১৮ কেন?
জ্যোতিরবেদে আছে নম্বর হচ্ছে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা দিয়ে বৈদিক যুগে বিভিন্ন রকম কোড করত। অনেকে তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য সংখ্যাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ দিয়ে থাকে। যেমন ফুটবলে জার্সি নম্বর ১০ মেরাডোনা, মেসি, ওর্তেগা এরা ব্যবহার করে থাকে, আবার ক্রিকেটে শচীনের জার্সি নম্বর ১০।
আজকে আমরা ১৮ নম্বর নিয়ে আলোচনা করব।
এই মূহুর্তে বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি। তার জার্সি নম্বর ১৮। কোহিলিকে জিজ্ঞাসা করলে সে বলে আমার বাবা আমাকে অনুপ্রেরণা জাগিয়েছে এই ক্রিকেট শিখানোর জন্য। উনি হচ্ছে আমার আদর্শ ও অনুপ্রেরণা। আমার ১৮ বছর বয়সে ১৮ তারিখ আমার বাবা মারা গিয়েছে তাই আমার জার্সি নম্বর ১৮।
হিব্রু ভাষায় জীবনের অর্থ বুঝাতে ১৮ সংখ্যাটি বুঝাত। ইহুদি তারা বিশ্বাস করে এই ১৮ হচ্ছে জীবনের জন্য আশির্বাদের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে।
চীনের ঐতিহ্য অনুযায়ী ১৮ হচ্ছে খুবই ঐশ্বর্যময়ী নম্বর। তাই তাদের দেশে ১৮ নম্বর বাড়িগুলো খুবই ব্যয়বহুল হয়।
চীনে গ্রাম্যশিল্পে শালোসিন মন্দিরে ১৮ ব্রোঞ্জ দলের সন্ন্যাসী থাকে। যারা নতুন আসবে তাদের শিক্ষা তখনই সম্পূর্ণ হবে যখন এই ১৮ সন্নাসীকে হারাতে পারবে।
চাইনীজ পুরাণে তাদের ১৮ নরকের কথা বলা আছে।
১৯৯০ সালে মেগাডেথ বের করেন হ্যানগার ১৮, যা Rest of Piece নামে পরিচিত।
Eighteen vision কে সংক্ষেপে 18V বলে, এটা একটা ধাতু কোম্পানী ক্যালিফোর্নিয়া
Eighteen Eighteen একটি সাউথ আফ্রিকান র্যাপ আর্টিস্ট
"Im Eighteen" এলিস কপারেস প্রথম টপ টেনে হিট সিঙ্গেল। ১৯৭১ সালের একটি এলব্যামে, নাম Love it to Death
নিও-নাজি সার্কেল একটি কোড আলডফ হিটলার, এই নম্বরটি নামের প্রথম অক্ষর গুলো দিয়ে দেখেন A - 1 আর H - 8 মানে ১৮।
বাইবেলে দেবদূত সংখ্যা হচ্ছে ১৮
১৮ বছর ভোট দান করতে পারে, মেয়েদের ১৮ বছরে বিবাহ করা যায়।
## এবার আসি আমাদের বৈদিক শাস্ত্রে ১৮ নম্বরের গুরুত্ব
আমাদের বৈদিক ১৮ নম্বরকে এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি শাস্ত্রের মূল কথা হলো নিম্ন বৃত্তির উপরে উচ্চ বৃত্তি, অধর্মের জায়গায় ধর্ম আর অপবিত্র উপর পবিত্রতার বিজয়।
