্রীমদ্ভাগবতপুরাণ, স্কন্দ ৪, অধ্যায় ১৫

অর্থাৎ, আবার সেই পুত্রহীন রাজার শবের বাহুকে বিপ্ররা মন্থন করলেন। তা থেকে এক পুত্র ও এক কন্যার জন্ম হল। তাদের দেখে ব্রহ্মবেত্তা ঋষিরা বললেন, এই ছেলে পৃথু নামে বিখ্যাত হবে এবং মহারাজা হবে এবং এই মেয়ের নাম হবে অর্চি।

গাভী থেকে মানব শিশুর জন্ম

পদ্মপুরাণে আছে, একবার আত্মদেব নামক এক নিঃসন্তান ব্রাহ্মণকে এক মহাত্মা এমন ফল দিয়েছিলেন, যা খেলে গর্ভবতী হওয়া যেত। ব্রাহ্মণটি সেই ফলটিকে একটি গরুকে খাইয়ে দিয়েছিলেন।

ত্রিমাসে নির্গতে চাথ সা ধেনুঃ সুষুবেহর্থকম্,

সর্বাঙ্গসুন্দরং দিব্যং নির্মলং কনকপ্রথম্।

ভাগ্যোদয়োহধুনা জাত আত্মদেবস্য পশ্যত,

ধেন্বা বালঃ প্রসূতস্তু দেবরূপিতী কৌতুকম্।

গোকর্ণং তং সুতং দৃষ্ট্বা গোকর্ণং নাম চাকরোত্। -পদ্মপুরাণ, উত্তরখন্ড ৪/৬২-৬৫

অর্থাৎ, তিন মাস পরে গাভীটি একটি সুন্দর, দিব্য এবং স্বর্ণোজ্জ্বল বালকের জন্ম দিল। লোকেরা কৌতুকবশত বলতে লাগলো, দেখো- আজ আত্মদেবের ভাগ্য খুলেছে। সেই শিশুর কান গরুর কানের সমান ছিল, তাই আত্মদেব বালকের নাম রাখলেন, ‘গোকর্ণ’।

মাংসপিণ্ড হতে ১০১ শিশুর জন্ম

মহাভারতের আদিপর্বে আছে, ধৃতরাষ্ট্রের পত্নী গান্ধারী তখনও দুই বছর অবধি গর্ভবতী , অন্যদিকে কুন্তী এক সুন্দর পুত্রের জন্ম দিয়েছেন। এতে ক্রুদ্ধ হয়ে গান্ধারী একদিন তার গর্ভতে ভীষণ আঘাত করেছিলেন, যার ফলে তার গর্ভপাত হয়েছিল। বের হওয়া মাংসপিণ্ডকে গান্ধারী যখন ফেলে দিতে চেয়েছিলেন, তখন ব্যাসদেব সেখানে উপস্থিত হয়ে বললেন, “ এর একশো টুকরো করে তাদের ঘৃতপূর্ণ কলসিতে শীঘ্রই রেখে দাও।“ গান্ধারী মাংসপিণ্ডটিকে আংগুলের পর্বের সমান একশ এক খণ্ড করে তাদের ঘৃতপূর্ণ কলসে রাখলেন। তিন মাস পর সেই কলসগুলো থেকে একশ পুত্র এবং একটি কন্যার জন্ম হয়েছিলঃ