ব্যাসদেব দ্বারা এই মহাভারত বা ভারতম্ এর প্রকৃত নাম হচ্ছে জয় (jaya)। যা মহাভারতের প্রথম লাইনে দেওয়া হয়েছে। কাটাপায়াদি সাংখ্য শাস্ত্র অনুযায়ী jaya মানে ১৮। এখানে ja হচ্ছে ১ আর ya হচ্ছে ৮. যা দিয়ে জয় বা বিজয় বুঝানো হচ্ছে। নিম্নে তা দেওয়া হলো
कादिनव टादिनव पादिपञ्चक यद्यश्टक क्ष:शुन्यम् Meaning:
Kaadi Nava Starting from ka, the sequence of 9 letters represent 1,2,..9. Similarly Taadi Nava , starting from ta, Paadi panchaka (1-5), starting from pa, Yadyashtaka(1-8) starting from ya. And ksha represents 0. In detail:
ka(क)-1, kha(ख)-2, ga(ग)-3, gha(घ)-4, gna(ङ)-5, cha(च)-6, cha(छ)-7, ja(ज)-8, jha(झ)-9. ta(ट)-1, tha(ठ)-2, da(ड)-3, dha(ढ)-4, ~na(ण)-5, Ta(त)-6, Tha(थ)-7, Da(द)-8, Dha(ध)-9. pa(प)-1, pha(फ)-2, ba(ब)-3, bha(भ)-4, ma(म)-5. ya(य)-1, ra(र)-2, la(ल)-3, va(व)-4, Sa(श)-5, sha(ष)-6, sa (स)-7, ha(ह)-8. kshah(क्ष)-0.
উপরোক্ত কাটাপায়াদি সিস্টেমে দেখা যাচ্ছে জয়ের শব্দ ১৮ বুঝানো হয়েছে। তাই এই ১৮ নম্বরটি একত্রে ভাবে বিজয় সুনিশ্চিত করে। তাই ১৮ পুরাণ ও মহাভারতে এই ১৮ সংখ্যা ব্যবহার করা হয়েছে।
বৈদিক যুগে প্রথমে বেদ একটিই ছিল যা ব্রহ্মা দ্বারা প্রেরিত সুরক্ষিত হয়েছিল আর সেই বেদ ১৮ অধ্যায় ছিল। পরে ব্যাসদেব নিজে বেদকে ৪টি ভাগে ভাগ করে।
মহাকাব্য মহাভারতে ১৮ টি পর্ব আছে। কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধ ১৮ দিন হয়। ১৮ অক্ষায়নী সৈন্য ছিল। প্রতি অক্ষায়নীতে ২১৮৭০০ সৈন্য ছিল। ১ অক্ষায়নী বলতে - ২১,৮৭০ হাতি + ২১,৮৭০ রথ + ৬৫,৬১০ ঘোড়া + ১,০৯,৩৫০ জন সৈন্য = ২,১৮,৭০০ জন। আর এই ২,১৮,৭০০ সংখ্যাটি একত্রে যোগ করলে আসে ১৮।
আর বলা হয়ে থাকে যুদ্ধের শেষে ১৮ জন শুধু বেচে ছিল।
গীতাতে ১৮ জন মহারথীর কথা বলা আছে।
ভগবদগীতা ১৮ অধ্যায় বিভক্ত।
এখানে ৭০০ শ্লোকের মধ্যে ১৮টি গুনের কথা বলা হয়েছে।
আমাদের দেহ ১৮ বস্তু দ্বারা গঠিত যেমন - ৫ জ্ঞানন্দ্রিয় (চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, জিহবা ও ত্বক), ৫ কর্মেন্দ্রিয় (মুখ, হাত, পা, উপস্থ ও পায়ু), ৪টি মন (মানস, বুদ্ধি, চিত্ত ও অহংকার), আর তিনটি গুন - (স্বত্ত্ব, তমো ও রজো) আর একটি আত্মা বা জীব।
১৮ টি পুরাণ, ১৮টি উপপুরাণ, ১৮ ধর্মশাস্ত্র(স্মৃতি), আর ১৮ জন পন্ডিত এই স্মৃতি শাস্ত্রগুলো লিখেছে।
বলা হয়ে থাকে পরশুরাম যিনি ভগবানের অবতার তিনি ১৮ টি মন্দির ধর্মের জন্য নির্মান করেন। কেরালায় শাস্থা নামে পরিচিত। শাস্থা হলো হরিহর এর পুত্র যাকে আয়াপ্পাও বলা হয়। তিনি শবরীমালা মন্দির নির্মান করেন যা যেখানে ১৮ পদ ছিল এবং তীর্থযাত্রীদের এখানে এসে বিগ্রহ দর্শন করতে হয়। এই ১৮টি পদ শবরীমালার ১৮ টি পর্বতকে নির্দেশ করে। প্রত্যেক পদে স্ব স্ব পর্বতের অধিকারী বিগ্রহ স্থাপন করা হয় তাই ১৮টি পদ দ্বারা সব পর্বতের বিগ্রহ দর্শনের ফল প্রাপ্তি হয়।
১৮টি পদ আরো ব্যাখ্যা করে -- (১-৫) - পঞ্চ ইন্দ্রিয় (৬-১৩) - ৮টি অষ্টবেগ - কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য্য, অহংকার, ছলনা (১৪-১৬) তিন গুন ১৭ নম্বর অবিদ্যা আর ১৮ নম্বর বিদ্যা
জ্যাতিষ শাস্ত্রানুযায়ী ১৮ এই সংখ্যাটি যোগ করলে হয় ৯ যা খুব শক্তিশালী এবং ম্যাজিক্যাল এবং ধর্মে --- ৯ গ্রহ ২৭ তারা ১০৮ নাম ১০০৮ সহস্রনাম ১৮ হাজার শ্লোকের ভাগবত যুগের বয়স - সত্য যুগ - ১৭,২৮,০০০ বছর একতে যোগ করলে হয় ১৮ ত্রেতা যুগ - ১২,৯৬,০০৯ বছর যোগ করলে হয় ১৮ দ্বাপর যুগ - ৮,৬৪,০০০ বছর যোগ করলে হয় ১৮ কলি যুগ - ৪,৩২,০০০ বছর হয় ৯
৪ বেদ, ৬ সূত্র, ৫ ইন্দ্রিয়, ৩ দেবতা মিলে হয় ১৮। ১৮ মন্ত্র ঈশোপনিষদ ১৮ আদিত্য হৃদয় শ্লোক যা ভগবান রামকে দিলেন। ১৮ পূজারী যজ্ঞ পালন করবে। ১৮ দিন যুদ্ধ হয় রাম রাবনের।
এবার আসি জগন্নাথ পুরীতে ১৮ নালা বিষয়ে। কথিত আছে ইন্দ্রদ্যুম্ন মহারাজ এই প্রাচীন সেতুটি নির্মান করেন। উনি যখন এই সেতু নির্মান করতে যান বার বার খালি ব্যর্থ হচ্ছে, তখন প্রভুর আদেশে তার ১৮ সন্তানকে শিরচ্ছেদ করে যার রক্তে এখানে ১৮ নালা হয়। আর তখনই তিনি সেতুর কাজ সম্পূর্ণ করতে পারেন। চৈতন্য মহাপ্রভুর অনেক লীলা আছে এই ১৮ নালায়।
জ্যোতির্বিদ্যা অনুযায়ী এই ১৮ নম্বর খুব আলাদা ও রহস্যময়। যা ১ আর ৮ দ্বারা গঠিত। ১ হলো ভগবানের প্রতীক অর্থাৎ ভগবান এক ও অদ্বিতীয়। আর ৮ হলো একমাত্র পূর্ণ সংখ্যা। ৮ প্রদর্শন করে অসীম, এই ৮ কে ৯০ ডিগ্রি ঘূর্ণন করা হয় তাহলে হবে ইনফেনেটি মানে অসীম। ভগবান হচ্ছেন অসীম। তাই ভগবানের সাথে এই ১৮ খুবই নিবিড় সম্পর্ক আছে।
জর্জিয়ান ক্যালেন্ডার মতে, কলিযুগের যুগ অবতার শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর আবির্ভাব হয় ১৮ ই ফেব্রুয়ারিতে।
Comments