সংবৎসরদ্বয়ং তু গান্ধারী গর্ভমাহিতম্। ৯

শ্রুত্বা কুন্তীসুতং জাতং … ১০

সোদরং ঘাতয়ামাস গান্ধারী দুঃখমূর্চ্ছিতা।

ততো যজ্ঞে মাংসপেশী লোহাষ্ঠীলেব সংহতা। ১২

… তামুত্স্রষ্টুং প্রচক্রমে,

অথ দ্বৈপায়নো জাত্বা ত্বরিতঃ সমুপাগমত্। ১৩

ঘৃতপূর্ণং কুন্ডশতং ক্ষিপ্রমেব বিধীয়তাম্। ১৮

সুগুপ্তেষু চ দেশেষু রক্ষা চৈব বিধীয়তাম্। ১৯

অঙ্গুষ্ঠপর্বমাত্রাণাং গর্ভণাং পৃথগেব তু। ২০

একাধিকশতং পূর্ণং যথাযোগং বিশাংপতে। ২১

ততস্তাংস্তেষু কুণ্ডেষু গর্ভানবদধে তদা। ২২

ততঃ পুত্রশতং পূর্ণং ধৃতরাষ্ট্রস্য পার্থিব। ৪০

মাসত্রয়েণ সংজজ্ঞে কন্যা চৈকা শতাধিকা। ৪১

-মহাভারত, আদিপর্ব, অধ্যায় ১১৪

আগুন থেকে দুই শিশুর জন্ম

মহাভারত অনুসারে, রাজা দ্রুপদ এর পুত্রেষ্টি যজ্ঞে রানীকে খাওয়ানোর জন্য এক বিশেষ প্রকারের পদার্থ তৈরি করা হয়েছিল। রানীকে যজ্ঞশালায় উপস্থিত হয়ে সেটা গ্রহণ করতে হত, কিন্তু ঋতুমতী হবার কারণে তিনি যজ্ঞশালায় উপস্থিত হয়ে তা গ্রহণ করতে পারেন নি। ফলত, যাজ নামক এক পুরোহিত সেই পদার্থটিকে অগ্নিতে নিক্ষেপ করেছিলেনঃ

এবমুক্ত্বা তু যাজেন হুতে হবিষি সংস্কৃতে,

উত্তস্থৌ পাবকাত্ তস্মাত্ কুমারো দেবসংনিভঃ।

কুমারী চাপি পাঞ্চালী বেদীমধ্যাত্ সমুত্থিতা,

সুভগা দর্শনীযাংগী… –মহাভারত, আদিপর্ব, ১৬৬/৩৯, ৪৪

অর্থাৎ, যাজ এমন বলার পর সেই পদার্থটিকে, হবন সামগ্রীকে জ্বলন্ত হবন কুণ্ডে নিক্ষেপ করলেন। তা থেকে দেবসম এক বালক বের হল এবং সুন্দরাঙ্গী দ্রৌপদী নামে এক বালিকা বের হল।

সেই বালকটির নাম হল ধৃষ্টদ্যুম্ন, যে মহাভারতের যুদ্ধে পাণ্ডবদের সেনাপতি ছিল।

মাছের পেট হতে মানবসন্তান

মহাভারতে উপরিচর নামে এক রাজার উল্লেখ পাওয়া যায়। এই রাজা একবার জঙ্গলে বীর্যপাত করেছিলেন। রাজা সেই বীর্যকে উঠিয়ে এক পত্রে রাখলেন এবং তা বাজ পাখির মাধ্যমে তার স্ত্রীর কাছে পাঠালেন, একে ধারণ করার জন্য। সেই পাখিটি যখন বীর্য নিয়ে যাচ্ছিল, তখন আরেক বাজ তাকে হামলা করেছিল। এর ফলে সেই বীর্য নদীতে পড়ে গিয়েছিল এবং মাছে পরিণত হওয়া এক অপ্সরা একে খেয়ে নিয়েছিল। দশ মাস পরে সেই মাছটিকে ধরা হয়েছিল। মৎস্যজীবী মাছটির পেটে এক বালক ও এক বালিকাকে পেয়েছিল। রাজা উপরিচর বালকটির নাম মৎস্য রেখেছিলেন এবং তাকে গ্রহণ করেছিলেন কিন্তু বালিকাটিকে মৎস্যজীবিকে সঁপে দিয়েছিলেন। পরে এই বালকাটি সত্যবতী নামে বিখ্যাত হয়েছিল এবং পরাশরের পুত্র ব্যাসদেবের মা হয়েছিল।

রাজোপরিচরেত্যেবং নাম তস্যাথ বিশ্রুতম্। ৩৪

তস্য রেতঃ প্রচস্কন্দ চরতো গহনে বনে। ৪৯

স্কন্নমাত্রং চ তদ্ রেতো বৃক্ষপত্রেণ ভূমিপঃ

প্রতিজগ্রাহ …৫০

শ্যেনং ততোহব্রবীত্।

মৎপ্রিয়ার্থমিদং সৌম্য শুক্রং মম গৃহং নয়। ৫৪

অভ্যদ্রবচ্চ তং সদ্যো দৃষ্ট্বৈবামিষশংকয়া। ৫৭

শ্যেনপাদপরিভ্রষ্টং তদ্ বীর্যমথ বাসবম্। ৫৯

জগ্রাহ তরসোপেত্য সাদ্রিকা মৎস্যরূপিণী,

কদাচিদপি মৎসীং তাং ববন্ধুর্মৎস্যজীবিতঃ। ৬০

মাসে চ দশমে প্রাপ্তে তদা ভরতসত্তম,

উজ্জাহ্রুরুদরাত্ তস্যাঃ স্ত্রীং পুমাংসং চ মানুষম্।৬১

তয়োঃ পুমাংসং জগ্রাহ রাজা পরিচরস্তদা,

স মৎস্যো নাম রাজাসীদ্ ধার্মিকঃ সত্যসংগরঃ। ৬৩

সা কন্যা দুহিতা তস্যা মৎস্যা … রাজা দত্তা দাশায়। ৬৭

দ্বৈপায়নী জজ্ঞে। সত্যবত্যাং পরাশরাত্। ৮৬

-মহাভারত, আদিপর্ব, অধ্যায় ৬৩

ক্ষীর খেয়ে গর্ভবতী

রাম এবং তার ভাইদের জন্ম প্রসঙ্গে বাল্মীকিরামায়ণে লেখা আছে, যখন রাজা দশরথের আয়ু ষাট হাজার বছর হয়েছিল, তখন তিনি এক যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেনঃ

ততো বৈ যজমানস্য পাবকাদতুলপ্রভবম্,

প্রাদুর্ভূতং মহদ্ ভূতং মহাবীর্যং মহাবলম্। ১১

দিব্যপায়সসংপূর্ণাং পাত্রীং পত্নীমিব প্রিয়াম্,

প্রগৃহ্য বিপুলাং দোর্ভ্যাং স্বয়ং মায়াময়ীমিব। ১৫

সমবেক্ষ্যাব্রবীদ্ বাক্যমিদং দশরথং নৃপম্। ১৬

ভার্যাণামনুরূপাণামশ্নীতেতি প্রযচ্ছে বৈ,

তাসু ত্বং লপ্স্যসে পুত্রান্ যদর্থং যজসে নৃপ। ২০

ততস্তু তাঃ প্রাশ্য তমুত্তমস্ত্রিয়ো মহীপতেরূত্তমপায়সং পৃথক্,

হুতাশনাদিত্যসমানতেজসোহচিরেণ গর্ভান প্রতিপেদিরে তদা। ৩০

-বালকাণ্ড, অধ্যায় ১৬

অর্থাৎ, সেই যজ্ঞের অগ্নিকুণ্ড থেকে এক পুরুষ বের হলেন। তার হাতে ক্ষীরপূর্ণ এক পাত্র ছিল। তিনি সেই পাত্র দশরথকে দিয়ে বললেন, “ রাজন, এই ক্ষীরকে তুমি নিজ পত্নীদের খাওয়ার জন্য দাও। এর ফলে তোমার পুত্রপ্রাপ্তি হবে।“ রানীরা ক্ষীর খেয়ে গর্ভবতী হলেন। যথাসময়ে তারা চার পুত্রের জন্ম দিলেন।

ক্ষেতে জন্মানো মানবশিশু

সীতার বিষয়ে রামায়ণে বলা আছে, যখন রাজা জনক ক্ষেতে লাঙ্গল চালাচ্ছিলেন তখন তিনি সীতাকে সেই ক্ষেতে পেয়েছিলেন। জনক যেহেতু তাকে ক্ষেত হতে পেয়েছিলেন, তাই তাকে অযোনিজ বলা হলঃ

অথ মে কৃষতঃ ক্ষেত্রং লাংগলাদুত্থিতা ততঃ,

ক্ষেত্রং শোধয়তা লব্ধা সীতেতি বিশ্রুতা। ১৩

ভূতলাদুত্থিতা সা তু ব্যবর্ধত মমাত্মজা। ১৪

বীর্যশুল্কেতি মে কন্যা স্থাপিতেযমযোনিজা। ১৫

-বালকাণ্ড, ৬৬ অধ্যায়

অর্থাৎ, জনকের কথন অনুসারে, “ যখন আমি লাঙ্গল চালাচ্ছিলাম , তখন ও লাঙ্গলের ফলার দ্বারা উপরে এসেছিল। ওর নাম সীতা। ও পৃথিবী হতে জন্ম নেওয়া আমার কন্যা । ও কোনো নারীর গর্ভ হতে উৎপন্ন হয়নি”

এই ধরণের কাহিনীগুলো প্রধানত দুই কারণে বিজ্ঞানের মোড়কে প্রচার করা হয়ে থাকে যথা- ১) অজ্ঞানতা , ২) অসঙ্গত প্রলাপ বকার স্বভাব

‘অজ্ঞানতা’বশত প্রচারঃ

ক) অজ্ঞানতার ফলে অনেকে বলে থাকে যে, টেস্টটিউবে বাচ্চা জন্মানোর কথা আদিম ধর্মগ্রন্থে পাওয়া যায়। কিন্তু বাস্তবে এমনটি দেখা যায় না। আমরা পূর্বেই এই কাহিনীগুলোর পর্যালোচনায় তা দেখেছি । যেসব জায়গায় কলসি থেকে শিশু জন্মানোর ঘটনাকে টেস্টটিউব বেবির উল্লেখ বলে কিছুলোক প্রচার করছে, তারা অজ্ঞানতার শিকার।

খ) কিছু লোক পেট এবং গর্ভাশয় এর পার্থক্য না বুঝে এসব কাহিনী প্রচার করে থাকে। শিশুর বিকাশ গর্ভাশয়ে হয়, পেটে হয় না। এপ্রকার অজ্ঞানতার ফলে মুখ দিয়ে খেয়ে ফেলা বীর্য থেকে পেটে শিশু বিকশিত হয় এবং এই ধরণের কাহিনীগুলোকে টেস্টটিউব বেবী বলে প্রচার করা হয়। যারা এসব প্রচার করে থাকে, তারা মূলত অজ্ঞানতার শিকার।

গ) কিছু কাহিনী বীর্যের শুক্রাণুর প্রকৃতি না জানার ফলে প্রচার করা হয়ে থাকে। এইসব কাহিনীতে বীর্যকে এমন পদার্থ হিসেবে দেখানো হয়, যার উপর অন্য জীবাণুর, তাপমাত্রার তারতম্য প্রভৃতি কোনো প্রভাব নেই এবং এর কার্যক্ষমতা যেন সবসময় একই রকম থাকে। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার হল, একটি নির্ধারিত তাপমাত্রার কম বা বেশি হলে বীর্যের শুক্রাণু নষ্ট হয়ে যায় এবং এদের উৎপাদন ক্ষমতা শেষ হয়ে যায়।

ঘ) কিছু কাহিনী ভ্রুণের প্রকৃতি না জানার ফলে প্রচার করা হয়ে থাকে। ভ্রুণকে তরল নাইট্রোজেনে রেখে (নাইট্রোজেন ২৭০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডে তরল রূপ ধারণ করে) সুরক্ষিত রাখা যেতে পারে। দুবছর অবধি ভ্রুণ এতে থাকতে পারে কিন্তু যেসব কাহিনীতে ভ্রুণকে একশো বা ষাট হাজার টুকরো করে ঘৃতকুম্ভে রাখার কথা বলা হয়েছে এবং কলসি থেকে তিন মাসের মধ্যে শিশু জন্ম হওয়ার কথা বলা হয়েছে, সেসব কাহিনীকে প্রচার করা লোকজনের ভ্রুণ সম্বন্ধে জ্ঞানের অভাব রয়েছে। তাই তারা এই ধরণের কাহিনী প্রচার করছে।

শেষের কাহিনীগুলো, যেগুলোতে আগুন হতে শিশুর জন্ম হয়, গরু বা ঘোড়া মানব শিশুর জন্ম দেয়, নাক, জঙ্ঘা এবং বাহু হতে শিশুর জন্ম হয় , তাদের টেস্টটিউব বেবীর প্রমাণ হিসেবে যারা প্রচার করে থাকে, তারা কেবল তাদের অজ্ঞানতা ঢাক-ঢোল পিটিয়ে সবাইকে জানিয়ে দেয় না, বরং এটাও বুঝিয়ে দেয় তাদের কথাবার্তা পাগলের প্রলাপ ছাড়া অন্য কিছু নয়।

সংক্ষেপে এটা বলা যেতে পারে, ধর্মগ্রন্থের এসব এবং এর মতো কাহিনীগুলোর বিজ্ঞানের চাইতে অজ্ঞানের সাথে বেশি সম্পর্ক আছে। এভাবে গোঁজামিলবাজের মত গোঁজামিল দিয়ে না হিন্দু ধর্মগ্রন্থের মহিমা তো বাড়ানো যায়, না হিন্দু সমাজের কোনো কল্যাণ করা সম্ভব। তবে, এভাবে বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের পথে অবশ্যই বাঁধা দেওয়া যায়।

এমতাবস্থায় প্রয়োজন হল, বৈজ্ঞানিক মানসিকতাকে ধারণ করার এবং এই ধরণের নিচ এবং পলায়নবাদী মানসিকতাকে ত্যাগ করার। এর মধ্যেই হিন্দু সমাজ এবং সমগ্র দেশের কল্যাণ নিহিত আছে।

লেখকঃ ড. সুরেন্দ্র কুমার শর্মা অজ্ঞাত

1 comment

Recent Posts

See All

1 Comment


babu
Mar 26, 2020

হিন্দুরা সব অপদার্থ, তা না হলে এইসব মানে, আজ আপ্নি আমাদের প্রমাণ করে দিলেন ধন্যবাদ

Like
Enjoy
Free
E-Books
on
Just Another Bangladeshi
By
Famous Writers, Scientists, and Philosophers 
click here.gif
lgbt-bangladesh.png
click here.gif

Click Here to Get  E-Books

bottom of page